আবু তাহের খান

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক। শেষ পর্যন্ত কত লোক ঢাকা ছেড়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এআরআইয়ের দেওয়া সংখ্যার কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে। তো সে সংখ্যা সামান্য কম-বেশি যা হোক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত এই ১ কোটি ২০ লাখ লোক বা ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ কেন যানবাহন ও যাতায়াত-পথের এত কষ্ট, দুর্ভোগ ও হয়রানি সহ্য করেও মাত্র তিন-চার দিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রাণান্ত ‘যুদ্ধে’ নিজেদের প্রায় উৎসর্গ করে দিচ্ছেন? অথচ ঢাকা ত্যাগকারী এ মানুষদের প্রত্যেকেই জানেন, ঈদ পার হতে না হতেই তাঁদের আবার আরেক দফা ফিরতি যুদ্ধে নামতে হবে বসবাস-অযোগ্য ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। তাহলে মাত্র তিন-চারটি দিন গ্রামের বাড়িতে কাটানোর জন্য কেন তাঁদের এ প্রাণান্ত প্রয়াস?
একেবারে প্রথম কথা হচ্ছে, এই মানুষদের প্রায় কেউই ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বা আপনস্থান বলে ভাবেন না। মৌসুমি কৃষিশ্রমিক যেমন মজুর ভিত্তিতে ধান কাটার জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এসে কাজ শেষে মজুরি নিয়ে দ্রুত নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চান, এ-ও অনেকটা তেমনি। ঢাকায় থাকা মানুষেরা চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া ও অন্য নানা কাজে তথা জীবিকার প্রয়োজনে নিছক বাধ্য হয়ে এখানে থাকছেন বটে। কিন্তু তাঁদের আত্মা কখনোই এ শহরকে ধারণ করতে পারেনি বা এ শহরও কখনো তাঁদের আপন করে নেয়নি। হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭), কবি শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বা শিল্পী মুর্তজা বশীরের (১৯৩২-২০২০) মতো দু-চারজনকে ঢাকা তার বুকে জায়গা দিলেও অধিকাংশকেই সে তা দেয়নি। ফলে এখানে কর্মরত মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে যতই এখানে বছরের পর বছর দিন কাটাক এবং এখানকার জল-হাওয়া যতই তাঁকে বাঁচার রসদ জোগাক, তিনি ভাবেন, এ শহর, এই শহরের দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, খাবারদাবার, নাচ-গান, কলকাকলি এসবের কিছুই তাঁর নয়। এমনকি যে কারখানা, অফিস, দোকান, ফুটপাত বা রাস্তাঘাটে তিনি কাজ করেন, সেসবের সঙ্গেও তাঁর কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই।
দিনের পর দিন এখানে বসবাস করা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তার মানুষদের একটি আত্মিক সম্পর্ক কেন গড়ে উঠতে পারল না অথবা তার বিপরীতে এমন একটি হৃদয়হীন অস্বাভাবিক সম্পর্ক কেন ও কীভাবে টিকে থাকল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রথমেই আসা যাক পোশাকশ্রমিকদের কথায়। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের সিংহভাগের কর্মস্থলই ঢাকা ও এর সন্নিহিত এলাকায়। এই শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের মালিকেরা যে আচরণ করেন, তাতে করে নিজ কর্মস্থলকে তাঁদের পক্ষে কখনোই আপন ভাবার কোনো কারণ নেই। ফলে শুধু ঈদে কেন, যেকোনো সময় তাঁরা ঢাকা ছাড়তে পারলেই বর্তে যান, কিন্তু পেটের দায়ে তা পারেন না। অন্য কারখানাগুলোর অবস্থা পোশাক খাতের মতো অতটা নাজুক না হলেও তাঁদের পক্ষেও ঢাকাকে আপন ভাবার কোনো কারণ নেই; বরং ভেতরে-ভেতরে এ শহরকে তাঁরাও প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, যে ঘৃণা ঈদের এক দিন আগপর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আরও বৃদ্ধি পায়। অতএব হেঁটে হলেও ঢাকার প্রতি ঘৃণা ছিটিয়ে ঈদে বাড়ি তিনি যাবেনই, যেমনটি গিয়েছিলেন করোনার সময়।
পেশা বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকের পর ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড়সংখ্যক মানুষ হচ্ছেন নিউমার্কেটের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হোসেন ও দোকান কর্মচারী মোহাম্মদ মোরসালিনের মতো খুবই সাধারণ পেশার মানুষেরা। মোরসালিনের মতো মানুষেরা ঈদের দু-এক দিন আগে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে ঈদের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানে কাজ করেন এবং কাজ শেষ করে ওই রাতেই লঞ্চে বা বাসে করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পাঠক বলুন, যে শহরের কর্মস্থল ঈদের আগের দিন বা আগের মাঝরাত পর্যন্ত কোনো বাড়তি প্রণোদনা বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তার কর্মচারীকে কাজে আটকে রাখে, সে শহরকে নাহিদ বা মোরসালিনেরা কোন যুক্তিতে আপন ভেবে ভালোবাসবেন? তারপরও যদি বেতনের পরিমাণটি উৎসাহব্যঞ্জক হতো, তাহলেও একটি কথা ছিল।
কিন্তু এর কোনো কিছুই তো তাঁকে এ ঢাকা শহরের প্রতি মমতাবান হয়ে উঠতে উৎসাহিত করতে পারছে না। শতভাগ নির্ভরযোগ্য না হলেও মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী দেশের গণপরিবহন খাতে সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক (চালক, সাহায্যকারী ও অন্যান্য) কাজ করেন, যাঁদের সিংহভাগই কর্মরত ঢাকা ও এর সন্নিহিত উপশহরগুলোতে। তাঁদের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, পোশাকশ্রমিকেরা যেখানে মূলত মালিকের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন, সেখানে পরিবহনশ্রমিকেরা একই সঙ্গে চরম অমানবিকভাবে নিগৃহীত হন মালিক, যাত্রী, পুলিশ, চাঁদাবাজ ও অন্যান্য নানা অদৃশ্য ও দৃশ্যমান অংশীজনের দ্বারা। ফলে রাজধানীর আর সবাই মিলে জোট গঠন করেও যদি ঈদে ঢাকা শহরে থেকে যেতে রাজি হন, তাহলেও নিছক বাধ্য না হলে পরিবহনশ্রমিকদের কেউ ঢাকায় থাকতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কারণ এ শহর তাঁর গতরকেই শুধু ব্যবহার করে—তাঁকে কখনো মানুষ বলে গণ্য করে না। ফলে কেন তিনি ভাববেন যে ঢাকা তাঁর নিজের শহর?
ঢাকা শহরের ফুটপাতে যে হকাররা বসেন, এর বাসস্ট্যান্ড-স্টেশন-টার্মিনালে কুলিমজুরসহ যে ভাসমান মানুষেরা কাজ করেন, এর রাস্তাঘাটে যাঁরা ছিনতাই বা পকেট কাটার মতো কাজে নিয়োজিত আছেন, এর জনসভায় সমাগম বাড়ানোর জন্য যাঁরা ব্যবহৃত হন, দরপত্র ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সুযোগ লাভের বিনিময়ে যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের লাঠিয়াল বাহিনীর (অবশ্য আজকাল শুধু লাঠি নয়, আগ্নেয়াস্ত্র ও হেলমেট ব্যবহার করেন) সদস্য হিসেবে কাজ করেন, বিভিন্ন অফিস-আদালত ও রাজনৈতিক দলের অফিসে যাঁরা তদবিরকারক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটান, যাঁরা মানব পাচার ও আদম ব্যবসায়ের দালালির সঙ্গে যুক্ত—তাঁরা যতই বছরের পর বছর ঢাকা শহরে বসবাস করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই এ শহরকে তাঁর নিজের বলে ভাবেন না।
এর বাইরেও রয়েছে শিক্ষিত ও শিক্ষাবঞ্চিত চাকরি অনুসন্ধানী বেকার, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বড় সংখ্যার ছোট কর্মচারী, বস্তি-ফুটপাত-রেললাইনের পাশে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষ ইত্যাদি।
তাঁদের কেউই কি ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বলে ভাবেন বা তা ভাবার কোনো কারণ আছে? কস্মিনকালেও না। তাহলে ঢাকাকে আপন ভাবে কারা? সত্যি কথা বলতে কি, গত শতাব্দীর শেষনাগাদ গড়ে ওঠা স্বল্পসংখ্যার ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং এর পর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাতারাতি গড়ে ওঠা কালোটাকার বিত্তবান বণিক এবং অসৎ আমলা ও অসৎ রাজনীতিক ব্যতীত ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই একে তাঁর নিজের শহর বলে গণ্য করেন না। এরই মধ্যে আবার শেষোক্তদের অবৈধ সম্পদের দৌরাত্ম্যে প্রথমোক্ত শ্রেণির সীমিত সংখ্যার শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তও এখন অনেকটাই কোণঠাসা।
আর এমনি একটি অসুস্থ পরিবেশের ভেতর দিয়েই রাজধানীর বিকাশ ঘটছে বিধায় এর রক্ষণাবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, মানুষের মধ্যকার আন্তসম্পর্ক ও মূল্যবোধ কোনো কিছুই সুস্থ ধারায় এগোচ্ছে না বা এগোতে পারছে না। কারণ এসবের কোনোটিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের আন্তরিক সমর্থন বা অংশগ্রহণ নেই। ফলে যে ধারায় ঢাকা শহর এগোচ্ছে, তাতে পরিকল্পনাবিহীন সুউচ্চ ইমারত এবং বিদৃশ্য রাস্তাঘাট ওঅন্যান্যঅবকাঠামো মিলে এর ব্যাপক স্ফীতি ঘটছে বটে। কিন্তু সেই স্ফীতি কতটা আধুনিক ও টেকসই হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর এ কথা তো মানতেই হবে যে একটি আধুনিক শহর শুধু ভারী লোহালক্কড় দিয়েই গড়ে ওঠে না, এর জন্য প্রয়োজন উচ্চতর চিন্তা, রুচি, মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণসংবলিতএকটিশিক্ষিত আধুনিক নাগরিক সমাজ, যা গড়ে তুলতে সম্ভবত আমরা প্রায় পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছি এবং ব্যর্থতার সে গ্লানিময় ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিরা এর রাষ্ট্রকাঠামোর যে স্বপ্ন তাঁদের কল্পনায় এঁকেছিলেন, নিশ্চয় সেখানে একটি রাজধানীর কল্পনাও ছিল। হলফ করে বলতে পারি, এরূপ একটি রাজধানীর কল্পনা তাঁরা করেননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চরমভাবে বিধ্বস্ত এ ভৌতিক ও সামাজিক দুরবস্থা থেকে ঢাকা শহরকে বের করে আনার উপায় কী? অপ্রিয় সত্য মানতে আপত্তি না থাকলে স্বীকার করতেই হবে, ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে ন্যূনতম মানের একটি শহর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলা বা নিদেনপক্ষে যতটুকু ছিল, সেটুকু ফিরে পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারপরও আশা জিইয়ে রাখা যেতে পারে এ শর্তে যে, এই শহরের সব ভৌত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে এখানে বসবাসরত সব নাগরিকের অংশগ্রহণের ধারণাকে রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিষয়টি দাঁড়ায় এই, এই নগরীর পরিচালন ও উন্নয়নের সকল পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিক সাধারণের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও তাঁদের কাছে পরিচালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগ শুধু ভৌত উন্নয়নের জন্য করলেই হবে না, একই সঙ্গে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা সমাজগঠন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্যও করতে হবে। আর তা করতে না পারলে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার পঙ্ক্তি অনুসরণে আমাদের হয়তো এ কষ্টময় উচ্চারণই বারবার করতে হবে যে ‘এ শহর আমার নয়’।

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক। শেষ পর্যন্ত কত লোক ঢাকা ছেড়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এআরআইয়ের দেওয়া সংখ্যার কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে। তো সে সংখ্যা সামান্য কম-বেশি যা হোক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত এই ১ কোটি ২০ লাখ লোক বা ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ কেন যানবাহন ও যাতায়াত-পথের এত কষ্ট, দুর্ভোগ ও হয়রানি সহ্য করেও মাত্র তিন-চার দিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রাণান্ত ‘যুদ্ধে’ নিজেদের প্রায় উৎসর্গ করে দিচ্ছেন? অথচ ঢাকা ত্যাগকারী এ মানুষদের প্রত্যেকেই জানেন, ঈদ পার হতে না হতেই তাঁদের আবার আরেক দফা ফিরতি যুদ্ধে নামতে হবে বসবাস-অযোগ্য ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। তাহলে মাত্র তিন-চারটি দিন গ্রামের বাড়িতে কাটানোর জন্য কেন তাঁদের এ প্রাণান্ত প্রয়াস?
একেবারে প্রথম কথা হচ্ছে, এই মানুষদের প্রায় কেউই ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বা আপনস্থান বলে ভাবেন না। মৌসুমি কৃষিশ্রমিক যেমন মজুর ভিত্তিতে ধান কাটার জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এসে কাজ শেষে মজুরি নিয়ে দ্রুত নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চান, এ-ও অনেকটা তেমনি। ঢাকায় থাকা মানুষেরা চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া ও অন্য নানা কাজে তথা জীবিকার প্রয়োজনে নিছক বাধ্য হয়ে এখানে থাকছেন বটে। কিন্তু তাঁদের আত্মা কখনোই এ শহরকে ধারণ করতে পারেনি বা এ শহরও কখনো তাঁদের আপন করে নেয়নি। হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭), কবি শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বা শিল্পী মুর্তজা বশীরের (১৯৩২-২০২০) মতো দু-চারজনকে ঢাকা তার বুকে জায়গা দিলেও অধিকাংশকেই সে তা দেয়নি। ফলে এখানে কর্মরত মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে যতই এখানে বছরের পর বছর দিন কাটাক এবং এখানকার জল-হাওয়া যতই তাঁকে বাঁচার রসদ জোগাক, তিনি ভাবেন, এ শহর, এই শহরের দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, খাবারদাবার, নাচ-গান, কলকাকলি এসবের কিছুই তাঁর নয়। এমনকি যে কারখানা, অফিস, দোকান, ফুটপাত বা রাস্তাঘাটে তিনি কাজ করেন, সেসবের সঙ্গেও তাঁর কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই।
দিনের পর দিন এখানে বসবাস করা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তার মানুষদের একটি আত্মিক সম্পর্ক কেন গড়ে উঠতে পারল না অথবা তার বিপরীতে এমন একটি হৃদয়হীন অস্বাভাবিক সম্পর্ক কেন ও কীভাবে টিকে থাকল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রথমেই আসা যাক পোশাকশ্রমিকদের কথায়। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের সিংহভাগের কর্মস্থলই ঢাকা ও এর সন্নিহিত এলাকায়। এই শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের মালিকেরা যে আচরণ করেন, তাতে করে নিজ কর্মস্থলকে তাঁদের পক্ষে কখনোই আপন ভাবার কোনো কারণ নেই। ফলে শুধু ঈদে কেন, যেকোনো সময় তাঁরা ঢাকা ছাড়তে পারলেই বর্তে যান, কিন্তু পেটের দায়ে তা পারেন না। অন্য কারখানাগুলোর অবস্থা পোশাক খাতের মতো অতটা নাজুক না হলেও তাঁদের পক্ষেও ঢাকাকে আপন ভাবার কোনো কারণ নেই; বরং ভেতরে-ভেতরে এ শহরকে তাঁরাও প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, যে ঘৃণা ঈদের এক দিন আগপর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আরও বৃদ্ধি পায়। অতএব হেঁটে হলেও ঢাকার প্রতি ঘৃণা ছিটিয়ে ঈদে বাড়ি তিনি যাবেনই, যেমনটি গিয়েছিলেন করোনার সময়।
পেশা বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকের পর ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড়সংখ্যক মানুষ হচ্ছেন নিউমার্কেটের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হোসেন ও দোকান কর্মচারী মোহাম্মদ মোরসালিনের মতো খুবই সাধারণ পেশার মানুষেরা। মোরসালিনের মতো মানুষেরা ঈদের দু-এক দিন আগে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে ঈদের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানে কাজ করেন এবং কাজ শেষ করে ওই রাতেই লঞ্চে বা বাসে করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পাঠক বলুন, যে শহরের কর্মস্থল ঈদের আগের দিন বা আগের মাঝরাত পর্যন্ত কোনো বাড়তি প্রণোদনা বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তার কর্মচারীকে কাজে আটকে রাখে, সে শহরকে নাহিদ বা মোরসালিনেরা কোন যুক্তিতে আপন ভেবে ভালোবাসবেন? তারপরও যদি বেতনের পরিমাণটি উৎসাহব্যঞ্জক হতো, তাহলেও একটি কথা ছিল।
কিন্তু এর কোনো কিছুই তো তাঁকে এ ঢাকা শহরের প্রতি মমতাবান হয়ে উঠতে উৎসাহিত করতে পারছে না। শতভাগ নির্ভরযোগ্য না হলেও মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী দেশের গণপরিবহন খাতে সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক (চালক, সাহায্যকারী ও অন্যান্য) কাজ করেন, যাঁদের সিংহভাগই কর্মরত ঢাকা ও এর সন্নিহিত উপশহরগুলোতে। তাঁদের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, পোশাকশ্রমিকেরা যেখানে মূলত মালিকের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন, সেখানে পরিবহনশ্রমিকেরা একই সঙ্গে চরম অমানবিকভাবে নিগৃহীত হন মালিক, যাত্রী, পুলিশ, চাঁদাবাজ ও অন্যান্য নানা অদৃশ্য ও দৃশ্যমান অংশীজনের দ্বারা। ফলে রাজধানীর আর সবাই মিলে জোট গঠন করেও যদি ঈদে ঢাকা শহরে থেকে যেতে রাজি হন, তাহলেও নিছক বাধ্য না হলে পরিবহনশ্রমিকদের কেউ ঢাকায় থাকতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কারণ এ শহর তাঁর গতরকেই শুধু ব্যবহার করে—তাঁকে কখনো মানুষ বলে গণ্য করে না। ফলে কেন তিনি ভাববেন যে ঢাকা তাঁর নিজের শহর?
ঢাকা শহরের ফুটপাতে যে হকাররা বসেন, এর বাসস্ট্যান্ড-স্টেশন-টার্মিনালে কুলিমজুরসহ যে ভাসমান মানুষেরা কাজ করেন, এর রাস্তাঘাটে যাঁরা ছিনতাই বা পকেট কাটার মতো কাজে নিয়োজিত আছেন, এর জনসভায় সমাগম বাড়ানোর জন্য যাঁরা ব্যবহৃত হন, দরপত্র ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সুযোগ লাভের বিনিময়ে যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের লাঠিয়াল বাহিনীর (অবশ্য আজকাল শুধু লাঠি নয়, আগ্নেয়াস্ত্র ও হেলমেট ব্যবহার করেন) সদস্য হিসেবে কাজ করেন, বিভিন্ন অফিস-আদালত ও রাজনৈতিক দলের অফিসে যাঁরা তদবিরকারক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটান, যাঁরা মানব পাচার ও আদম ব্যবসায়ের দালালির সঙ্গে যুক্ত—তাঁরা যতই বছরের পর বছর ঢাকা শহরে বসবাস করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই এ শহরকে তাঁর নিজের বলে ভাবেন না।
এর বাইরেও রয়েছে শিক্ষিত ও শিক্ষাবঞ্চিত চাকরি অনুসন্ধানী বেকার, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বড় সংখ্যার ছোট কর্মচারী, বস্তি-ফুটপাত-রেললাইনের পাশে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষ ইত্যাদি।
তাঁদের কেউই কি ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বলে ভাবেন বা তা ভাবার কোনো কারণ আছে? কস্মিনকালেও না। তাহলে ঢাকাকে আপন ভাবে কারা? সত্যি কথা বলতে কি, গত শতাব্দীর শেষনাগাদ গড়ে ওঠা স্বল্পসংখ্যার ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং এর পর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাতারাতি গড়ে ওঠা কালোটাকার বিত্তবান বণিক এবং অসৎ আমলা ও অসৎ রাজনীতিক ব্যতীত ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই একে তাঁর নিজের শহর বলে গণ্য করেন না। এরই মধ্যে আবার শেষোক্তদের অবৈধ সম্পদের দৌরাত্ম্যে প্রথমোক্ত শ্রেণির সীমিত সংখ্যার শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তও এখন অনেকটাই কোণঠাসা।
আর এমনি একটি অসুস্থ পরিবেশের ভেতর দিয়েই রাজধানীর বিকাশ ঘটছে বিধায় এর রক্ষণাবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, মানুষের মধ্যকার আন্তসম্পর্ক ও মূল্যবোধ কোনো কিছুই সুস্থ ধারায় এগোচ্ছে না বা এগোতে পারছে না। কারণ এসবের কোনোটিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের আন্তরিক সমর্থন বা অংশগ্রহণ নেই। ফলে যে ধারায় ঢাকা শহর এগোচ্ছে, তাতে পরিকল্পনাবিহীন সুউচ্চ ইমারত এবং বিদৃশ্য রাস্তাঘাট ওঅন্যান্যঅবকাঠামো মিলে এর ব্যাপক স্ফীতি ঘটছে বটে। কিন্তু সেই স্ফীতি কতটা আধুনিক ও টেকসই হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর এ কথা তো মানতেই হবে যে একটি আধুনিক শহর শুধু ভারী লোহালক্কড় দিয়েই গড়ে ওঠে না, এর জন্য প্রয়োজন উচ্চতর চিন্তা, রুচি, মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণসংবলিতএকটিশিক্ষিত আধুনিক নাগরিক সমাজ, যা গড়ে তুলতে সম্ভবত আমরা প্রায় পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছি এবং ব্যর্থতার সে গ্লানিময় ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিরা এর রাষ্ট্রকাঠামোর যে স্বপ্ন তাঁদের কল্পনায় এঁকেছিলেন, নিশ্চয় সেখানে একটি রাজধানীর কল্পনাও ছিল। হলফ করে বলতে পারি, এরূপ একটি রাজধানীর কল্পনা তাঁরা করেননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চরমভাবে বিধ্বস্ত এ ভৌতিক ও সামাজিক দুরবস্থা থেকে ঢাকা শহরকে বের করে আনার উপায় কী? অপ্রিয় সত্য মানতে আপত্তি না থাকলে স্বীকার করতেই হবে, ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে ন্যূনতম মানের একটি শহর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলা বা নিদেনপক্ষে যতটুকু ছিল, সেটুকু ফিরে পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারপরও আশা জিইয়ে রাখা যেতে পারে এ শর্তে যে, এই শহরের সব ভৌত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে এখানে বসবাসরত সব নাগরিকের অংশগ্রহণের ধারণাকে রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিষয়টি দাঁড়ায় এই, এই নগরীর পরিচালন ও উন্নয়নের সকল পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিক সাধারণের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও তাঁদের কাছে পরিচালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগ শুধু ভৌত উন্নয়নের জন্য করলেই হবে না, একই সঙ্গে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা সমাজগঠন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্যও করতে হবে। আর তা করতে না পারলে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার পঙ্ক্তি অনুসরণে আমাদের হয়তো এ কষ্টময় উচ্চারণই বারবার করতে হবে যে ‘এ শহর আমার নয়’।
আবু তাহের খান

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক। শেষ পর্যন্ত কত লোক ঢাকা ছেড়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এআরআইয়ের দেওয়া সংখ্যার কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে। তো সে সংখ্যা সামান্য কম-বেশি যা হোক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত এই ১ কোটি ২০ লাখ লোক বা ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ কেন যানবাহন ও যাতায়াত-পথের এত কষ্ট, দুর্ভোগ ও হয়রানি সহ্য করেও মাত্র তিন-চার দিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রাণান্ত ‘যুদ্ধে’ নিজেদের প্রায় উৎসর্গ করে দিচ্ছেন? অথচ ঢাকা ত্যাগকারী এ মানুষদের প্রত্যেকেই জানেন, ঈদ পার হতে না হতেই তাঁদের আবার আরেক দফা ফিরতি যুদ্ধে নামতে হবে বসবাস-অযোগ্য ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। তাহলে মাত্র তিন-চারটি দিন গ্রামের বাড়িতে কাটানোর জন্য কেন তাঁদের এ প্রাণান্ত প্রয়াস?
একেবারে প্রথম কথা হচ্ছে, এই মানুষদের প্রায় কেউই ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বা আপনস্থান বলে ভাবেন না। মৌসুমি কৃষিশ্রমিক যেমন মজুর ভিত্তিতে ধান কাটার জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এসে কাজ শেষে মজুরি নিয়ে দ্রুত নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চান, এ-ও অনেকটা তেমনি। ঢাকায় থাকা মানুষেরা চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া ও অন্য নানা কাজে তথা জীবিকার প্রয়োজনে নিছক বাধ্য হয়ে এখানে থাকছেন বটে। কিন্তু তাঁদের আত্মা কখনোই এ শহরকে ধারণ করতে পারেনি বা এ শহরও কখনো তাঁদের আপন করে নেয়নি। হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭), কবি শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বা শিল্পী মুর্তজা বশীরের (১৯৩২-২০২০) মতো দু-চারজনকে ঢাকা তার বুকে জায়গা দিলেও অধিকাংশকেই সে তা দেয়নি। ফলে এখানে কর্মরত মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে যতই এখানে বছরের পর বছর দিন কাটাক এবং এখানকার জল-হাওয়া যতই তাঁকে বাঁচার রসদ জোগাক, তিনি ভাবেন, এ শহর, এই শহরের দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, খাবারদাবার, নাচ-গান, কলকাকলি এসবের কিছুই তাঁর নয়। এমনকি যে কারখানা, অফিস, দোকান, ফুটপাত বা রাস্তাঘাটে তিনি কাজ করেন, সেসবের সঙ্গেও তাঁর কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই।
দিনের পর দিন এখানে বসবাস করা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তার মানুষদের একটি আত্মিক সম্পর্ক কেন গড়ে উঠতে পারল না অথবা তার বিপরীতে এমন একটি হৃদয়হীন অস্বাভাবিক সম্পর্ক কেন ও কীভাবে টিকে থাকল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রথমেই আসা যাক পোশাকশ্রমিকদের কথায়। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের সিংহভাগের কর্মস্থলই ঢাকা ও এর সন্নিহিত এলাকায়। এই শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের মালিকেরা যে আচরণ করেন, তাতে করে নিজ কর্মস্থলকে তাঁদের পক্ষে কখনোই আপন ভাবার কোনো কারণ নেই। ফলে শুধু ঈদে কেন, যেকোনো সময় তাঁরা ঢাকা ছাড়তে পারলেই বর্তে যান, কিন্তু পেটের দায়ে তা পারেন না। অন্য কারখানাগুলোর অবস্থা পোশাক খাতের মতো অতটা নাজুক না হলেও তাঁদের পক্ষেও ঢাকাকে আপন ভাবার কোনো কারণ নেই; বরং ভেতরে-ভেতরে এ শহরকে তাঁরাও প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, যে ঘৃণা ঈদের এক দিন আগপর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আরও বৃদ্ধি পায়। অতএব হেঁটে হলেও ঢাকার প্রতি ঘৃণা ছিটিয়ে ঈদে বাড়ি তিনি যাবেনই, যেমনটি গিয়েছিলেন করোনার সময়।
পেশা বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকের পর ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড়সংখ্যক মানুষ হচ্ছেন নিউমার্কেটের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হোসেন ও দোকান কর্মচারী মোহাম্মদ মোরসালিনের মতো খুবই সাধারণ পেশার মানুষেরা। মোরসালিনের মতো মানুষেরা ঈদের দু-এক দিন আগে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে ঈদের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানে কাজ করেন এবং কাজ শেষ করে ওই রাতেই লঞ্চে বা বাসে করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পাঠক বলুন, যে শহরের কর্মস্থল ঈদের আগের দিন বা আগের মাঝরাত পর্যন্ত কোনো বাড়তি প্রণোদনা বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তার কর্মচারীকে কাজে আটকে রাখে, সে শহরকে নাহিদ বা মোরসালিনেরা কোন যুক্তিতে আপন ভেবে ভালোবাসবেন? তারপরও যদি বেতনের পরিমাণটি উৎসাহব্যঞ্জক হতো, তাহলেও একটি কথা ছিল।
কিন্তু এর কোনো কিছুই তো তাঁকে এ ঢাকা শহরের প্রতি মমতাবান হয়ে উঠতে উৎসাহিত করতে পারছে না। শতভাগ নির্ভরযোগ্য না হলেও মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী দেশের গণপরিবহন খাতে সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক (চালক, সাহায্যকারী ও অন্যান্য) কাজ করেন, যাঁদের সিংহভাগই কর্মরত ঢাকা ও এর সন্নিহিত উপশহরগুলোতে। তাঁদের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, পোশাকশ্রমিকেরা যেখানে মূলত মালিকের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন, সেখানে পরিবহনশ্রমিকেরা একই সঙ্গে চরম অমানবিকভাবে নিগৃহীত হন মালিক, যাত্রী, পুলিশ, চাঁদাবাজ ও অন্যান্য নানা অদৃশ্য ও দৃশ্যমান অংশীজনের দ্বারা। ফলে রাজধানীর আর সবাই মিলে জোট গঠন করেও যদি ঈদে ঢাকা শহরে থেকে যেতে রাজি হন, তাহলেও নিছক বাধ্য না হলে পরিবহনশ্রমিকদের কেউ ঢাকায় থাকতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কারণ এ শহর তাঁর গতরকেই শুধু ব্যবহার করে—তাঁকে কখনো মানুষ বলে গণ্য করে না। ফলে কেন তিনি ভাববেন যে ঢাকা তাঁর নিজের শহর?
ঢাকা শহরের ফুটপাতে যে হকাররা বসেন, এর বাসস্ট্যান্ড-স্টেশন-টার্মিনালে কুলিমজুরসহ যে ভাসমান মানুষেরা কাজ করেন, এর রাস্তাঘাটে যাঁরা ছিনতাই বা পকেট কাটার মতো কাজে নিয়োজিত আছেন, এর জনসভায় সমাগম বাড়ানোর জন্য যাঁরা ব্যবহৃত হন, দরপত্র ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সুযোগ লাভের বিনিময়ে যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের লাঠিয়াল বাহিনীর (অবশ্য আজকাল শুধু লাঠি নয়, আগ্নেয়াস্ত্র ও হেলমেট ব্যবহার করেন) সদস্য হিসেবে কাজ করেন, বিভিন্ন অফিস-আদালত ও রাজনৈতিক দলের অফিসে যাঁরা তদবিরকারক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটান, যাঁরা মানব পাচার ও আদম ব্যবসায়ের দালালির সঙ্গে যুক্ত—তাঁরা যতই বছরের পর বছর ঢাকা শহরে বসবাস করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই এ শহরকে তাঁর নিজের বলে ভাবেন না।
এর বাইরেও রয়েছে শিক্ষিত ও শিক্ষাবঞ্চিত চাকরি অনুসন্ধানী বেকার, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বড় সংখ্যার ছোট কর্মচারী, বস্তি-ফুটপাত-রেললাইনের পাশে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষ ইত্যাদি।
তাঁদের কেউই কি ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বলে ভাবেন বা তা ভাবার কোনো কারণ আছে? কস্মিনকালেও না। তাহলে ঢাকাকে আপন ভাবে কারা? সত্যি কথা বলতে কি, গত শতাব্দীর শেষনাগাদ গড়ে ওঠা স্বল্পসংখ্যার ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং এর পর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাতারাতি গড়ে ওঠা কালোটাকার বিত্তবান বণিক এবং অসৎ আমলা ও অসৎ রাজনীতিক ব্যতীত ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই একে তাঁর নিজের শহর বলে গণ্য করেন না। এরই মধ্যে আবার শেষোক্তদের অবৈধ সম্পদের দৌরাত্ম্যে প্রথমোক্ত শ্রেণির সীমিত সংখ্যার শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তও এখন অনেকটাই কোণঠাসা।
আর এমনি একটি অসুস্থ পরিবেশের ভেতর দিয়েই রাজধানীর বিকাশ ঘটছে বিধায় এর রক্ষণাবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, মানুষের মধ্যকার আন্তসম্পর্ক ও মূল্যবোধ কোনো কিছুই সুস্থ ধারায় এগোচ্ছে না বা এগোতে পারছে না। কারণ এসবের কোনোটিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের আন্তরিক সমর্থন বা অংশগ্রহণ নেই। ফলে যে ধারায় ঢাকা শহর এগোচ্ছে, তাতে পরিকল্পনাবিহীন সুউচ্চ ইমারত এবং বিদৃশ্য রাস্তাঘাট ওঅন্যান্যঅবকাঠামো মিলে এর ব্যাপক স্ফীতি ঘটছে বটে। কিন্তু সেই স্ফীতি কতটা আধুনিক ও টেকসই হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর এ কথা তো মানতেই হবে যে একটি আধুনিক শহর শুধু ভারী লোহালক্কড় দিয়েই গড়ে ওঠে না, এর জন্য প্রয়োজন উচ্চতর চিন্তা, রুচি, মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণসংবলিতএকটিশিক্ষিত আধুনিক নাগরিক সমাজ, যা গড়ে তুলতে সম্ভবত আমরা প্রায় পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছি এবং ব্যর্থতার সে গ্লানিময় ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিরা এর রাষ্ট্রকাঠামোর যে স্বপ্ন তাঁদের কল্পনায় এঁকেছিলেন, নিশ্চয় সেখানে একটি রাজধানীর কল্পনাও ছিল। হলফ করে বলতে পারি, এরূপ একটি রাজধানীর কল্পনা তাঁরা করেননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চরমভাবে বিধ্বস্ত এ ভৌতিক ও সামাজিক দুরবস্থা থেকে ঢাকা শহরকে বের করে আনার উপায় কী? অপ্রিয় সত্য মানতে আপত্তি না থাকলে স্বীকার করতেই হবে, ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে ন্যূনতম মানের একটি শহর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলা বা নিদেনপক্ষে যতটুকু ছিল, সেটুকু ফিরে পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারপরও আশা জিইয়ে রাখা যেতে পারে এ শর্তে যে, এই শহরের সব ভৌত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে এখানে বসবাসরত সব নাগরিকের অংশগ্রহণের ধারণাকে রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিষয়টি দাঁড়ায় এই, এই নগরীর পরিচালন ও উন্নয়নের সকল পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিক সাধারণের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও তাঁদের কাছে পরিচালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগ শুধু ভৌত উন্নয়নের জন্য করলেই হবে না, একই সঙ্গে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা সমাজগঠন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্যও করতে হবে। আর তা করতে না পারলে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার পঙ্ক্তি অনুসরণে আমাদের হয়তো এ কষ্টময় উচ্চারণই বারবার করতে হবে যে ‘এ শহর আমার নয়’।

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক। শেষ পর্যন্ত কত লোক ঢাকা ছেড়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এআরআইয়ের দেওয়া সংখ্যার কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে। তো সে সংখ্যা সামান্য কম-বেশি যা হোক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত এই ১ কোটি ২০ লাখ লোক বা ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ কেন যানবাহন ও যাতায়াত-পথের এত কষ্ট, দুর্ভোগ ও হয়রানি সহ্য করেও মাত্র তিন-চার দিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রাণান্ত ‘যুদ্ধে’ নিজেদের প্রায় উৎসর্গ করে দিচ্ছেন? অথচ ঢাকা ত্যাগকারী এ মানুষদের প্রত্যেকেই জানেন, ঈদ পার হতে না হতেই তাঁদের আবার আরেক দফা ফিরতি যুদ্ধে নামতে হবে বসবাস-অযোগ্য ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। তাহলে মাত্র তিন-চারটি দিন গ্রামের বাড়িতে কাটানোর জন্য কেন তাঁদের এ প্রাণান্ত প্রয়াস?
একেবারে প্রথম কথা হচ্ছে, এই মানুষদের প্রায় কেউই ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বা আপনস্থান বলে ভাবেন না। মৌসুমি কৃষিশ্রমিক যেমন মজুর ভিত্তিতে ধান কাটার জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এসে কাজ শেষে মজুরি নিয়ে দ্রুত নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চান, এ-ও অনেকটা তেমনি। ঢাকায় থাকা মানুষেরা চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া ও অন্য নানা কাজে তথা জীবিকার প্রয়োজনে নিছক বাধ্য হয়ে এখানে থাকছেন বটে। কিন্তু তাঁদের আত্মা কখনোই এ শহরকে ধারণ করতে পারেনি বা এ শহরও কখনো তাঁদের আপন করে নেয়নি। হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭), কবি শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বা শিল্পী মুর্তজা বশীরের (১৯৩২-২০২০) মতো দু-চারজনকে ঢাকা তার বুকে জায়গা দিলেও অধিকাংশকেই সে তা দেয়নি। ফলে এখানে কর্মরত মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে যতই এখানে বছরের পর বছর দিন কাটাক এবং এখানকার জল-হাওয়া যতই তাঁকে বাঁচার রসদ জোগাক, তিনি ভাবেন, এ শহর, এই শহরের দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, খাবারদাবার, নাচ-গান, কলকাকলি এসবের কিছুই তাঁর নয়। এমনকি যে কারখানা, অফিস, দোকান, ফুটপাত বা রাস্তাঘাটে তিনি কাজ করেন, সেসবের সঙ্গেও তাঁর কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই।
দিনের পর দিন এখানে বসবাস করা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তার মানুষদের একটি আত্মিক সম্পর্ক কেন গড়ে উঠতে পারল না অথবা তার বিপরীতে এমন একটি হৃদয়হীন অস্বাভাবিক সম্পর্ক কেন ও কীভাবে টিকে থাকল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রথমেই আসা যাক পোশাকশ্রমিকদের কথায়। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের সিংহভাগের কর্মস্থলই ঢাকা ও এর সন্নিহিত এলাকায়। এই শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের মালিকেরা যে আচরণ করেন, তাতে করে নিজ কর্মস্থলকে তাঁদের পক্ষে কখনোই আপন ভাবার কোনো কারণ নেই। ফলে শুধু ঈদে কেন, যেকোনো সময় তাঁরা ঢাকা ছাড়তে পারলেই বর্তে যান, কিন্তু পেটের দায়ে তা পারেন না। অন্য কারখানাগুলোর অবস্থা পোশাক খাতের মতো অতটা নাজুক না হলেও তাঁদের পক্ষেও ঢাকাকে আপন ভাবার কোনো কারণ নেই; বরং ভেতরে-ভেতরে এ শহরকে তাঁরাও প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, যে ঘৃণা ঈদের এক দিন আগপর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আরও বৃদ্ধি পায়। অতএব হেঁটে হলেও ঢাকার প্রতি ঘৃণা ছিটিয়ে ঈদে বাড়ি তিনি যাবেনই, যেমনটি গিয়েছিলেন করোনার সময়।
পেশা বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকের পর ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড়সংখ্যক মানুষ হচ্ছেন নিউমার্কেটের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হোসেন ও দোকান কর্মচারী মোহাম্মদ মোরসালিনের মতো খুবই সাধারণ পেশার মানুষেরা। মোরসালিনের মতো মানুষেরা ঈদের দু-এক দিন আগে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে ঈদের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানে কাজ করেন এবং কাজ শেষ করে ওই রাতেই লঞ্চে বা বাসে করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পাঠক বলুন, যে শহরের কর্মস্থল ঈদের আগের দিন বা আগের মাঝরাত পর্যন্ত কোনো বাড়তি প্রণোদনা বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তার কর্মচারীকে কাজে আটকে রাখে, সে শহরকে নাহিদ বা মোরসালিনেরা কোন যুক্তিতে আপন ভেবে ভালোবাসবেন? তারপরও যদি বেতনের পরিমাণটি উৎসাহব্যঞ্জক হতো, তাহলেও একটি কথা ছিল।
কিন্তু এর কোনো কিছুই তো তাঁকে এ ঢাকা শহরের প্রতি মমতাবান হয়ে উঠতে উৎসাহিত করতে পারছে না। শতভাগ নির্ভরযোগ্য না হলেও মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী দেশের গণপরিবহন খাতে সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক (চালক, সাহায্যকারী ও অন্যান্য) কাজ করেন, যাঁদের সিংহভাগই কর্মরত ঢাকা ও এর সন্নিহিত উপশহরগুলোতে। তাঁদের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, পোশাকশ্রমিকেরা যেখানে মূলত মালিকের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন, সেখানে পরিবহনশ্রমিকেরা একই সঙ্গে চরম অমানবিকভাবে নিগৃহীত হন মালিক, যাত্রী, পুলিশ, চাঁদাবাজ ও অন্যান্য নানা অদৃশ্য ও দৃশ্যমান অংশীজনের দ্বারা। ফলে রাজধানীর আর সবাই মিলে জোট গঠন করেও যদি ঈদে ঢাকা শহরে থেকে যেতে রাজি হন, তাহলেও নিছক বাধ্য না হলে পরিবহনশ্রমিকদের কেউ ঢাকায় থাকতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কারণ এ শহর তাঁর গতরকেই শুধু ব্যবহার করে—তাঁকে কখনো মানুষ বলে গণ্য করে না। ফলে কেন তিনি ভাববেন যে ঢাকা তাঁর নিজের শহর?
ঢাকা শহরের ফুটপাতে যে হকাররা বসেন, এর বাসস্ট্যান্ড-স্টেশন-টার্মিনালে কুলিমজুরসহ যে ভাসমান মানুষেরা কাজ করেন, এর রাস্তাঘাটে যাঁরা ছিনতাই বা পকেট কাটার মতো কাজে নিয়োজিত আছেন, এর জনসভায় সমাগম বাড়ানোর জন্য যাঁরা ব্যবহৃত হন, দরপত্র ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সুযোগ লাভের বিনিময়ে যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের লাঠিয়াল বাহিনীর (অবশ্য আজকাল শুধু লাঠি নয়, আগ্নেয়াস্ত্র ও হেলমেট ব্যবহার করেন) সদস্য হিসেবে কাজ করেন, বিভিন্ন অফিস-আদালত ও রাজনৈতিক দলের অফিসে যাঁরা তদবিরকারক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটান, যাঁরা মানব পাচার ও আদম ব্যবসায়ের দালালির সঙ্গে যুক্ত—তাঁরা যতই বছরের পর বছর ঢাকা শহরে বসবাস করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই এ শহরকে তাঁর নিজের বলে ভাবেন না।
এর বাইরেও রয়েছে শিক্ষিত ও শিক্ষাবঞ্চিত চাকরি অনুসন্ধানী বেকার, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বড় সংখ্যার ছোট কর্মচারী, বস্তি-ফুটপাত-রেললাইনের পাশে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষ ইত্যাদি।
তাঁদের কেউই কি ঢাকাকে তাঁর নিজের শহর বলে ভাবেন বা তা ভাবার কোনো কারণ আছে? কস্মিনকালেও না। তাহলে ঢাকাকে আপন ভাবে কারা? সত্যি কথা বলতে কি, গত শতাব্দীর শেষনাগাদ গড়ে ওঠা স্বল্পসংখ্যার ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং এর পর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাতারাতি গড়ে ওঠা কালোটাকার বিত্তবান বণিক এবং অসৎ আমলা ও অসৎ রাজনীতিক ব্যতীত ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই একে তাঁর নিজের শহর বলে গণ্য করেন না। এরই মধ্যে আবার শেষোক্তদের অবৈধ সম্পদের দৌরাত্ম্যে প্রথমোক্ত শ্রেণির সীমিত সংখ্যার শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তও এখন অনেকটাই কোণঠাসা।
আর এমনি একটি অসুস্থ পরিবেশের ভেতর দিয়েই রাজধানীর বিকাশ ঘটছে বিধায় এর রক্ষণাবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, মানুষের মধ্যকার আন্তসম্পর্ক ও মূল্যবোধ কোনো কিছুই সুস্থ ধারায় এগোচ্ছে না বা এগোতে পারছে না। কারণ এসবের কোনোটিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের আন্তরিক সমর্থন বা অংশগ্রহণ নেই। ফলে যে ধারায় ঢাকা শহর এগোচ্ছে, তাতে পরিকল্পনাবিহীন সুউচ্চ ইমারত এবং বিদৃশ্য রাস্তাঘাট ওঅন্যান্যঅবকাঠামো মিলে এর ব্যাপক স্ফীতি ঘটছে বটে। কিন্তু সেই স্ফীতি কতটা আধুনিক ও টেকসই হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর এ কথা তো মানতেই হবে যে একটি আধুনিক শহর শুধু ভারী লোহালক্কড় দিয়েই গড়ে ওঠে না, এর জন্য প্রয়োজন উচ্চতর চিন্তা, রুচি, মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণসংবলিতএকটিশিক্ষিত আধুনিক নাগরিক সমাজ, যা গড়ে তুলতে সম্ভবত আমরা প্রায় পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছি এবং ব্যর্থতার সে গ্লানিময় ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিরা এর রাষ্ট্রকাঠামোর যে স্বপ্ন তাঁদের কল্পনায় এঁকেছিলেন, নিশ্চয় সেখানে একটি রাজধানীর কল্পনাও ছিল। হলফ করে বলতে পারি, এরূপ একটি রাজধানীর কল্পনা তাঁরা করেননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চরমভাবে বিধ্বস্ত এ ভৌতিক ও সামাজিক দুরবস্থা থেকে ঢাকা শহরকে বের করে আনার উপায় কী? অপ্রিয় সত্য মানতে আপত্তি না থাকলে স্বীকার করতেই হবে, ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে ন্যূনতম মানের একটি শহর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলা বা নিদেনপক্ষে যতটুকু ছিল, সেটুকু ফিরে পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারপরও আশা জিইয়ে রাখা যেতে পারে এ শর্তে যে, এই শহরের সব ভৌত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে এখানে বসবাসরত সব নাগরিকের অংশগ্রহণের ধারণাকে রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিষয়টি দাঁড়ায় এই, এই নগরীর পরিচালন ও উন্নয়নের সকল পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিক সাধারণের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও তাঁদের কাছে পরিচালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগ শুধু ভৌত উন্নয়নের জন্য করলেই হবে না, একই সঙ্গে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা সমাজগঠন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্যও করতে হবে। আর তা করতে না পারলে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার পঙ্ক্তি অনুসরণে আমাদের হয়তো এ কষ্টময় উচ্চারণই বারবার করতে হবে যে ‘এ শহর আমার নয়’।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক।
১০ মে ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক।
১০ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক।
১০ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ঈদের অব্যবহিত আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল যে এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ঢাকা ছেড়ে যাবে, যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক।
১০ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫