Ajker Patrika

শেকলের দূরত্বে সীমাবদ্ধ রাসেলের চলাচল

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৩১
শেকলের দূরত্বে সীমাবদ্ধ রাসেলের চলাচল

জন্মের পর স্বাভাবিক জীবন ছিল রাসেল মিয়ার। শৈশব, কৈশর কেটেছে দুরন্তপনায়। পাঁচ বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রাসেল মিয়া। ২০ বছরের এই তরুণের ছুটে চলার গণ্ডি সীমাহীন হওয়ার কথা, কিন্তু তাঁর জীবনের গতি শেকলের দূরত্বে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেকলে বেঁধেই রাখছে পরিবার।রাসেল মিয়ার বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রীফলগাতি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল হান্নান-রাশেদা বেগম দম্পতির ছেলে।

আব্দুল হান্নান চুক্তিতে ডাকপিয়নের কাজ করেন। স্বল্প আয়ে পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে হিমশিম খাওয়া আব্দুল মান্নান ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছেন না। ফলে দুই বছর ধরে ছেলেকে শেকলে বেঁধে রেখেছেন তাঁরা।টিনের একটি ঘরে রাসেলের পায়ে লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুই বছর ধরে ওই ঘরের ভেতর কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনোবা শুয়ে-বসে সময় কাটে তাঁর। শিকলের আয়তনে তাঁর জীবনের পরিসীমা। ছোটাছুটির চেষ্টা আর ব্যর্থ হয়ে চিৎকার করে বাড়ি মাতিয়ে রাখেন রাসেল। অর্থকষ্টে সন্তানের এমন অসহনীয় জীবনযাপনে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন রাসেলের মা-বাবা।বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে রাসেল বড়। পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে।

অভাবের সংসারে যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে ওর চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছি। কিন্তু কিছুতেই সুফল হয়নি। তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ জন্য দুই বছর ধরে তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।’আব্দুল হান্নান আরও বলেন, ‘এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমিই একমাত্র সংসারের উপার্জনকারী। বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছু নাই। চিকিৎসার অভাবে ছেলেটা চোখের সামনে ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ সমাজের সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা কামনা করেন রাসেলের বাবা।যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ‘রাসেলের সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আমি তাঁকে সামর্থ্যের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। তবে তা যথেষ্ট নয়।’রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘তাঁকে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব শিগগির সে ভাতার আওতায় আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত