Ajker Patrika

বন্যা পরিস্থিতি: দুই কূল ভাঙছে যমুনার, সিলেটে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ১০: ০৪
Thumbnail image

তিস্তার চোখরাঙানি কিছুটা কমলেও এবার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যমুনা নদী। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে পাড় ভাঙছে এই নদীর। গাইবান্ধায় কমেছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি, তবে বেড়েছে ঘাঘট ও করতোয়ার পানি। কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এখানে পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটার পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সিলেটের বিশ্বনাথের বাইশঘর (উত্তরপাড়া) গ্রামে গতকাল দুপুরে ওয়াহিদ মিয়া নামে সাড়ে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বানের স্রোতে ভেসে ও পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।

কুড়িগ্রামে ‘সাময়িক’ উন্নতি
কুড়িগ্রামে গত দুই দিন বৃষ্টি হয়নি। দিন ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পরিমাণও কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি কমেছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তার পানিও কমবে। তবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এতে পানি আবার বাড়তে পারে।

এদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি ও ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমেছে। এতে প্লাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি এবং গাইবান্ধা শহরের পাশে ঘাঘট নদের পানি বাড়ছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে করতোয়া ও ঘাঘটের পানি বাড়ছে। তবে কমছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি।

দুই কূলই ভাঙছে যমুনার
উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আরও বেড়েছে। এতে নতুন নতুন আরও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলে পাট ও তিলের মাঠ। যমুনায় ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। এদিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরেও যমুনার পানি বাড়ছে, তীব্র হচ্ছে ভাঙন। 

সিলেট-সুনামগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার হার বেশি। তবে ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে স্থানীয়দের। পাশাপাশি পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতির দিকে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুত মানুষের দুর্ভোগ কমবে।’

গতকাল বিকেলে কথা হয় সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফানি লামছে (পানি নেমে গেছে)। ওখন তো যন্ত্রণা (দুর্ভোগ) বাড়ছে। চাইরো বায়দি (চারদিকে) খালি দুর্গন্ধ। বাসাবাড়িত তাখা (থাকা) যার (যায়) না। খেউ ইতা (কেউ এসব) লইয়া মাতেও (কথা বলে) না। এমনেউ (এমনিতেই) ফানি লাইগ্গা শরিলো খাউজানি (শরীরে চুলকানি) ওইগিছে। গন্ধে যে কিতা ওয় আল্লায় বালা জানইন।’ তিনি জানান, ঈদের দিন সকালে তাঁর বাসায় পানি ওঠে। তখন থেকে গ্যাস নেই। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে তাঁদের।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পানি নেমে যাওয়ার পরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ থেকে মানুষজন নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য আমরাও প্রস্তুতি নিয়েছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ কাজে নেমে পড়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর কথা বলা হয়েছে।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট এবং কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বিশ্বনাথ (সিলেট), জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ), কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত