আবু সাইম, ঢাকা

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।
আবু সাইম, ঢাকা

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে...
১৭ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে...
১৭ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে...
১৭ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে...
১৭ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫