গাজীপুর-৩: সুযোগের আশায় একাধিক প্রার্থী

জয়-পরাজয়ের হিসাব মেলালে ২০০৮ সালের পর গাজীপুর-৩ আসন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়নি। বিপরীতে সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। তবে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দুটি দলই বেশ তৎপর। দলের মনোনয়ন চান একাধিক প্রার্থী। সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও প্রার্থী দিতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার ও তৃণমূলের নেতাদের মাঝে এখন আলোচ্য বিষয় দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গঠন করা হয় গাজীপুর-৩ আসন। তখন শ্রীপুর উপজেলার সঙ্গে যোগ করা হয় সদরের মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন। বর্তমানে এই আসনে রাজনীতি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই শ্রীপুর উপজেলাকেন্দ্রিক।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। প্রয়াত রহমত আলী আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। মাঝে দলের মনোনয়ন দাবি করেন ইকবাল হোসেন সবুজ। এরপর থেকে রহমত ও সবুজের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হয়েছেন সবুজ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বর্তমানে শ্রীপুরে প্রয়াত রহমত আলীর অনুসারী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় ও মেয়ে রোমানা আলী টুসি। দুর্জয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আর রোমানা সংরক্ষিত আসনের এমপি। দলের একাংশের নেতারা চান, তাঁদের মধ্যে কেউ মনোনয়ন পাক। অন্যদিকে আরেক অংশের সমর্থন সবুজের পক্ষে। নির্বাচন ঘিরে তিনজনই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জামিল হাসান দুর্জয় বলেন, ‘যখন বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে বড় হয়েছি। আমার একমাত্র স্বপ্ন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করা। সেই স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিবারের বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়ন করবেন।’ 

রোমানা আলী টুসী বলেন, ‘এলাকায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী অতীতের মূল্যায়ন করবেন।’

অন্যদিকে বর্তমান এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের অনুসারীদের দাবি, তিনি (সবুজ) দলকে সংগঠিত করেছেন। গত নির্বাচনের আগে এলাকায় উঠান বৈঠক করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ব্যাপক সাড়া পান। এমপি হওয়ার পরও এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন।

এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘তৃণমূল থেকে সকল নেতা-কর্মী একটি পরিবারের মতো আছি। আশা করি নেত্রী আমাদের পক্ষে থাকবেন।’

সীমানা পুনর্নির্ধারণের আগে (তৎকালীন গাজীপুর-১) ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ের দেখা পেয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী নির্বাচিত হন। আসন পুনর্বিন্যাসের পর তাঁর এলাকা হয় কালিয়াকৈরে (বর্তমান গাজীপুর-১)। মূলত এরপর শ্রীপুরে নেতৃত্বের সংকটে পড়ে দলটি। এরপরও আসন্ন নির্বাচনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম নয়।

এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ, ব্যবসায়ী আতিকুল্লাহ বাবুল, শ্রীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম।

সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ বলেন, ‘বিএনপির চরম দুঃসময়ে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। ছাত্রজীবন থেকেই দলের জন্য কাজ করছি। দল নির্বাচনে গেলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি।’

এদিকে এই আসনে সাংগঠনিকভাবে জাপার তেমন তৎপরতা নেই। তবে দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল বলেছেন, দল আলাদাভাবে নির্বাচন করলে তিনি প্রার্থী হবেন।