Ajker Patrika

স্বাবলম্বী ১০ হাজার ভূমিহীন

আকাশ আহমেদ, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫০
স্বাবলম্বী ১০ হাজার ভূমিহীন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একখণ্ড জমি নেই, এমন পরিবারের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এসব পরিবার কোনো-না কোনোভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। অনেক পরিবার বর্গা নিয়ে জমি চাষ করে। আবার অনেকে পতিত জমি কিংবা রাস্তার ধারে চাষ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু রাস্তার ধারে শিম চাষ করে রাঙ্গুনিয়ার ১০ হাজারের বেশি ভূমিহীন পরিবারের বছরের তিন থেকে চার মাস স্বচ্ছন্দে চলে।

৮ নম্বর সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরফভাটা ইউনিয়নে ২ হাজারের বেশি ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু পরিবার বর্গা জমি নিয়ে চাষ করে। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তারা অন্যের বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি শীত মৌসুমে এলাকার পতিত জমিতে এবং রাস্তার ধারে শিম চাষ করে অভাব ঘুচানোর চেষ্টা করে। তিনি জানান, সরফভাটার এক হাজার ভূমিহীন পরিবার রাস্তার ধারে শিম চাষ করে তাদের পরিবারের খরচ জোগাড় করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আকতার বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫ হাজার একরের বেশি পতিত জমি রয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার একরের বেশি গ্রামীণ রাস্তার ধার রয়েছে। এসব পতিত জমি এবং রাস্তার ধারে শিম, কলাই, ঘাস ও ফেলনের মতো মৌসুমি চাষাবাদ করা যায়। একটু যত্ন আর পশুদের থেকে রক্ষা করতে পারলে বেশ সুফল পাওয়া যায়। এসব জায়গায় চাষ করে ১০ হাজার পরিবার প্রতিবছর লাভবান হচ্ছে। প্রতিবছর রাস্তার ধারে শিম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

৭ নম্বর বেতাগী ইউনিয়নের কুলালপাড়া গ্রামের কিষানি পার্বতী বালা সাহা বলেন, পরিবারের কর্তা মারা গেছেন। সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে চৌধুরীবাড়ির জমির পাশের রাস্তার ধারে শিম চাষ করে অভাব ঘুচানোর চেষ্টা করি। প্রথম বছর কোনো লাভ হয়নি। পরের বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে চাষ করে বেশ লাভ হয়েছি। এ বছর শিমের পাশাপাশি কলাইয়ের চাষ করেছি।

১৩ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নের রাস্তার ধারের শিমচাষি মুন্সি মিয়া বলেন, ১০ বছর আগে রাস্তার ধারের জায়গাগুলো পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। কয়েক বছর সেখানে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। এরপর ভূমিহীনরা সেখানে চাষাবাদ করে কিছুটা অভাব ঘুচানোর চেষ্টা শুরু করলে জমির মালিকদের নজরে পড়ে। এখন রাস্তার পাশের জমির মালিকেরা তাঁদের নিজস্ব সম্পত্তি দাবি করে অনেকেই রাস্তার ধারে চাষাবাদ শুরু করেছেন। এতে ভূমিহীনদের কপাল পুড়ছে। অনেক ভূমিহীন পরিবার এখন রাস্তার ধারে চাষ করতে পারছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস বলেন, দেশের একখণ্ড জমিও যাতে খালি না থাকে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ভূমিহীন পরিবারগুলো পতিত জমি এবং রাস্তার ধারের খালি জমিতে মৌসুমি চাষ করে অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।

রাস্তার ধারের জমিতে যেন প্রকৃত ভূমিহীনরাই চাষাবাদ করতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের প্রতি আহ্বান জানান ইফতেখার ইউনুস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত