Ajker Patrika

সংস্কারকাজ শেষের আগেই টাইলসে ফাটল, ইট নড়বড়ে

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫১
সংস্কারকাজ শেষের আগেই টাইলসে ফাটল, ইট নড়বড়ে

প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের গেট উঁচু হওয়ায় যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে বেগ পেতে হয়। বিশেষ করে নারী, বয়স্ক, শিশু যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে ভোগান্তি হয় বেশি। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্ম উঁচু করেছে। আগের প্ল্যাটফর্ম ছিল মোজাইকের। এখন প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হচ্ছে আরসিসি ঢালাই, পেপার ব্রিক (ইট) ও টাইলস বসিয়ে। এ ক্ষেত্রে কাজটি টেকসই হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগেই অনেক জায়গায় টাইলস ফেটে গেছে। কিছু জায়গায় টাইলস উঠেও গেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোজাইক করা ফ্লোর বেশি দিন টেকসই হয়। এর এমন কোনো মেইনটেন্যান্সও লাগে না। কিন্তু টাইলস বা ইট দিয়ে করা ফ্লোর মোজাইকের মতো টেকসই হয় না।     

ইট দিয়ে করলে নিয়মিত মেইনটেন্যান্স লাগে।’ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দেশের ৫৪টি স্টেশন আধুনিকায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারই অংশ হিসেবে কমলাপুর রেলস্টেশনও উঁচু করা হচ্ছে। গত বছরের মে মাসে স্টেশনের চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার কাজ শুরু হয়। প্রগতি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। আগামী এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় পরীক্ষামূলকভাবে এখানে আধুনিক ইট ও টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশন সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনে সাতটি প্ল্যাটফর্ম আছে। এগুলো থেকে আন্তনগরসহ অন্যান্য ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনের জন্য দুটি প্ল্যাটফর্ম আছে এই স্টেশনে। মূল সাতটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে এক, ছয় ও সাত নম্বর প্ল্যাটফর্ম ঢালাই করা। দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম মোজাইকের। চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম উঁচু করতে বসানো হচ্ছে ইট ও টাইলস। এই স্টেশনে মাটি থেকে প্ল্যাটফর্মের বর্তমান উচ্চতা ১৭ ইঞ্চি। ট্রেনের দরজা পর্যন্ত উঁচু করতে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা আরও ৯ ইঞ্চি বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আরসিসির ঢালাই করা হয়েছে। তার ওপর সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ দিয়ে বসানো হচ্ছে ইট। প্ল্যাটফর্মের দুই পাশে দেওয়া হয়েছে টাইলস। তবে বসানো ইটগুলোর মধ্যে সামান্য ফাঁক থেকে যাচ্ছে। ফলে মালামাল নিয়ে ট্রলি টানার সময় শব্দ হচ্ছে। এরই মধ্যে ফাঁক বেড়ে অনেক ইট নড়বড়ে হয় গেছে। নতুন টাইলসও ভেঙে গেছে অনেক জায়গায়। কিছু জায়গায় টাইলস উঠে গেছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ১৭৪ নম্বর কুলি মো. শামিম আলি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন উঁচু করা প্ল্যাটফর্মে মালামাল নিয়ে ট্রলি টানতে অসুবিধা হয়। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে টাইলসে ট্রলি নিয়ে যেতে গিয়ে পিছলে যেতে হচ্ছে। ট্রলির চাকার ধাক্কায়, যাত্রীদের লাগেজের ধাক্কায় অনেক জায়গায় টাইলস ভেঙে গেছে। ট্রলি টানলে অনেক শব্দ হয়। এর চেয়ে মোজাইকের প্ল্যাটফর্ম অনেক ভালো।’

স্টেশনের ঝাড়ুদার শিমলা দাস বলেন, ‘নতুন প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের চলাচলে ধুলা হচ্ছে বেশি। ঘন ঘন ঝাড়ু দিতে হচ্ছে। কিন্তু মোজাইকে বেশি ঝাড়ু দিতে হয় না।’ কাজের মানের বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের আরেক অধ্যাপক শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাজের নান্দনিকতা আনতে গিয়ে এই ধরনের ইট ও টাইলস ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্ল্যাটফর্মের মতো জায়গায় যেখানে ট্রলিতে মালামাল টানা হয়, সেখানে এসব বসানো ঠিক হয়নি। যেখানে টেকসই উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি আমরা, সেখানে কাজের আগেই যদি ভেঙে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ডিজাইনে গন্ডগোল আছে। কিংবা সেখানে মানহীন কিছু দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘কমলাপুরের দুটি প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষামূলকভাবে ইট দিয়ে করে দেখা হচ্ছে। তবে অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো মোজাইকের করা হয়েছে। মোজাইকের কিছু সমস্যাও আছে, ময়লা হলে মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। বৃষ্টি হলে পিচ্ছিল হয়ে যায়। কিন্তু ইটের ক্ষেত্রে ময়লা হলে ব্রাশিং করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। তা ছাড়া মোজাইক করতে অনেক সময় লাগে। একবারে নতুন প্ল্যাটফর্মে এটা করা সম্ভব। কিন্তু চলমান প্ল্যাটফর্মগুলোতে মোজাইক করা একটু কঠিন। তবে মোজাইক নিঃসন্দেহে ভালো। সে জন্য কমলাপুরের অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে মোজাইক করা হবে।’

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘নতুন প্ল্যাটফর্মের যা সমস্যা আছে, রেক্টিফাই (ঠিক করা) করব। তবে মোজাইক করা অনেক কঠিন ও অনেক সময়সাপেক্ষ।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘উন্নয়নের নামে লুটপাট করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমন উন্নয়ন মানুষের কাজে লাগছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যায়ে কোথাও দায়বদ্ধতা নেই, দেখারও কেউ নেই। নিজের লোকজন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে সুযোগ-সুবিধা। তাদের ব্যক্তিগত পকেটে যাচ্ছে টাকা।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত