Ajker Patrika

মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠার জন্য দরকার সদিচ্ছা

মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠার জন্য দরকার সদিচ্ছা

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন নিয়ে আলাপ করেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: রাজনীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এ জায়গায় পৌঁছেছি। এখান থেকে আমরা বলতে পারি, দেশটি একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। কিন্তু এটাও একটা বাস্তবতা যে পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছিল, তারাই আবার জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। সেই গোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একই সময়ে প্রায় সব জেলায় বোমা ফাটানো হয়েছে। মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে। বিগত সময়ে এ ধরনের নানা অপতৎপরতা আমরা লক্ষ করেছি। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তারা সেসব অপতৎপরতা একটি রাজনৈতিক পার্টির মাধ্যমে করছে।

আমরা যখন কথা বলছি, তখন আমরা জানি যে দেশে এখন কী অবস্থা বিদ্যমান? ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেভাবে একটি যড়যন্ত্রকারী চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, গাড়ি ও হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসা আক্রমণ করেছে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে, বাইডেনের তথাকথিত উপদেষ্টা সাজিয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে—এতে বোঝা যায়, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কত ধরনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। সেই জায়গাগুলো ধরে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াই হবে দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের দরকার।একটি দেশে নানা পথ, মত, দর্শন ও আদর্শ থাকবে, তবে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র তাদের দর্শন, আদর্শ নিয়ে কাজ করবে—সেটা কারও কাম্য নয়।

আজকের পত্রিকা: সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই সংকটের কি কোনো সমাধান নেই?
আরেফিন সিদ্দিক: আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব। এই মুক্তি পাওয়ার শর্তটি হচ্ছে, ন্যূনতম ঐক্যের জায়গায় পৌঁছানো। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব, সেটাও ভাবার বিষয়। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারাই আবার এ দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তাহলে তো আমরা এগিয়ে যেতে পারব না।

আর পাঁচ বছর পর পর যে সংকটের মধ্যে পড়ি, তা থেকে মুক্তি পাওয়াও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ঐক্যের দরকার। পৃথিবীর কোথাও, কোনো দেশে সে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এটাই আমাদের দেশে আছে।

তারপরও আমি আশা করি, নবীন প্রজন্ম এখন সার্বিকভাবে দেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত। তারা যখন এ দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় আসবে, তখন নিশ্চয় এ দেশের অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন প্রত্যেকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। আমরা সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি।

আজকের পত্রিকা: রাজনীতিতে যে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি চলছে, তা কি শেষ হবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: পারস্পরিক দোষারোপ রাজনীতিতে থাকবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে, যেখানে শত শত বছর গণতন্ত্র কার্যকর আছে, সেখানেও দেখা যায় পারস্পরিক দোষারোপ আছে। তাদের মধ্যেও অনেক ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা তো গণতন্ত্র শুরুই করতে পারিনি। যখনই শুরু করি, তারপরই একটু হোঁচট খাই। কিন্তু দোষারোপেরও একটি সীমারেখা থাকে। সৌন্দর্য, ভদ্রতা, সৌজন্যতা, ভাষার মাধুর্য—এগুলো নিয়েই দোষারোপের রাজনীতি চলতে পারে। আমরা অনেক সময় যে জায়গায় চলে যাই, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা হয়।

এটা তো রাজনীতি না। ৯ মাসের যুদ্ধে অর্জিত যে সংবিধান, সেটাকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল তথাকথিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাসের মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট এবং তার সঙ্গে যুক্ত সব ঘটনাকে নিয়ে কোনো মামলা এবং বিচার করা যাবে না। যে দেশে এ ধরনের কালো আইন যুক্ত করা হয়, সেখান থেকে নিশ্চিত বোঝা যায়, অবস্থাটা কোন জায়গায় পৌঁছেছিল। এসব জায়গা থেকে আমরা এখন একটা পর্যায়ে এসেছি।

২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু প্রতি পাঁচ বছর পর যখনই নির্বাচন আসে, তখনই দেখা যায় ওই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী দেশের অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ন করার জন্য নানা ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এই মুহূর্তে আমরা দেখছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকালীন একটা সরকার থাকবে, যারা রুটিন ওয়ার্ক করবে। আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সব দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপরও বিরোধী দল যদি মনে করে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে, অনির্বাচিত লোক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে—তাহলে সে অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য ভালো নয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার একসময় সংবিধানে যুক্ত ছিল। মনে রাখতে হবে, সেটি কেন বাতিল করা হলো? বিএনপির শাসনামলে মাগুরার উপনির্বাচনকে এমনভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছিল, সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করতে হয়েছিল। আবার তাদের কারণেই এটাকে বাতিল করতে হয়েছে। কারণ ২০০৬ সালের নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এমন এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো। ফলে এক-এগারোর সৃষ্টি হলো।

তাই নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হতে পারে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনীতিবিদদেরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই প্রত্যাশা আমি এখনো করি।

আজকের পত্রিকা: সংলাপ-সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সরকারপ্রধান নিজেই সংলাপে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাহলে রাজপথেই কি ফয়সালা হবে?
আরেফিন সিদ্দিক: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সংলাপ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশটা তো আগে সৃষ্টি করতে হবে। আর এর জন্য বড় সংকট হচ্ছে ‘আস্থা’। আগে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য যারা এটা সৃষ্টি করেছে, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

মূল লক্ষ্যের জায়গায় কিন্তু সব দল একটি জায়গায় অবস্থান করছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে আমরা কীভাবে পৌঁছাব, সেই পথ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। এই মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠা কঠিন কোনো কাজ নয়। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা।

আজকের পত্রিকা: দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। হরতাল, অবরোধে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। দেশ বাঁচানোর রাজনীতি কি গুরুত্ব পাবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: বর্তমানে দেশের যে বাজার পরিস্থিতি, তাতে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদেরও অসুবিধা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গোষ্ঠী তাদের লাভটাকে বড় করে দেখছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের দেশ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পড়েছে। তারপরও আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো কৃত্রিম সংকট। এসব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে সরকারকে এ জায়গায় দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে—আপনি কি তেমন লক্ষণ দেখছেন?
আরেফিন সিদ্দিক: আমি মনে করি, বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অবশ্য আমি বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় অনির্বাচিত সরকার আসার কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমাদের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকার বলে কোনো বিষয় নেই। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবে অনির্বাচিত ব্যক্তিরও দেশ পরিচালনার কথা সংবিধানে আছে। ১০ শতাংশ ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, যাঁরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন না। তবে তাঁদের বিশেষজ্ঞ হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত