Ajker Patrika

২ হাজারের জমি সাড়ে ১৬ কোটি টাকা, মামলা চলছে ৫৫ বছর

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
Thumbnail image

বায়না চুক্তি হলেও দলিল করে দেননি জমির মালিক। তাই আদালতে চুক্তি বাস্তবায়নের মামলা করেন ক্রেতা। এরপর সহকারী জজ আদালত, জেলা জজ আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ঘুরতে ঘুরতে কেটে গেছে ৫৫ বছর। বাদী-বিবাদীর মৃত্যুর পর মামলা চালাচ্ছেন তাঁদের সন্তানেরা। তাঁরাও এখন প্রবীণ। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। জমিও রেজিস্ট্রি হয়নি।

মামলার সময় ২ একর ৭৫ শতাংশ জমির মূল্য ধরা হয়েছিল ২ হাজার টাকা। জানা যায়, সেই জমির দাম বর্তমানে প্রতি শতাংশ ৬ লাখ টাকা হিসাবে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাদী জীবদ্দশায় মামলার নিষ্পত্তি দেখে যেতে পারেননি। এটি দুঃখজনক। মামলা নিষ্পত্তির সময় নিয়ে আইনে বাধ্যবাধকতা নেই। তাই এখানে নীতিমালা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সমন জারির বিষয়গুলো আরও আধুনিক করার পরামর্শ দেন তিনি।

মামলার নথি ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দারিকান্দী গ্রামের মগবাজার, মীরের চর ও দক্ষিণ চন্দ্রবর্ধী মৌজার ২ একর ৭৫ শতাংশ জমি কিনতে তৎকালীন মালিক দুখাই চন্দ্রপালের সঙ্গে ১৯৬৯ সালের ১৭ এপ্রিল বায়না চুক্তি করেছিলেন ইয়াসীন আলী সরকার।

জমির মূল্য ২ হাজার টাকা ধরে ১ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। কথা ছিল বাকি ৩০০ টাকা শোধের পর জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। তবে জমি রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় ইয়াসীন আলী সরকার ১৯৭০ সালে সহকারী জজ আদালতে চুক্তি বাস্তবায়নের মামলা করেন। মামলায় দুখাই এবং দুখাইয়ের কাছ থেকে জমি কেনার দাবিদার ছয়জনকেও বিবাদী করা হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন রফিক, গিয়াস উদ্দিন ও দরবেশ আলী। বিবাদীদের কেউ আদালতে জবাব দেননি। পরে নিজেকে জমির ক্রেতা দাবি করে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মামলায় পক্ষভুক্ত হন।  

রফিক, গিয়াস ও দরবেশ আলীর দাবি অনুযায়ী, তাঁরা ১৯৬৯ সালের ১২ এপ্রিল ৩ হাজার টাকা মূল্য ধরে জমিটি কিনতে বায়না চুক্তি করেন। পরিশোধ দেখানো হয় দেড় হাজার টাকা। ১৯৭১ সালের ১৩ জানুয়ারি তাঁরা দুখাইয়ের কাছ থেকে সাফ কবলা দলিল করে নেন। তাঁদের কাছ থেকে কেনেন আব্দুর রহমান।

ইয়াসীন ১৯৭৪ সালে মারা যান। পরে তাঁর স্ত্রী নাজিমুননেছা, ছেলে আব্দুল মতিন, সাইদুর রহমান, হাবিবুর রহমান, আব্দুর রহমান এবং মেয়ে গুলনাহার, রেহানা ও নুরুন নাহার মামলায় পক্ষভুক্ত হন। ১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল ওই মামলার রায়ে উল্লেখিত জমির ১ একর সাড়ে ২৭ শতাংশ ইয়াসীনের উত্তরাধিকারীদের এবং বাকি জমি আব্দুর রহমানসহ অন্যদের বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন ইয়াসীনের উত্তরাধিকারীরা। জেলা জজ আদালত ১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ সহকারী জজ আদালতের রায় বাতিল করে পুরো জমি ইয়াসীনের উত্তরাধিকারীদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে ১৯৮৪ সালে ডিক্রি জারির মামলা করেন তাঁরা।

এদিকে জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১৯৮০ সালে সিভিল রিভিশন করেন আব্দুর রহমান। হাইকোর্ট ১৯৯০ সালের ৩১ জানুয়ারি রায়ে সহকারী জজ আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। ইয়াসীনের উত্তরাধিকারীরা আপিল বিভাগে গেলে ১৯৯২ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়। একই সঙ্গে তাঁদের পুরো সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে সহকারী জজ আদালতে ডিক্রি জারির মামলায় পক্ষভুক্ত হতে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর আবেদন করেন আসন আলী। তাঁর দাবি, তিনি ইয়াসীনের ছেলেদের কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছেন। আসন আলীর ভাতিজা বিল্লাল হোসেন জমি বদল করেছেন দাবি করে একই সময়ে মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন। দাবির পক্ষে দলিল দেখাতে ব্যর্থ হলে আদালত ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুজনের আবেদনই খারিজ করেন। আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে তাঁদের করা পৃথক সিভিল রিভিশন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

ইয়াসীনের ছেলে সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের সব আয় মামলার পেছনেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। ওই জমির ক্রেতা দাবিদার আব্দুর রহমান মারা গেছেন অন্তত দেড় দশক আগে। তাঁদেরও বয়স হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁরা সন্তানদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত