Ajker Patrika

৩০০ কোটি লোপাট তদারকির অভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১১: ৩১
৩০০ কোটি লোপাট তদারকির অভাবে

­গ্রাহকদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ছিল সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন। তবে উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের কোনো তদারকি ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। আর তদারকির অভাবেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা অধিক মুনাফার প্রলোভনে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করেন।

তবে সাভার উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া গ্রাহকদের কোনো অভিযোগও ছিল না। তবে র‍্যাবের হাতে ১০ জন আটক হওয়ার পর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তারা।

উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ২০০৮ সালে সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়। এরপর আশুলিয়ার জামগড়ায় কার্যালয় নিয়ে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম শুরু করে। প্রতি বছরই উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নিরীক্ষা চলত। সেই অনুযায়ী সর্বশেষ গত বছর ৩০ জুন নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, তখন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ছিল ২৫৮ জন। সংগ্রহ করা সঞ্চয়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। এককালীন আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর গ্রাহকদের কাছে ওই সমবায় সমিতির ঋণ বাবদ পাওনা ছিল ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪০ টাকা।

তবে মাঠপর্যায়ে সমবায় কার্যালয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবে কয়েক শ গ্রাহক চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে টাকা জমা রেখে প্রতারিত হয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী, চেতনা কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তারা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সঠিক তদারকি থাকলে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তারা এত বড় প্রতারণা করার সুযোগ পেতেন না বলে মনে করেন আশুলিয়ার খেজুরটেক এলাকার ফরিদ আহম্মেদ। লাখে ১ হাজার ৮০০ টাকা মুনাফার লোভে চেতনায় আমানত করে তাঁর ৪৪ লাখ টাকা খোয়া গেছে।

ফরিদ প্রায় এক যুগ প্রবাসে চাকরি করে ওই টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। তাঁর মতো অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। তাঁর দুই বোনও ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন।

ফরিদ আহম্মেদ বলেন, তিনিসহ গ্রাহকদের অনেকেই ২০২০ সাল পর্যন্ত কমবেশি লাভের টাকা পেয়েছেন। মাস দুয়েক মুনাফা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সপ্তাহখানেক আগে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান কর্মকর্তারা।

অতি সম্প্রতি যোগদান করা সাভার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, চেতনার কর্মকর্তারা সম্প্রতি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকেরা বিক্ষোভ করেছেন। এর পর বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। পরে মোবাইল ফোনে এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যালয় খুলে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ও বুধবার অভিযান চালিয়ে র‍্যাব ১০ জনকে আটক করে।

রুহুল আমিন বলেন, সমবায় আইন অনুযায়ী কোনো সমবায় সমিতি সদস্যদের মধ্যে আমানত গ্রহণ ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। চেতনার কার্যক্রম আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছিল কি না র‍্যাবের অভিযানের পর তা খতিয়ে দেখতে অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার তাঁকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

এবার প্রশাসনিক কাজে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত কুয়েট শিক্ষক সমিতির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত