Ajker Patrika

পৃথিবী হবে অচেনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৩৮
পৃথিবী হবে অচেনা

রুক্ষ-রুষ্ট চারদিক। কোথাও নেই সবুজের প্রতিশ্রুতি অথবা এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা। ভীষণ তপ্ত পরিবেশ। এর মধ্যে অক্সিজেনের সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে নভোচারীর পোশাকে সাবধানে হেঁটে চলেছেন একদল নারী-পুরুষ। তাঁরা শিশুদের রেখে এসেছেন নিরাপদ কোনো স্থানে। হলিউডি ছবির দৃশ্য হিসেবে এর খুব চল থাকলেও একে বোধ হয় খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নেননি বিশ্বনেতারা। আর তাই এবার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এই দৃশ্যই বাস্তব হয়ে উঠবে। আর তাও হবে ২৫০০ সালের মধ্যেই।

পৃথিবীকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা যদি গুরুতরভাবে না নেওয়া হয়, তবে ২৫০০ সালের মধ্যেই এর রূপ এমন হবে, যা দেখে আজকের মানুষ একে চিনতেই পারবে না। তাদের কাছে এই গ্রহকেই মনে হবে ভিনগ্রহ। বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদ-মাধ্যম সায়েন্স টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ এখনই পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা—উভয় বাড়বে। আর এটি ঘটবে এই শতকেই। অর্থাৎ, পৃথিবীর ক্ষয়টি ২১০০ সালের মধ্যেই প্রকট হয়ে দেখা দেবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর বাসযোগ্য থাকবে না পৃথিবী। আগামী ৪০০ বছরের মধ্যে নীলাভ গ্রহটি হয়ে পড়বে একটি ভিনগ্রহ।

এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা। ইউনাইটেড ন্যাশনস অ্যাসেসমেন্ট অব ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস (এনডিসি) নামের গবেষণাটিতে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞান গবেষণা সাময়িকী গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজিতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমানোর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি রক্ষিত হলেও আর ৭৯ বছরের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক্‌-শিল্প যুগের চেয়ে অন্তত ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার ফলে এমন ঘন ঘন ও ভয়ংকর দাবানল হবে বিশ্বজুড়ে, যা অভূতপূর্ব। একইভাবে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা ও সংখ্যা এতটাই অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে যাবে যে ২১০০ সালে পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। মানবসভ্যতার কাছে হয়ে পড়বে আরও একটি ভিনগ্রহ। শুধু তা-ই নয়, স্থল ও জলের যাবতীয় বাস্তুতন্ত্রেরও আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

২০১৫ সালে হওয়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আগেই বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক্‌-শিল্প যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখতেই হবে। নয়তো ধ্বংসের দিন ঘনিয়ে আসবে পার্থিব সভ্যতার।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এই বিষয়টিকে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সেই কবে থেকেই তো বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টির দিকে নজর রাখছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি)। বছর বছর এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব প্রতিবেদন বা বিশেষ প্রতিবেদন—কোনো কিছুতেই কিছু হয় না।

এ অবস্থায় এবার এ বিষয়েই সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২১০০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে। আর এমনটি হলে এখন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে, তার আর সীমা থাকবে না। খরা, বন্যা, দাবানল, ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস যেভাবে বাড়ছে, তাতেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এর পরিমাণ আরও বাড়লে তা আর বাসযোগ্য থাকবে না কোনোমতেই। কারণ, এই পর্যায়ে গেলে স্থল ও জলভাগের বাস্তুতন্ত্র আমূল বদলে যাবে।

বর্তমান বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা, তাকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এই পৃথিবী কেমন হবে, তা বোঝার জন্য একটি মডেল তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যে ধারা চলছে, তা অক্ষুণ্ন থাকলে পৃথিবী এমন এক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাবে, যেখানে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে। ফলে এটি এখানকার কোটি প্রাণের জন্য হয়ে উঠবে অনেকটা ভিনগ্রহের মতোই। এখানে বেঁচে থাকার কৌশল তখন নতুন করে আয়ত্ত করতে হবে মানুষকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা

সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, সেনা জালে ৩ সমন্বয়ক

‘উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার সময় আমার ছেলে হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

১০ মিনিটের দেরি বাঁচিয়ে দিল ভূমিকে, অল্পের জন্য ধরতে পারেননি বিধ্বস্ত বিমানটি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত