Ajker Patrika

নাশকতার মামলায় তিন মাসে সাজা বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩৯
নাশকতার মামলায় তিন মাসে সাজা বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর

নাশকতার বিভিন্ন পুরোনো মামলায় রাজধানীতে গত তিন মাসে বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মামলার রায় হচ্ছে। এসব মামলায় শাস্তি পাচ্ছেন বিএনপির সামনের সারির অনেক নেতাও। কিছু মামলায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদেরও সাজা হয়েছে। ঢাকায় চলতি মাসেই সাজা হয়েছে আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীর। গত সোমবার এক দিনেই ঢাকা ও রংপুরে বিএনপির ১২২ নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ২০১৩ সালের এক মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডনসহ পাঁচজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সাম্প্রতিক সময়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলীম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনামুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহসান ও হাবিবুর রশিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ।

বিএনপি অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোনো মামলায় এখন নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে, যাতে নির্বাচনের সময় তাঁরা বাইরে থাকতে না পারেন। বিএনপির আরও অভিযোগ, যথাযথভাবে সাক্ষ্য না নিয়ে এবং পর্যাপ্ত সাক্ষী হাজির না করে রাত পর্যন্ত আদালত বসিয়ে দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের পক্ষে বিভিন্ন মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব সাজা ফরমাশি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, পর্যাপ্ত সাক্ষী নেই, শুধু পুলিশ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া হচ্ছে; যা বেআইনি।

এই আইনজীবী জানান, ১০-১২ বছর আগের মামলায় এত দিন সাক্ষী আসেনি। গত দু-তিন মাসে মামলার তালিকা করে সাক্ষীদের হাজির করা হচ্ছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, দীর্ঘদিনের মামলা, সে কারণে দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়েই রায় দেওয়া হচ্ছে। অনেকে খালাসও পাচ্ছেন। আদালত স্বাধীন। তাঁদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না।

ঢাকার মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। যেসব ঘটনায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণ হচ্ছে, আদালত সেসব ঘটনায় সাজা দিচ্ছেন। অনেক নেতা-কর্মী খালাসও পাচ্ছেন। সরকারের চাপ থাকলে কোনো আসামি খালাস পেত না। কাজেই বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়। আদালতের ওপর কোনো চাপ নেই।

তবে ঢাকার আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০-১২ বছর আগের মামলাগুলোতে বছরের পর বছর সাক্ষী হাজির না হলেও এ বছরের শুরু থেকে হঠাৎ করেই সাক্ষী হাজির হচ্ছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায়ের দিন আসামিরা উপস্থিত থাকেন না। তাঁদের পলাতক দেখিয়ে রায় দেওয়ায় আদালত সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আইনজীবীরা জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় তাঁদের যেকোনো সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে।

বিএনপির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এ পর্যন্ত কতজনের সাজা দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের গণহারে সাজা দেওয়া হচ্ছে।

অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বেছে বেছে বিএনপির সামনের সারির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে সাজা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা আন্দোলন করতে না পারেন এবং সামনের নির্বাচনেও অংশ নিতে না পারেন। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে সরকার। এভাবে চললে বিচার বিভাগ স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, এর মধ্যে বেশির ভাগ মামলা ‘গায়েবি’।

বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সাজা দেওয়াটা আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, যেটা শুনেছি, ভৌতিক মামলা হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেসব মামলায় সাজা দেওয়া বিচার বিভাগকে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত