জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
নবাবি আমলের শেষভাগেই হিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্য আর জমিদারিতে। তবে অভিজাত শ্রেণির মুসলিমরা ছিলেন প্রশাসনের উচ্চপদে। সেনাদল আর বিচার বিভাগে ছিল তাঁদের প্রাধান্য। কিন্তু কোম্পানির শাসনের সময় মুসলমানরা এসব পদ থেকে বিতাড়িত হলো।
নবাবি আমলে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের জমিদার ছিলেন। কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করেছিল ১৮৬৫ সালে। বেশি বেশি রাজস্ব আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করল তারা। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গেলেও রাজস্ব আদায় করা হলো নির্দয়ভাবে। জমিদারেরা রাজস্বের এই চাপের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। ১৭৭২ সালে নিলামের মাধ্যমে রাজস্ব নির্ধারণ নীতি প্রবর্তন করা হলো। নব্য বণিক শ্রেণি নিলামে জমিদারি কিনে নিতে লাগলেন। নতুন এই জমিদার শ্রেণির অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায় থেকে এল।
পলাশী যুদ্ধের কারণে মুসলিম সৈন্যদের ব্যাপারে সন্দেহ জাগে ইংরেজদের মনে। তারা অভিজাত মুসলমানদের দিক থেকে বিপদের আশঙ্কা করেন। তাই কোম্পানির সেনাদলে মুসলমানরা আর থাকল না। রাজস্ব বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ থেকেও ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হতে থাকল মুসলমানদের।
এবার দেখা যাক, সে সময়ের চিত্রটা। জমিদারি থেকে হটে গেল মুসলমানরা, ব্যবসা-বাণিজ্য থাকল না তাদের হাতে, সেনা দল, শাসন ও বিচারব্যবস্থায়ও তারা নেই। ফলে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও সেভাবে অনুভব করেনি তারা। তারচেয়ে বড় কথা, সে উপায়ও ছিল না মুসলমানদের। শুধু অভিমান করে ইংরেজি শেখেনি মুসলমানরা, সেটা সত্য নয়। ইংরেজি শেখার মতো অবকাঠামো ছিল না তাদের। কোম্পানি যখন নিজ হাতে তুলে নিল শাসনভার, তখন তারা এই দেশের মানুষের শিক্ষার কথা ভাবেনি। কোম্পানির কর্মচারীদের দালালি-দেওয়ানি-বেনিয়ানি ও সরকারি মুৎসুদ্দীগিরি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে। তারা ইংরেজি শিখে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেল। ইংরেজদের সহযোগিতায় তারা খুলে ফেলল হিন্দু কলেজ। সে সময় ইংরেজি স্কুল বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিশনারি আর সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের দ্বারা।
কলকাতা বা শহরাঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল কম। গ্রামেই বাস করত অধিকাংশ মুসলমান। ইংরেজি স্কুলগুলো গড়ে উঠছিল কলকাতা ও তার নিকটবর্তী শহরাঞ্চলে। পূর্ব বাংলা ও উত্তর বাংলায় মুসলমানরা ছিল বেশি। সে এলাকার হিন্দু জমিদারেরা কর আদায় করতেন গ্রামাঞ্চল থেকে কিন্তু বসবাস করতেন কলকাতায়। ফলে নিজ এলাকার মানুষের কল্যাণে ইংরেজি স্কুল গড়ার কথা ভাবেননি তারা। নিদারুণ দারিদ্র্য মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ইংরেজরা যদি সাধারণ মানুষের জন্য ইংরেজি শিক্ষার আয়োজন করত, তাহলে মুসলিমরা পিছিয়ে পড়ত না।
ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়লে সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না। আদালতে যত দিন ফারসি ভাষা চালু ছিল, তত দিন কিছুসংখ্যক মুসলমান সরকারি চাকরি করতে পেরেছে। ইংরেজি প্রবর্তিত হওয়ার পর তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছিল ইংরেজি জানা হিন্দুরা।
১৮৪৪ সালে অফিস-আদালতে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি ও বাংলা ভাষা চালু হলো। ইংরেজি এবং বাংলা—উভয় ভাষাতেই মুসলমানরা পিছিয়ে ছিল। ফলে সরকারি চাকরি তাদের কাছে হয়ে উঠল সোনার হরিণ।
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর অভিজাত মুসলমানরা শাসিত শ্রেণিতে পরিণত হলো, অভিজাত হিন্দুর কেবল শাসক পরিবর্তন হলো। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ সময় ইংরেজদের সহায়তায় হিন্দু সম্প্রদায় সাবেক মুসলিম শাসকদের অত্যাচারীরূপে চিত্রিত করতে থাকল। তারা বলতে লাগল, মুসলিম শাসকেরা তাদের ওপর অত্যাচার করা শুরু করলে ইংরেজরা এসে তাদের বাঁচিয়েছে। এ সময় হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। হিন্দুত্ব-প্রীতি হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক। হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা হয়। সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিমবিদ্বেষ দেখা যায়। গোরক্ষা আন্দোলন, শিবাজি উৎসব ইত্যাদির কারণে মুসলমান ও হিন্দুর সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
তবে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। ১৮৫৮ সালে এ দেশে প্রথম স্নাতক হয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু। ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম মুসলমান হিসেবে স্নাতক হন দেলওয়ার হোসেন আহমদ।
আমরা আমাদের আলোচনায় রাজনৈতিকভাবে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের কথা বলিনি। রাজনীতি যে পথে এগিয়েছে, তাতে ধীরে ধীরে হিন্দু ও মুসলমান হয়ে উঠল পরস্পরের ঘোরতর শত্রু। একটি দেশে তারা আর বাস করতে পারল না। দেশ বিভাগের সেই কথাই এবার বলা হবে। এবং দেখা হবে বাংলার মুসলমানের কাছে উর্দু কতটা দামি হয়ে উঠতে পেরেছিল, সেটাও।
নবাবি আমলের শেষভাগেই হিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্য আর জমিদারিতে। তবে অভিজাত শ্রেণির মুসলিমরা ছিলেন প্রশাসনের উচ্চপদে। সেনাদল আর বিচার বিভাগে ছিল তাঁদের প্রাধান্য। কিন্তু কোম্পানির শাসনের সময় মুসলমানরা এসব পদ থেকে বিতাড়িত হলো।
নবাবি আমলে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের জমিদার ছিলেন। কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করেছিল ১৮৬৫ সালে। বেশি বেশি রাজস্ব আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করল তারা। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গেলেও রাজস্ব আদায় করা হলো নির্দয়ভাবে। জমিদারেরা রাজস্বের এই চাপের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। ১৭৭২ সালে নিলামের মাধ্যমে রাজস্ব নির্ধারণ নীতি প্রবর্তন করা হলো। নব্য বণিক শ্রেণি নিলামে জমিদারি কিনে নিতে লাগলেন। নতুন এই জমিদার শ্রেণির অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায় থেকে এল।
পলাশী যুদ্ধের কারণে মুসলিম সৈন্যদের ব্যাপারে সন্দেহ জাগে ইংরেজদের মনে। তারা অভিজাত মুসলমানদের দিক থেকে বিপদের আশঙ্কা করেন। তাই কোম্পানির সেনাদলে মুসলমানরা আর থাকল না। রাজস্ব বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ থেকেও ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হতে থাকল মুসলমানদের।
এবার দেখা যাক, সে সময়ের চিত্রটা। জমিদারি থেকে হটে গেল মুসলমানরা, ব্যবসা-বাণিজ্য থাকল না তাদের হাতে, সেনা দল, শাসন ও বিচারব্যবস্থায়ও তারা নেই। ফলে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও সেভাবে অনুভব করেনি তারা। তারচেয়ে বড় কথা, সে উপায়ও ছিল না মুসলমানদের। শুধু অভিমান করে ইংরেজি শেখেনি মুসলমানরা, সেটা সত্য নয়। ইংরেজি শেখার মতো অবকাঠামো ছিল না তাদের। কোম্পানি যখন নিজ হাতে তুলে নিল শাসনভার, তখন তারা এই দেশের মানুষের শিক্ষার কথা ভাবেনি। কোম্পানির কর্মচারীদের দালালি-দেওয়ানি-বেনিয়ানি ও সরকারি মুৎসুদ্দীগিরি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে। তারা ইংরেজি শিখে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেল। ইংরেজদের সহযোগিতায় তারা খুলে ফেলল হিন্দু কলেজ। সে সময় ইংরেজি স্কুল বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিশনারি আর সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের দ্বারা।
কলকাতা বা শহরাঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল কম। গ্রামেই বাস করত অধিকাংশ মুসলমান। ইংরেজি স্কুলগুলো গড়ে উঠছিল কলকাতা ও তার নিকটবর্তী শহরাঞ্চলে। পূর্ব বাংলা ও উত্তর বাংলায় মুসলমানরা ছিল বেশি। সে এলাকার হিন্দু জমিদারেরা কর আদায় করতেন গ্রামাঞ্চল থেকে কিন্তু বসবাস করতেন কলকাতায়। ফলে নিজ এলাকার মানুষের কল্যাণে ইংরেজি স্কুল গড়ার কথা ভাবেননি তারা। নিদারুণ দারিদ্র্য মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ইংরেজরা যদি সাধারণ মানুষের জন্য ইংরেজি শিক্ষার আয়োজন করত, তাহলে মুসলিমরা পিছিয়ে পড়ত না।
ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়লে সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না। আদালতে যত দিন ফারসি ভাষা চালু ছিল, তত দিন কিছুসংখ্যক মুসলমান সরকারি চাকরি করতে পেরেছে। ইংরেজি প্রবর্তিত হওয়ার পর তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছিল ইংরেজি জানা হিন্দুরা।
১৮৪৪ সালে অফিস-আদালতে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি ও বাংলা ভাষা চালু হলো। ইংরেজি এবং বাংলা—উভয় ভাষাতেই মুসলমানরা পিছিয়ে ছিল। ফলে সরকারি চাকরি তাদের কাছে হয়ে উঠল সোনার হরিণ।
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর অভিজাত মুসলমানরা শাসিত শ্রেণিতে পরিণত হলো, অভিজাত হিন্দুর কেবল শাসক পরিবর্তন হলো। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ সময় ইংরেজদের সহায়তায় হিন্দু সম্প্রদায় সাবেক মুসলিম শাসকদের অত্যাচারীরূপে চিত্রিত করতে থাকল। তারা বলতে লাগল, মুসলিম শাসকেরা তাদের ওপর অত্যাচার করা শুরু করলে ইংরেজরা এসে তাদের বাঁচিয়েছে। এ সময় হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। হিন্দুত্ব-প্রীতি হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক। হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা হয়। সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিমবিদ্বেষ দেখা যায়। গোরক্ষা আন্দোলন, শিবাজি উৎসব ইত্যাদির কারণে মুসলমান ও হিন্দুর সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
তবে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। ১৮৫৮ সালে এ দেশে প্রথম স্নাতক হয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু। ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম মুসলমান হিসেবে স্নাতক হন দেলওয়ার হোসেন আহমদ।
আমরা আমাদের আলোচনায় রাজনৈতিকভাবে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের কথা বলিনি। রাজনীতি যে পথে এগিয়েছে, তাতে ধীরে ধীরে হিন্দু ও মুসলমান হয়ে উঠল পরস্পরের ঘোরতর শত্রু। একটি দেশে তারা আর বাস করতে পারল না। দেশ বিভাগের সেই কথাই এবার বলা হবে। এবং দেখা হবে বাংলার মুসলমানের কাছে উর্দু কতটা দামি হয়ে উঠতে পেরেছিল, সেটাও।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
২ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪