Ajker Patrika

তিন প্রশ্ন সামনে রেখে এগোচ্ছে তদন্ত কমিটি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১০: ৩৪
তিন প্রশ্ন সামনে রেখে এগোচ্ছে তদন্ত কমিটি

বিস্ফোরণ কেন ঘটেছে, এর পেছনে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দায়ী, নাকি অন্য কোনো রাসায়নিক ছিল—এটি খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। শুধু এ প্রশ্নই নয়, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কী কারণে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে তারা। এ জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। সর্বশেষ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট।

এমনটাই জানিয়েছেন এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সমন্বয়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি বিষয় সামনে রেখে তদন্তকাজ এগিয়ে নিচ্ছি। সেখানে কেন অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কন্টেইনার বিস্ফোরণের কারণ কী এবং এ ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা?’

এর আগে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোর মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় সারিতে থাকা একটি কন্টেইনারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওই কন্টেইনারে তৈরি পোশাক শিল্পের মালামাল ছিল। পরে খবর পেয়ে রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ওই কন্টেইনারের পাশে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি কন্টেইনার আগুনের তাপ লেগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪৬ জন।

এ ঘটনায় ৬টি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ৬টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এই কমিটিতে রাখা হয়। বাকি ৫টি কমিটির মধ্যে একটি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে, একটি বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস হাউস থেকে একটি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি এবং অন্যটি বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজে গঠন করেছেন।

বিভাগীয় কার্যালয়ের তদন্ত কমিটির সমন্বয়ক মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি, আমরা অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করছি, বিস্ফোরণ কেন হয়েছে? কারও দায়-দায়িত্বে অবহেলা হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছি। একটি ডিপো পরিচালনার জন্য যেসব কমপ্লায়েন্সগুলো মেনে চলার দরকার। এ বিষয়গুলো যারা তদারকি করার কথা, ওই সংস্থাগুলো কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতটি কন্টেইনার ছিল। এর মধ্যে কতটি কন্টেইনারে মালামাল আছে সেটি আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা গতকাল সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ধোঁয়ার কারণে কাজ করতে পারিনি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষকে সেখানে কত কন্টেইনার খালি ছিল, রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার কত, রাসায়নিক পণ্যের কন্টেইনার কত এসব তথ্য আলাদাভাবে দিতে বলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কোনো তালিকা দিতে পারেনি।

সিসিটিভি ফুটেজ পেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতাম জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আমরা তাঁদের সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা বলছেন, তাদের সিসিটিভি ফুটেজের কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। সফটওয়্যার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কেননা এখন তো সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সফটওয়্যারগুলো সেইভাবে তৈরি করা। ডিপোর বাইরে অবশ্যই তাদের অন্য কোথাও স্টোর থাকার কথা। কারণ এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান, শুধু মাত্র ওখানের সার্ভারটা নষ্ট হলে ফুটেজ চলে যাবে। এটা যৌক্তিক কোনো উত্তর হতে পারে না। কিন্তু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ যেসব শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ছাড়পত্র নিয়েছে সেখানে ডিপোতে কেমিক্যাল সংরক্ষণের কোনো অনুমতি ছিল না। অনুমোদন ছাড়াই তারা ডিপোতে কেমিক্যাল সংরক্ষণ করেছে। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিস্ফোরক অধিদপ্তরকেও অবহিত করেনি। তাদের কাছ থেকেও কোনো অনুমোদন নেয়নি। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের থেকে জানানো হয়েছে, দেড় মাস আগে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একটি সমন্বিত টিম ওই ডিপোতে পরিদর্শনে যায় ওই সময় বেশ কয়েকটি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহ মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তিন কর্ম দিবস সময় দিয়েছিল। আজ শেষ হয়েছে, কিন্তু আমরা তদন্তকাজ শেষ করতে পারিনি। তাই সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেড় মাস আগে বিভিন্ন সংস্থার অংশ গ্রহণে একটি সমন্বিত কমিটি ওই ডিপো পরিদর্শনে যায়। ওই সময় ওই ডিপোর বেশ কিছু ত্রুটি উঠে এসেছে। কি কি ত্রুটি পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছ থেকে যে ছাড়পত্র নিয়েছে সেই অনুযায়ী তারা ওই ডিপোতে কেমিক্যাল সংরক্ষণ করতে পারে না। আমরা যেসব শর্তে তাদের ছাড়পত্র দিয়েছি, তাতে তারা গার্মেন্টস সামগ্রী ও পোলট্রি ফিড রাখার কথা বলে ছাড়পত্র নিয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এক ফ্যাসিস্ট নেত্রীর পাল্লায় পড়ে পুলিশ খারাপ হয়েছিল: এসপি

বিএনপি নেতা নাছিরের দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ দুই সৎভাইয়ের বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত