Ajker Patrika

ব্রেইল মেশিন নষ্ট সাত মাস, উপার্জন বন্ধ চানের

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩৩
ব্রেইল মেশিন নষ্ট সাত মাস, উপার্জন বন্ধ চানের

গুটিবসন্তে দৃষ্টিশক্তি হারানো হাফেজ চান সওদাগরের (৫০) জীবিকা নির্বাহের ব্রেইল মেশিনটি নষ্ট সাত মাস হয়েছে। ব্রেইল মেশিনটি নষ্ট হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে তার জীবিকার পথ। জীবিকার পথ বন্ধ হওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে চান সওদাগরের। সঙ্গে বসতভিটা নিয়ে জটিলতা। এ যেন মড়ার উপর খড়ার ঘা।

চান সওদাগরের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় হাতীভাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব আমখাওয়া গ্রামে। দৃষ্টি শক্তি হারানো চান সওদাগরের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, জন্মান্ধ নন তিনি। ৪ বছর বয়সে গুটি বসন্ত রোগ কেড়ে নেয় তার দুচোখের আলো। সে থেকেই চোখের আলোর সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় তার স্বপ্ন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁন সওদাগরের বয়স যখন চার বছর তখন তার বাবা মুনছর আলী মারা যান। জয়-বাংলা স্লোগান দেওয়ায় পাক হানাদার বাহিনী তার বাবাকে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসিয়ে দেয়। মা খয়ারী বেগম মারা যান ১৯৭৪ সালে।

বাবা মাকে হারিয়ে অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছয় বছর ছিলেন স্থানীয় হরিচন্ডি এতিমখানায়। পরে ১৯৮০ সালে টেরিডেস হোম নামে এক বিদেশি সংস্থা তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে সরকারি অন্ধ বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। প্রাথমিক পাস করার পরে খুলনা সরকারি অন্ধ ও বধির বিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে দশম শ্রেণি পাশ করেন তিনি। পরে তেজগাঁও রহমতি আলম ইসলামী মিশন থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে চার বছর পড়াশোনার পর কোরআন শরিফ মুখস্থ করেন। ২০০১ সালে বিয়ে করেন অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগর।

সংসার জীবন শুরু করার পরে অন্যের আর্থিক সহায়তায় একটি ব্রেইল মেশিন কিনেন তিনি। সেই ব্রেইল মেশিনের সাহায্যে কোরআন শিক্ষা দিয়ে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। এর মধ্যে তাদের ঘরে আসে এক ছেলে সন্তান সিরাজুল। অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগর জানান, ব্রেইল মেশিনটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হৃদয়বান ব্যক্তি দিতে চেয়েছেন। তবে এখনো হাতে পাননি। এ প্রসঙ্গে অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগর বলেন, তার পৈতৃক নিবাস ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালে উপজেলার পূর্ব আমখাওয়া গ্রামে তিন শতক জমি কিনেন তিনি। পরে সেই জমিতে বাড়ি করে এখন পর্যন্ত সেখানেই বাস করছেন। কিন্তু বর্তমানে জমির পূর্ব মালিক জমি বৈধভাবে ক্রয় করা হয়নি বলে তাকে বাড়ি ভাঙতে নিত্যদিন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, আমরা অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের বাড়িতে গিয়েছি। তার বসতভিটার যে তিন শতক জমি নিয়ে ঝামেলা আছে সেই জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দিয়েছি। দ্রুতই এ সমস্যার নিষ্পত্তি করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত