Ajker Patrika

মহানবীর (সা.) পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন ফরিদপুরে

ইজাজুল হক, ফরিদপুর থেকে
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ২১: ০৭
মহানবীর (সা.) পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন ফরিদপুরে

ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা দরগাবাড়ি জামে মসজিদটি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে দুষ্প্রাপ্য ও মহামূল্যবান কিছু সম্পদ। মসজিদের উত্তর কোণের একটি সুসজ্জিত কক্ষে নাইট্রোজেন গ্যাসভরা কাচের জারে রাখা আছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র দাড়ি মোবারক, হজরত আলী (রা.)-এর গোঁফ মোবারক, হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জুলফ (কানের দুপাশের দাড়ির ওপরের অংশের চুল), বড় পীর হজরত শেখ সাইয়েদ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর গায়ের আধা বা জামা ও হজরত শাহ মাদার (রহ.)-এর ফতুয়া। এ ছাড়া আছে হজরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর পাগড়ি, জায়নামাজ, তসবিহ (মাছের দাঁতের তৈরি) ও খানা খাওয়ার বর্তন (চন্দন কাঠের তৈরি)। 

হজরত আলীর ছেলে ইমাম হোসাইনের বংশধর হজরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.) ৯০০ হিজরির দিকে (প্রায় ৫৫০ বছর আগে) বাগদাদ থেকে দিল্লি হয়ে বাংলায় ইসলাম প্রচার করতে আসার সময় এই দুষ্প্রাপ্য সম্পদগুলো সঙ্গে এনেছিলেন। এর পর থেকে পবিত্র নিদর্শনগুলো ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা দরগাবাড়ি জামে মসজিদের বিশেষ রুমে সংরক্ষিত আছে।

কাচের বাক্সের ভেতর জারের মধ্যে সংরক্ষিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র দাড়ি। ফরিদপুর সদর উপজেলারফরিদপুরে মসজিদে থাকা এসব নিদর্শন থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আমি তো কিছু জানি না।’ একই ধরেনর মন্তব্য করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে। 

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন অবশ্য বলেন, ‘ফরিদপুরের গেরদায় মহানবী (সা.)-এর কোনো স্মৃতিচিহ্ন আছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে সে এলাকায় প্রকৃত সৈয়দ বংশের (সৈয়দ বংশ হলো মহানবীর বংশ) লোকজন বসবাস করেন, এটা আমার জানা আছে।’

জারের মধ্যে সংরক্ষিত হজরত আলী (রা.)-এর গোঁফ।গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো মসজিদের অখণ্ড পাথরের তৈরি পিলার বা স্তম্ভসহ অনেক নিদর্শন এখনো অক্ষত। নতুন মসজিদের দুই প্রবেশপথে অখণ্ড পাথরের চারটি পিলারের অংশবিশেষ শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন মসজিদের প্রদর্শনী কক্ষের সামনে পাথরের একটি ফলকে ফারসি ভাষায় লেখা, ১০১৩ হিজরি ও সুরা জুমার আয়াত। এর থেকে অনুমান করা যায়, শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর মৃত্যুর পর এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ফলকটি বর্তমানে নতুন মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে লাগানো আছে।

শিলালিপির অনুবাদ: বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিন নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা ত্যাগ করো।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ বানায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানান।’ রহমানি দরগার বান্দা বাহাদুর খান সোলতানি, তারিখ ১০১৩। 

হজরত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জুলফ।নিদর্শনের উল্লেখ শিক্ষা উপদেষ্টার ভিত্তিফলকে
নতুন মসজিদের সামনে আরেকটি ফলকে বাংলায় লেখা—‘হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রঃ) কর্তৃক আনীত রাসূলে করীম হজরত মোহাম্মদ (দঃ), হজরত আলী (রাঃ), হজরত ইমাম হাসান (রাঃ), হজরত ইমাম হুসাইন (রাঃ), হজরত শেখ আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) এবং অন্যান্য পূণ্যাত্মাদের পবিত্র নিদর্শনাদি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গেরদায় নির্মিত মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মাননীয় সদস্য প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান।’ তারিখ লেখা আছে ‘৭ই এপ্রিল ১৯৭৮ সাল’। সৈয়দ আলী আহসান তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।

ফরিদপুরে এই নিদর্শনগুলো সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিষয়টি জানেন বলে জানিয়েছেন। ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক, রাজেন্দ্র কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক আবদুস সামাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর মুঈ বা দাড়ি মোবারকসহ অনেক বরকতময় নিদর্শন হজরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.) সঙ্গে নিয়ে আসেন। আমি ১৯৭৩ সালে এই নিদর্শনগুলো প্রথম দেখি। তাঁর বংশধরগণ নিদর্শনগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করে আসছেন। এরপরও অনেকবার সেখানে গিয়েছি এবং হুজুরের আওলাদের সান্নিধ্য নিয়েছি। বংশপরম্পরায় তাঁরা শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর রেখে যাওয়া এসব নিদর্শন তিনি যেভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সেভাবেই বিশ্বাস করে আসছেন।

এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্যের যে ফরিদপুরে এমন বরকতময় নিদর্শন রয়েছে।’

ফরিদপুর বাকিগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল (বিএ) মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা রেশাদুল হাকিম এ বিষয়ে বলেন, ‘মসজিদটি সম্পর্কে আমি জানি। অনেকবার সেখানে গিয়েছি। সেখানে অনেক পাথর ইয়েমেন থেকে আনা হয় বলে ওস্তাদদের কাছে শুনেছি। সেখানে সংরক্ষিত মহানবী (সা.), সাহাবিসহ বুজুর্গদের বরকতময় নিদর্শনগুলো আমাদের সম্পদ।’

গেরদা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘মসজিদটি সম্পর্কে বংশপরম্পরায় অবগত আছি। আমার পূর্বপুরুষেরা কয়েক দশক ধরে গেরদার গণ্যমান্য পরিবার। গত সপ্তাহেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, ফরিদপুরের এডিসি ও এসিল্যান্ড মসজিদ পরিদর্শনে আসেন। আমি তাঁদের মূল্যবান নিদর্শনগুলো পরিদর্শন করাই।’

বড় পীর হজরত শেখ আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর জামা।ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তাসলিমা আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সেখানে যাওয়ার এখনো সুযোগ হয়নি। জেলা প্রশাসক মহোদয় দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে এই বরকতময় ও মূল্যবান নিদর্শনগুলো কীভাবে আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা দেখব।’ 

শাহ আলী বাগদাদি (রহ.) আগমন ও প্রস্থান
ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী খান তাঁর বই ‘বর্ণে শব্দে চিত্রে ফরিদপুর’-এ উল্লেখ করেন, সুলতানি আমলে বাংলাদেশে যে কয়েকজন মুসলিম সুফি-সাধকের আগমন ঘটেছিল, তাঁদের অন্যতম হজরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ থেকে তিনি ৪০ জন (মতান্তরে শতাধিক) আত্মীয়, ধর্মীয় সাধক, শিষ্যসহ দিল্লি হয়ে ফরিদপুরের (ফতেহাবাদ) গেরদায় এসেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ঢোলসমুদ্র হিসেবে খ্যাত ছিল নদীতীরবর্তী জঙ্গলময় স্থান গেরদা। নদীর তীরেই অবস্থান করতেন শাহ আলী (রহ.) এবং সেখানেই একটি ঘরে ওই নিদর্শনগুলো রেখেছিলেন। তাঁর আগমনের কারণে গেরদা বিশেষ স্থানের মর্যাদা পায়। তাঁর সম্মানে মুঘল সম্রাটের নির্দেশে বাংলার তৎকালীন সুলতান ফরিদপুরের ঢোলসমুদ্র এলাকার ১২ হাজার বিঘা ভূমি করমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন।

গেরদা দরগাহবাড়ি জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সেলিম আলী বলেন, শাহ আলী বাগদাদি (রহ.) এসব জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি এখানেই থাকতেন। নিদর্শনগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রেখে দাওয়াতি কাজে ঢাকার মিরপুরে যান, সেখানে অবস্থান করেন। তিনি মিরপুরে ইন্তেকাল করেন। সেখানেই হজরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর মাজার।

পবিত্র নিদর্শনগুলোর উল্লেখ আছে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরে।জানা যায়, শাহ আলী বাগদাদি (রহ.) নদীতীরবর্তী স্থানে পাথর দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছর পর সেই মসজিদের ভগ্নাবশেষের ওপর আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় হিজরি ১০১৩ সনের দিকে। বাংলার সুলতান বাকের শাহের উদ্যোগে পাথর দিয়ে মসজিদটি বানানো হয়েছিল। কালের আবর্তনে সেই মসজিদটিও বিলীন হয়ে যায়। আগের মসজিদের কিছু পাথর ব্যবহার করে ১৯৭৮ সালে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর নাম ‘ঐতিহ্যবাহী গেরদা দরগাহবাড়ি জামে মসজিদ’। 

বছরে পাঁচবার উন্মুক্ত করা হয় 
শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর বংশধর সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ আবু সালাম মো. আলম বলেন, ‘এগুলো (স্মৃতিচিহ্ন) বছরে পাঁচবার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, শবে মিরাজ, ফাতেহা ইয়াজদাহম ও ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এসব বরকতময় জিনিস দেখতে আসেন।’ তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া বিশেষ কেউ এলে কিংবা আগে থেকে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে স্মৃতিবহ জিনিসপত্রগুলো দেখার সুযোগ মেলে। মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেখতে আসেন। তখন এই পবিত্র নিদর্শনগুলো তাঁদের দেখানো হয়। 

ইসলাম সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত