Ajker Patrika

আলোচনা আর তর্ক এক নয়

নাফিসা চৌধুরী
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩৩
আলোচনা আর তর্ক এক নয়

‘হাসান শোনো, আমি তখন বলতে চাচ্ছিলাম তোমার-আমার পরিবারের মানুষের সঙ্গে কিছু ভুল-বোঝাবুঝির কথা, তুমি বারবার রেগে যাও কেন? আমাদের বিয়ের আজ চার বছর হলো। আমি কিছুই বলতে পারি না তোমাকে, বিশেষ করে কোনো সমস্যার কথা। পরশু আম্মার সঙ্গে আমার তেমন কিছুই হয়নি। শুধু বলেছিলাম, চাকরিটা আমার শুধু প্রয়োজন না, ভালোবাসাও। কিন্তু মা সোজাসাপটা বলে দিলেন, আমি যেন চাকরিটা ছেড়ে দিই। বাসায় থেকে তিনিও এত বছর সংসার করেছেন, এতে তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি, আমি এই বাড়ির বড় বউ, তাই আমাকে শুধু সংসারকেই প্রাধান্য দিতে হবে, মানে গৃহিণী হয়ে থাকতে হবে। এটাই বিষয় ছিল। আর কিছু না। আমি আম্মাকে শুধু বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে আমি কাজটা করতে চাই মন থেকেই। আমি তর্ক করছিলাম না।’

এ কথাগুলো একনিশ্বাসে হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠিয়ে দিল ছন্দা। আসলে ও সামনাসামনি এই কথাগুলো গুছিয়ে কখনো বলতে পারেনি। হাসান খুব মেজাজি মানুষ। সে দুই লাইন শুনেই রেগে যায়। আর উত্তর দিলে বা কিছু বললেই শুধু বলে ‘তর্ক করো কেন এত? তোমার এই তর্ক করা বন্ধ করো।’

ছন্দা চুপ থেকে থেকে এই চার বছর দেখেছে। চুপ থাকলে ভুল-বোঝাবুঝি শেষ হয় না; বরং এটা অনেকটা প্যারাসিটামলের মতো, কিছু সময়ের জন্য ব্যথার উপশম হলেও আবার শুরু হয় হঠাৎ হঠাৎ। তেমনি এই কথাগুলো আবার শুরু হয় নতুন কোনো দিন বা পরিস্থিতিতে।

ছন্দার চাকরি থাকাতে হাসানের দুই বছর চাকরিহীন সময়ে সংসারে অভাব হয়নি। ছন্দা তাঁর সবটুকু দিয়ে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টাই করে গেছে আর অনেকাংশে সফলও হয়েছে। কারণ, সে চুপচাপ, কথা কম বলে, সবার কথা হাসিমুখে মেনে নেয়।

মেসেজ পেয়ে হাসান উত্তরে বলেছে, ‘তাহলে মা যা বলেছেন করো। নইলে তোমার যা খুশি তা করো। আর এত তর্ক করে তোমার মন ভরে না? এখন মেসেজে বলা শুরু করেছ?’

এই উত্তর পেয়ে ছন্দা আর কোনো পাল্টা উত্তর দেয় না। মনের না-বলা কথাগুলো মনেই রেখে দেয়।

ছন্দা আবার তাঁর পূর্ব পন্থা অবলম্বন করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেন। ছন্দা আর কথা বাড়ায় না। কথায় নাকি কেবল কথা বাড়ে। আর এটা তার আশপাশের এই মানুষগুলোর ক্ষেত্রে সত্য। কারণ, তারা এসব শুনতে চায় না, বুঝতে চায় না। অহেতুক কথা বাড়িয়ে কী লাভ!

ছন্দা একা নন, এমন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া মানুষের সংখ্যাটা বেজায় বড়। তারা বড়দের কথার জবাব দিলে শুনতে হয়, ‘মুখে মুখে কথা বলা ভালো না।’ তাদের গায়ে ‘বেয়াদব’ তকমা লেগে যেতেও সময় লাগে না।

কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক পক্ষের উপদেশই থাকে। কিন্তু যদি একটু সময় নিয়ে সবাই সবার কথাগুলো শুনে বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে এতসব ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো সম্ভব। যেকোনো সম্পর্ককে সুন্দর করে যত্ন করতে চাইলে আলোচনা করার বিকল্প অন্য কোনো কিছু হতে পারে না বলেই মনে হয়।

অথচ কত তুচ্ছ কারণে কত সুন্দর সম্পর্কের অবসান হয়ে যায়, আলোচনা করতে না পারায়। দাম্পত্যজীবনে কলহ সৃষ্টি হয়, বিচ্ছেদ হয়, বাবা-মা ছেলেমেয়েদের ভুল বুঝে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, শুধু আলোচনা না করার কারণে।

আমরা বলতে পছন্দ করি, কিন্তু শুনতে পারাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আলোচনা আর তর্ক এক নয়। এটা আমরা সবাই যত দ্রুত বুঝতে পারব, তত যত্ন করতে পারব আশপাশের কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে। সেই সম্পর্কগুলোকে পরিণত করতে পারব সুসম্পর্কে।

নাফিসা চৌধুরী: সংস্কৃতিকর্মী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...