Ajker Patrika

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: স্বার্থে সতর্ক ভারত-চীন

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১০: ০২
জাতীয় সংসদ নির্বাচন: স্বার্থে সতর্ক ভারত-চীন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের ব্যস্ততা আছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ঢাকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এই অঞ্চলের প্রভাবশালী দুই দেশ ভারত ও চীনের। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সরকারও। সবাই নজর রাখছে নিজেদের স্বার্থের দিকে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলো, ভারত ও চীনই নয়, এখানকার নির্বাচনী পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন ঢাকায় শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলোর কূটনীতিকেরাও। তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং অন্য দুই বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের ওপরের দিকের নেতাদের সঙ্গে। নির্বাচন সামনে রেখে তাঁরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ঘটনাপ্রবাহের খোঁজখবর নেন বিভিন্ন কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে।

ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এখানকার নির্বাচন নিয়ে যে অবস্থানই নিচ্ছে, তা তারা নিজেদের স্বার্থেই করছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরও উচিত নিজেদের দিকে তাকানো। নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান বের করা। 

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারতীয়রা দৃশ্যত চুপচাপ থাকলেও নির্বাচন প্রশ্নে দেশটির অবস্থান কী হতে পারে, সে বিষয়েও ছিল নানান আলোচনা। বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক কারণে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণার পর প্রকাশ্যে আসেন দিল্লিতে ভারতীয় কূটনীতিকেরাও। 

বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এমন ইস্যুতে ভারত সরকারের মনোভাবের প্রকাশ ঘটান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। ১১ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে কি না, বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই বক্তব্য দেওয়া হয় দিল্লিতে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল কথা বলে আসার পর। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফরে প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন। 

বিজেপির পক্ষ থেকে আগামী সপ্তাহে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানানো আছে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে। জাপা চেয়ারম্যানের দিল্লি যাওয়ার বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তাঁর বিশেষ দূত মাশরুর মাওলা। 

ওদিকে অরিন্দম বাগচি ভারত সরকারের মনোভাব প্রকাশের দিন চারেকের মধ্যেই এর কারণ স্পষ্ট করে দেন তাঁরই মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অনুবিভাগের প্রধান স্মিতা পান্ত। তিনি বলেছেন, ভারতের ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাংলাদেশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। গত মঙ্গলবার দিল্লির চাণক্যপুরির বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

স্মিতা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চরমপন্থা প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠায়। বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘদিনের যে সমস্যা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তার সমাধান দিয়েছে। দলটির প্রতি ভারতের সহানুভূতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে ভিসা নীতি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে রাশিয়া ও চীন।

অবশ্য নির্বাচনের বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। গতকাল ঢাকায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই মনোভাবের কথা জানান তিনি।

সাংবাদিকেরা নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্য ‘কূটনৈতিক জবাব’ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। 

তবে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বেশ জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তখন বেইজিং থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের এই প্রতিক্রিয়া যথার্থ বলেই মনে করে তারা। এ বক্তব্যের মাধ্যমেই চীন বুঝিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে তারা কী চাইছে।

নির্ভরযোগ্য এক কূটনীতিক জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিরোধী বিএনপি থেকে দূরে থাকার জন্য। কেন এমন পরামর্শ, সে বিষয়ে বিশদ বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে ‘বিভাজনের রাজনীতির’ কারণে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিরোধী কয়েকটি দল। সরকারি দলও এতে পাল্লা দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

নূর ধান-২: এক চালেই হবে ভাত পোলাও খিচুড়ি বিরিয়ানি তেহারি

ভারতের সঙ্গে টক্কর দিলে বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ: বিজেপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত