সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধকালে সমাজতন্ত্রের কথা শোনা গিয়েছিল। যুদ্ধের আগেও, উনসত্তরের সময়েই, জাতীয়তাবাদী নেতারাও সমাজতন্ত্রের পক্ষে বলাবলি শুরু করেছিলেন; অর্থাৎ বাধ্য হয়েছিলেন বলতে। উদ্দেশ্য, আন্দোলনরত মানুষকে নিজেদের বেষ্টনীর ভেতর ধরে রাখা। নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি থাকবে, সেটাও ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক; উজ্জ্বল অক্ষরে সেটা লেখাও হয়েছিল। কিন্তু যতই সময় পার হতে থাকল, ততই অনেকটা প্রভাত কাটিয়ে ভরদুপুরের আগমনের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠল এই সত্য যে, রাষ্ট্র ধরেছে পুরোনো পথ, চলেছে সেই পুঁজিবাদী ধারাতেই।
প্রথমে একটু ইতস্তত করেছে, তারপর মহা উৎসাহে, প্রবল প্রতাপে এবং ক্রমবর্ধমান বিক্রমে এগিয়ে গেছে ব্যক্তিমালিকানার সড়ক ধরে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমাজতন্ত্রের জন্য কোনো সম্ভাবনাই নেই। সমাজে মধ্যবর্তী স্তরটা বসে যাবে। ভাগ হয়ে যাবে শিক্ষার পৃথিবী দুই ভাগে; এক পাশে ইংরেজি মাধ্যম, অন্য পাশে মাদ্রাসা। বাংলামাধ্যম দেবে যাচ্ছে, আরও দাববে।
কিন্তু এমনটা যে ঘটবে, কেউ কি কখনো ভেবেছিল? বাংলাদেশের অভ্যুদয় ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রেরণা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়েছে ঠিকই, না হয়ে উপায় ছিল না, কিন্তু রাষ্ট্রের ভাষা হয়নি। স্বপ্ন ছিল একটি অভিন্ন শিক্ষাধারা গড়ে তোলার; সেই স্বপ্ন কুপোকাত হয়ে স্বাপ্নিকদের লজ্জা দিচ্ছে। সবকিছুই ঘটল একটি কারণে। সেটি হলো সমাজতন্ত্রীদের অকৃতকার্যতা। মুক্তির সংগ্রামে জাতীয়তাবাদীরা ছিলেন, সমাজতন্ত্রীরাও ছিলেন; সমাজতন্ত্রীরাই ছিলেন মূল শক্তি, তাঁরাই আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু নেতৃত্বে থাকতে পারেননি। নেতৃত্ব চলে গেছে জাতীয়তাবাদীদের হাতে।
জাতীয়তাবাদীরা মুখে যা-ই বলুন বা বলতে বাধ্য হন, ভেতরে তাঁরা পুঁজিবাদী, তাঁদের বিশ্বাস তখন যেমন ছিল, এখনো তেমনি রয়ে গেছে ব্যক্তিমালিকানাতেই। বক্তৃতায়, বিবৃতিতে, আওয়াজে সমষ্টির কথা বললেও স্বাধীনতা তাঁদের জন্য ব্যক্তিগত সুখ আনবে—এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। স্বাধীনতা পেয়ে তাঁরা ব্যক্তিমালিকানার লাইনে চলা অক্ষুণ্ন রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই তাঁরা করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত হয়নি; মুক্ত হয়েছে পুঁজিবাদ এবং সে তার দৌরাত্ম্য চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রবল দুর্বলকে যে হটিয়ে দেবে, এটা অনিবার্য।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভালো করছিল। আমাদের খেলোয়াড়েরা ইতিমধ্যেই বিশ্বমাপে উন্নীত হয়েছেন। জাতির জন্য তাঁরা গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু অবস্থানটা ধরে রাখতে পারছেন কি? পারছেন না। কারণ, পুঁজিবাদ সেখানেও ঢুকে পড়েছে। জানা গেছে, আমাদের খেলোয়াড়েরা কেউ কেউ অত্যন্ত বেশি টাকা উপার্জন করেন। তাঁদের বাজার-দর খুবই চড়া। অন্যরা অতটা দাম পান না এবং নিজেদের বঞ্চিত জ্ঞান করেন। এর মধ্যে ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা বোর্ডের আয়-রোজগারও বেশ ভালো। বোর্ড নাকি খেলোয়াড়দের যা প্রাপ্য, তা দেয় না। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই তাই অসন্তুষ্ট। এসব প্রভাব স্বভাবতই গিয়ে পড়ছে খেলার মানের ওপর।
অনেক হইচই করে কতবার দেশের বাইরে খেলতে গিয়ে বড়মাপের অসম্মান ঘাড়ে নিয়ে তাঁরা ফিরেছেন! জাতীয় সম্মানবোধের যে চেতনা নিয়ে তাঁরা যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটা এখন যে আর অক্ষত নেই—তা পরিষ্কার বোঝা যায়। তাঁদের ঐক্য এখন আর অনড় নয়, ঐক্যের ভেতরে ব্যক্তিস্বার্থের অন্তর্ঘাত চলছে। সবকিছু ভাঙছে, খেলোয়াড়দের দেশপ্রেম কেন ভাঙবে না?
সবাই সর্বক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা করে—আমি কী পেলাম? পেতে চায়, দিতে ভুলে গেছে। অথচ দিয়েছে তো। প্রাণ দিয়েছে মুক্তিসংগ্রামে। শুরুটা যার অনেক আগে, একটা পরিণতি একাত্তরে। একাত্তরের মুক্তির সুফল এখন ব্যবসায়ীদের হাতে এবং ব্যবসায়ের অধীনে চলে গেছে রাজনীতি। রাজনীতির লোকেরা যখন একাত্তরের কথা খুব জোরে জোরে বলেন, তখন সন্দেহ হয় ভেতরটা শূন্য এবং তালটা মুনাফার। পণ্য হিসেবে একাত্তরকে ব্যবহার করছেন। একাত্তরের চেতনাটা ছিল সমাজবিপ্লবের; সেটাকে ঢেকে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা একাত্তরের শহীদদের ও যোদ্ধাদের অপমান করা বৈকি। বুঝুন আর না-ই বুঝুন, ওই কাজটা যাঁরা করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য মুনাফার লোভই, অন্য কিছু নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অত্যন্ত বড় ও প্রথম আয়োজনে যে ঘুষ দেওয়ার প্রচলন ঘটে সেটা হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট প্রদান। ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরিতে উন্নতি, পারমিট লাইসেন্স হাতিয়ে নেওয়া, চাকরিপ্রাপ্তি, সম্পত্তি জবরদখল, প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করা, সব চলতে থাকল। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা কেউই সার্টিফিকেট লাভের আশার দ্বারা চালিত হননি। তাগিদটা ছিল পুরোপুরি দেশপ্রেমিক, সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা চালু করে দেশের প্রতি ওই প্রেমকে পরিণত করার চেষ্টা হলো মুনাফালিপ্সায়। সুযোগ করে দেওয়া হলো ওই হস্তগতকরণকে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই বঞ্চিত হলেন। শত শত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দেখা গেল। উড়ে এল। জুড়ে বসল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা করা, সেই কোটাকে পুত্র-কন্যা এবং পরে নাতি-পুতিদের পর্যন্ত প্রসারিত করে দিয়ে যুদ্ধের প্রতি কেবল যে অসম্মান প্রদর্শনের স্থায়ী আয়োজন তৈরি করা হলো তা-ই নয়, বঞ্চিতদের মনে যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্বেষ উৎপাদনের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুতও হয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, ভাতা বৃদ্ধি, জাল সার্টিফিকেট তৈরি—সবকিছুর মধ্য দিয়েই পরিমাপ ঘটতে থাকল মুক্তিযুদ্ধের সমাজবিপ্লবী চেতনা থেকে রাষ্ট্রের সরে যাওয়ার।
রাষ্ট্রের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল হানাদার শয়তানদের বিচার। নিকৃষ্টতম অপরাধী হিসেবে ১৯৫ জনকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র তাদের বিচার করতে পারল না। অপরাধীরা সবাই চলে গেল তাদের দেশে। এত বড় অপরাধের যখন বিচার হলো না, তখন আশঙ্কা করা স্বাভাবিক হলো যে এই রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার পাওয়াটা সহজ হবে না। পরে প্রমাণিত হয়েছে যে আশঙ্কাটা অমূলক ছিল না।
আমাদের এই রাষ্ট্র পুঁজিবাদী। বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক প্রান্তে তার অনাত্মসচেতন অবস্থান; পুঁজিবাদের গুণগুলো যেমন-তেমন, পুঁজিবাদের যত দোষ আছে সবকটিই সে আত্মস্থ করে ফেলেছে এবং ক্রমবর্ধমান গতিতে বিকশিত করে চলছে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা অসংশোধনীয়রূপে পিতৃতান্ত্রিক; যে জন্য এই ব্যবস্থায় নারীরা নিরাপত্তা পান না এবং নানাভাবে লাঞ্ছিত হন। পদে পদে তাঁদের বিপদ। গৃহে সহিংসতা, পরিবহনে হয়রানি। একাধিক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের নারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৯৮ জন উন্মুক্ত জায়গায় হয়রানির শিকার হন। তাঁরা এখন গায়ে বোরকা চাপিয়ে, হিজাবে চেহারা লুকিয়ে রেখেও রক্ষা পান না।
তাহলে ভরসা কোথায়? একটা ভরসা এই যে দুষ্ট লোকেরা যতই ক্ষমতাবান হোক, ভালো মানুষেরাও আছেন এবং তাঁদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু ভালো মানুষেরা তো দুর্বল, তাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁরা বিচ্ছিন্ন, একাকী এবং গোটা ব্যবস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে। কর্তৃত্ব ঠগদের হাতে। তবে ভালো মানুষেরা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারেন, যখন তাঁরা একত্র হন। একত্র হয়েছিলেন বলেই আইয়ুব খানের পতন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, এরশাদের বিদায়—এসব ঘটনা ঘটেছে। তাই ব্যবস্থা বদলাতে ওই ভালো, দুর্বল, ক্ষমতাহীন, বিচ্ছিন্ন, একাকী মানুষদের একত্র হতে হবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধকালে সমাজতন্ত্রের কথা শোনা গিয়েছিল। যুদ্ধের আগেও, উনসত্তরের সময়েই, জাতীয়তাবাদী নেতারাও সমাজতন্ত্রের পক্ষে বলাবলি শুরু করেছিলেন; অর্থাৎ বাধ্য হয়েছিলেন বলতে। উদ্দেশ্য, আন্দোলনরত মানুষকে নিজেদের বেষ্টনীর ভেতর ধরে রাখা। নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি থাকবে, সেটাও ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক; উজ্জ্বল অক্ষরে সেটা লেখাও হয়েছিল। কিন্তু যতই সময় পার হতে থাকল, ততই অনেকটা প্রভাত কাটিয়ে ভরদুপুরের আগমনের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠল এই সত্য যে, রাষ্ট্র ধরেছে পুরোনো পথ, চলেছে সেই পুঁজিবাদী ধারাতেই।
প্রথমে একটু ইতস্তত করেছে, তারপর মহা উৎসাহে, প্রবল প্রতাপে এবং ক্রমবর্ধমান বিক্রমে এগিয়ে গেছে ব্যক্তিমালিকানার সড়ক ধরে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমাজতন্ত্রের জন্য কোনো সম্ভাবনাই নেই। সমাজে মধ্যবর্তী স্তরটা বসে যাবে। ভাগ হয়ে যাবে শিক্ষার পৃথিবী দুই ভাগে; এক পাশে ইংরেজি মাধ্যম, অন্য পাশে মাদ্রাসা। বাংলামাধ্যম দেবে যাচ্ছে, আরও দাববে।
কিন্তু এমনটা যে ঘটবে, কেউ কি কখনো ভেবেছিল? বাংলাদেশের অভ্যুদয় ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রেরণা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়েছে ঠিকই, না হয়ে উপায় ছিল না, কিন্তু রাষ্ট্রের ভাষা হয়নি। স্বপ্ন ছিল একটি অভিন্ন শিক্ষাধারা গড়ে তোলার; সেই স্বপ্ন কুপোকাত হয়ে স্বাপ্নিকদের লজ্জা দিচ্ছে। সবকিছুই ঘটল একটি কারণে। সেটি হলো সমাজতন্ত্রীদের অকৃতকার্যতা। মুক্তির সংগ্রামে জাতীয়তাবাদীরা ছিলেন, সমাজতন্ত্রীরাও ছিলেন; সমাজতন্ত্রীরাই ছিলেন মূল শক্তি, তাঁরাই আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু নেতৃত্বে থাকতে পারেননি। নেতৃত্ব চলে গেছে জাতীয়তাবাদীদের হাতে।
জাতীয়তাবাদীরা মুখে যা-ই বলুন বা বলতে বাধ্য হন, ভেতরে তাঁরা পুঁজিবাদী, তাঁদের বিশ্বাস তখন যেমন ছিল, এখনো তেমনি রয়ে গেছে ব্যক্তিমালিকানাতেই। বক্তৃতায়, বিবৃতিতে, আওয়াজে সমষ্টির কথা বললেও স্বাধীনতা তাঁদের জন্য ব্যক্তিগত সুখ আনবে—এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। স্বাধীনতা পেয়ে তাঁরা ব্যক্তিমালিকানার লাইনে চলা অক্ষুণ্ন রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই তাঁরা করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত হয়নি; মুক্ত হয়েছে পুঁজিবাদ এবং সে তার দৌরাত্ম্য চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রবল দুর্বলকে যে হটিয়ে দেবে, এটা অনিবার্য।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভালো করছিল। আমাদের খেলোয়াড়েরা ইতিমধ্যেই বিশ্বমাপে উন্নীত হয়েছেন। জাতির জন্য তাঁরা গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু অবস্থানটা ধরে রাখতে পারছেন কি? পারছেন না। কারণ, পুঁজিবাদ সেখানেও ঢুকে পড়েছে। জানা গেছে, আমাদের খেলোয়াড়েরা কেউ কেউ অত্যন্ত বেশি টাকা উপার্জন করেন। তাঁদের বাজার-দর খুবই চড়া। অন্যরা অতটা দাম পান না এবং নিজেদের বঞ্চিত জ্ঞান করেন। এর মধ্যে ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা বোর্ডের আয়-রোজগারও বেশ ভালো। বোর্ড নাকি খেলোয়াড়দের যা প্রাপ্য, তা দেয় না। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই তাই অসন্তুষ্ট। এসব প্রভাব স্বভাবতই গিয়ে পড়ছে খেলার মানের ওপর।
অনেক হইচই করে কতবার দেশের বাইরে খেলতে গিয়ে বড়মাপের অসম্মান ঘাড়ে নিয়ে তাঁরা ফিরেছেন! জাতীয় সম্মানবোধের যে চেতনা নিয়ে তাঁরা যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটা এখন যে আর অক্ষত নেই—তা পরিষ্কার বোঝা যায়। তাঁদের ঐক্য এখন আর অনড় নয়, ঐক্যের ভেতরে ব্যক্তিস্বার্থের অন্তর্ঘাত চলছে। সবকিছু ভাঙছে, খেলোয়াড়দের দেশপ্রেম কেন ভাঙবে না?
সবাই সর্বক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা করে—আমি কী পেলাম? পেতে চায়, দিতে ভুলে গেছে। অথচ দিয়েছে তো। প্রাণ দিয়েছে মুক্তিসংগ্রামে। শুরুটা যার অনেক আগে, একটা পরিণতি একাত্তরে। একাত্তরের মুক্তির সুফল এখন ব্যবসায়ীদের হাতে এবং ব্যবসায়ের অধীনে চলে গেছে রাজনীতি। রাজনীতির লোকেরা যখন একাত্তরের কথা খুব জোরে জোরে বলেন, তখন সন্দেহ হয় ভেতরটা শূন্য এবং তালটা মুনাফার। পণ্য হিসেবে একাত্তরকে ব্যবহার করছেন। একাত্তরের চেতনাটা ছিল সমাজবিপ্লবের; সেটাকে ঢেকে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা একাত্তরের শহীদদের ও যোদ্ধাদের অপমান করা বৈকি। বুঝুন আর না-ই বুঝুন, ওই কাজটা যাঁরা করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য মুনাফার লোভই, অন্য কিছু নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অত্যন্ত বড় ও প্রথম আয়োজনে যে ঘুষ দেওয়ার প্রচলন ঘটে সেটা হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট প্রদান। ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরিতে উন্নতি, পারমিট লাইসেন্স হাতিয়ে নেওয়া, চাকরিপ্রাপ্তি, সম্পত্তি জবরদখল, প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করা, সব চলতে থাকল। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা কেউই সার্টিফিকেট লাভের আশার দ্বারা চালিত হননি। তাগিদটা ছিল পুরোপুরি দেশপ্রেমিক, সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা চালু করে দেশের প্রতি ওই প্রেমকে পরিণত করার চেষ্টা হলো মুনাফালিপ্সায়। সুযোগ করে দেওয়া হলো ওই হস্তগতকরণকে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই বঞ্চিত হলেন। শত শত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দেখা গেল। উড়ে এল। জুড়ে বসল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা করা, সেই কোটাকে পুত্র-কন্যা এবং পরে নাতি-পুতিদের পর্যন্ত প্রসারিত করে দিয়ে যুদ্ধের প্রতি কেবল যে অসম্মান প্রদর্শনের স্থায়ী আয়োজন তৈরি করা হলো তা-ই নয়, বঞ্চিতদের মনে যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্বেষ উৎপাদনের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুতও হয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, ভাতা বৃদ্ধি, জাল সার্টিফিকেট তৈরি—সবকিছুর মধ্য দিয়েই পরিমাপ ঘটতে থাকল মুক্তিযুদ্ধের সমাজবিপ্লবী চেতনা থেকে রাষ্ট্রের সরে যাওয়ার।
রাষ্ট্রের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল হানাদার শয়তানদের বিচার। নিকৃষ্টতম অপরাধী হিসেবে ১৯৫ জনকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র তাদের বিচার করতে পারল না। অপরাধীরা সবাই চলে গেল তাদের দেশে। এত বড় অপরাধের যখন বিচার হলো না, তখন আশঙ্কা করা স্বাভাবিক হলো যে এই রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার পাওয়াটা সহজ হবে না। পরে প্রমাণিত হয়েছে যে আশঙ্কাটা অমূলক ছিল না।
আমাদের এই রাষ্ট্র পুঁজিবাদী। বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক প্রান্তে তার অনাত্মসচেতন অবস্থান; পুঁজিবাদের গুণগুলো যেমন-তেমন, পুঁজিবাদের যত দোষ আছে সবকটিই সে আত্মস্থ করে ফেলেছে এবং ক্রমবর্ধমান গতিতে বিকশিত করে চলছে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা অসংশোধনীয়রূপে পিতৃতান্ত্রিক; যে জন্য এই ব্যবস্থায় নারীরা নিরাপত্তা পান না এবং নানাভাবে লাঞ্ছিত হন। পদে পদে তাঁদের বিপদ। গৃহে সহিংসতা, পরিবহনে হয়রানি। একাধিক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের নারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৯৮ জন উন্মুক্ত জায়গায় হয়রানির শিকার হন। তাঁরা এখন গায়ে বোরকা চাপিয়ে, হিজাবে চেহারা লুকিয়ে রেখেও রক্ষা পান না।
তাহলে ভরসা কোথায়? একটা ভরসা এই যে দুষ্ট লোকেরা যতই ক্ষমতাবান হোক, ভালো মানুষেরাও আছেন এবং তাঁদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু ভালো মানুষেরা তো দুর্বল, তাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁরা বিচ্ছিন্ন, একাকী এবং গোটা ব্যবস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে। কর্তৃত্ব ঠগদের হাতে। তবে ভালো মানুষেরা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারেন, যখন তাঁরা একত্র হন। একত্র হয়েছিলেন বলেই আইয়ুব খানের পতন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, এরশাদের বিদায়—এসব ঘটনা ঘটেছে। তাই ব্যবস্থা বদলাতে ওই ভালো, দুর্বল, ক্ষমতাহীন, বিচ্ছিন্ন, একাকী মানুষদের একত্র হতে হবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫