Ajker Patrika

চালকলের বর্জ্যে কৃষকের ক্ষতি

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৮
চালকলের বর্জ্যে কৃষকের ক্ষতি

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগরে চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য এবং গরম পানি সরাসরি আবাদি জমিতে ফেলায় ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। কালো ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। শুধু কালো ধোঁয়া বা বিষাক্ত বর্জ্যই নয়, চালকলের চিমনি দিয়ে উড়ে আসা ছাইয়ের কারণে ভোগান্তিতে এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ সড়কে চলা পথচারীরা। এই অবস্থা থেকে প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, তারা এ ব্যাপারে চালকল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দেশে অন্যতম বড় চালের মোকাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০ চালের মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি অটোরাইস মিল। আর ৫৪৮টি হাস্কিং বা ছোট রাইস মিল। আর এসব রাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সঙ্গে আছে এসব রাইস মিলের বয়লারের গরম এবং বিষাক্ত পানিসহ বর্জ্য।

নিয়মানুযায়ী এসব মিলের বর্জ্য এবং ছাই বড় গর্ত করে স্তূপ করে রাখা। এবং মিলের উৎপাদিত বর্জ্য যাতে পরিবেশদূষণ না করে, সে ব্যাপারে প্রতিটি বড় মিলের নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগার থাকা বাধ্যতামূলক।

স্থায়ী বাসিন্দা এবং কৃষকদের অভিযোগ, খাজানগরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন নতুন রাইস মিল বসানো হলেও মিলমালিকেরা বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন করার কোনো ব্যবস্থাই রাখছেন না। ফলে সব বর্জ্যই ফেলা হচ্ছে জিকের সেচ প্রকল্পের খালে। দিনের পর দিন ওই সব বর্জ্য খালে ফেলার কারণে ওই এলাকার আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যে খালের মাছ ধরে বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন, সেই খাল অনেক আগেই হয়ে গেছে মাছশূন্য। এমনকি এসব খালের পানিতে গোসল করারও উপায় নেই। সেই সঙ্গে গন্ধ পানির কারণে নদীপারের মানুষের বসবাস করাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষাক্ত ও গরম পানি এবং ছাইয়ের কারণে জমিতে ফসল হচ্ছে না।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, রাইস মিলের এসব বর্জ্যের কারণে দুভাবে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। মিলের বর্জ্য সরাসরি খালের পানির সঙ্গে ফসলের খেতে গিয়ে ধানের গোড়ায় পচন ধরিয়ে দিচ্ছে। আর বিষাক্ত গরম পানির কারণে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। তা ছাড়া, উড়ে আসা ছাইও ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু খাজানগরেই নয়, শহর এবং গ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে আবাসন এবং মিল-কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কেউই পরিকল্পিত পয়োনালা ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা রাখছে না। ফলে প্রতিনিয়ত মিলের বর্জ্য জিকের খালে ফেলা হচ্ছে। বারবার এসব ব্যাপারে নোটিশ দেওয়া হলেও কেউ তা তোয়াক্কা করছে না। আর লোকবল সংকটের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।’

যাঁদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই রাইস মিলমালিকদের সংগঠন কুষ্টিয়া রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধানের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশনা মেনে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মিলের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, ‘অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বর্জ্য পরিশোধন করার ব্যবস্থা না থাকলে নতুন মিল-কারখানা নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না।

আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে বারবার মিলমালিকদের মৌখিক সতর্ক করার পাশাপাশি নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পালানোর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন আবদুল হামিদ

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

এআই যুগে চাকরি পেতে যে দক্ষতা লাগবেই, জানালেন মাইক্রোসফটের সিইও

ঈদের ছুটির সুযোগে মাদ্রাসার গাছ বেচে দিলেন সুপার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত