Ajker Patrika

‘মোন্দো’ই করলেন বাবার স্বপ্ন পূরণ

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১০: ২৪
‘মোন্দো’ই করলেন বাবার স্বপ্ন পূরণ

এ যেন বায়ুমণ্ডল ছেড়ে মহাশূন্যে যাওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি! ইউজিনের হেইওয়ার্ড ফিল্ডের ট্র্যাকে সোমবার আরমান্ড ডুপলান্টিসের বাঁধনহারা উদ্‌যাপন দেখে সে রকমই মনে হতে পারে। একবার ডিগবাজি দিচ্ছেন তো আরেকবার প্রেমিকা ডিজায়ার ইংল্যান্ডারকে জড়িয়ে চুম্বন করছেন। ৬.২১ মিটার—বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ তো বটেই, পোল ভল্ট ইতিহাসেই এত উঁচুতে লাফিয়ে ওঠার নজির আর কারও নেই।

অবশ্য গত মার্চেই বিশ্ব অ্যাথলেটিকস ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছিলেন আরমান্ড। ২০২০ সালে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও দুটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াকে এখন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন। নিজেই নিজেকে হারিয়ে দেওয়ার মাঝে তাহলে এত সুখ কেন খুঁজে ফিরলেন তিনি—তা নিয়েই এই গল্প।

দুই বছর আগের কীর্তির পরই পোল ভল্টপ্রেমীরা আরমান্ডকে ‘নতুন বুবকা’ ডাকতে শুরু করেন। বুবকা মানে সের্গেই বুবকা, খেলাটির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা মানা হয় যাঁকে। ‘চকলেট বয়’ চেহারার এক তরুণের ‘নতুন বুবকা’ তকমা পাওয়ায় খুশি হওয়ার কথা পরিবারের। কিন্তু আরমান্ডের বাবা গ্রেগ ডুপলান্টিস বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ছেলেকে নিজের বন্ধুর দেওয়া ডাকনাম ‘মোন্দো’ নামেই ডাকার অনুরোধ জানালেন। কিন্তু কেন?

আরমান্ডের বাবা গ্রেগ নিজেও ছিলেন তারকা পোল ভল্টার। আর তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি বুবকা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর বুবকা পেয়েছেন ইউক্রেনের নাগরিকত্ব। কিন্তু তাঁর রেকর্ড সে সময় কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি। পারেননি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেগও। উল্টো ৩৫ বার নিজের রেকর্ড ভেঙে পোল ভল্টে ‘অমরত্ব’ লাভ করেন বুবকা।

এরপরই গ্রেগ পণ করেন, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন তিন ছেলের কাউকে দিয়ে করাবেন। আপাদমস্তক ক্রীড়া পরিবার বলতে যা বোঝায়, গ্রেগের পরিবার তেমনই। স্ত্রী হেলেনা সাবেক হেপ্টাথলেট (সাত ডিসিপ্লিনের একটি খেলা) ও ভলিবল খেলোয়াড়। তাঁদের তিন ছেলে আন্দ্রেয়াস, আন্তোনি, আরমান্ড ও একমাত্র মেয়ে জোহানাও হয়েছেন পোল ভল্টার।

গ্রেগ মার্কিন ও হেলেনা সুইডিশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-সুইডেন যেকোনো দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ ছিল চার সন্তানের। ছেলেরা বেছে নেন মায়ের দেশ সুইডেনকে। বড় ছেলে আন্দ্রেয়াস ২০০৯ বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১২ বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ পারফর্ম করায় গ্রেগের স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। তবে এরপর আর নিজেকে বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি। এর মধ্যেই গ্রেগকে বড় ধাক্কা দেন মেজো ছেলে আন্তোনি। পোল ভল্ট ছেড়ে বাস্কেটবলে ঝুঁকে পড়েন তিনি।

গ্রেগের স্বপ্নের ‘বাতিঘর’ তখন ছোট ছেলে আরমান্ড। তাঁকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধলেন তিনি। বাবার চাওয়া সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন আরমান্ডই। সব ছেড়ে শুধু পোল ভল্টেই ডুবে রইলেন তিনি। প্রথম বড় সাফল্য এল ১৬ বছর বয়সে, ২০১৫ সালে বিশ্ব অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে।

সেই যে শুরু; আরমান্ডকে আর থামিয়ে রাখা যায়নি। এক অলিম্পিক রেকর্ড বাদে পোল্ট ভল্টের শীর্ষ পর্যায়ের সব প্রতিযোগিতার শীর্ষে এখন তাঁর নাম। তবে অলিম্পিক রেকর্ডটা বুবকার দখলেও নেই। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ৬.০৩ মিটার উঁচুতে উঠে রেকর্ডটা নিজের করে রেখেছেন ব্রাজিলের থিয়াগো ব্রাজ। গত বছর টোকিও অলিম্পিকে সেই ব্রাজকে হারিয়েই সোনা জেতেন আরমান্ড। আর বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তো শুধু চক্রই পূরণ করেননি, সব প্রতিযোগিতায় বুবকাকে পেছনে ফেলে বাবাকেও মহিমান্বিত করলেন। সঙ্গে বুবকাকেও যেন নিজের আগামী বার্তার জানান দিলেন, ‘এত অল্প বয়সে রেকর্ডটা হয়ে যাবে ভাবিনি। আমাকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য বাবাকে ধন্যবাদ।’

উসাইন বোল্টের অবসরের পর অ্যাথলেটিকস মাতানো মহাতারকার বড্ড অভাব। বয়স সবে ২২। এখনই নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাতে ব্যাটনটা বোল্টের হাত ঘুরে আরমান্ডের হাতে আসতে বুঝি আর বেশি দিন বাকি নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত