তাসনিম মহসিন, ঢাকা
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
তাসনিম মহসিন, ঢাকা
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ...
১১ মার্চ ২০২২‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ...
১১ মার্চ ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ...
১১ মার্চ ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ...
১১ মার্চ ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫