অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে থাকে, পরবর্তীকালে দেশের নাম হয়ে থাকে, কিন্তু দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় হয়, তবে সেটা আলাদা। সেদিক থেকে আমাদের যে বাংলাদেশ, সেখানে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন যে অঞ্চলে বাস করে, যে অঞ্চলটি মূলত বাংলা অঞ্চল এবং পরবর্তীকালে যেটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে। বাংলাদেশে যেহেতু মূল ভাষা হচ্ছে বাংলা, এই বাংলা ভাষাকে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। আসলে বাংলা ভাষার লড়াইটি খুব গভীর। বাংলা ভাষা সব সময়ই লড়াই করে টিকে ছিল। বহু আগে এটি সংস্কৃত পণ্ডিতদের, তাঁদের চাপিয়ে দেওয়া রীতিনীতির বিরুদ্ধে গণমানুষের বাংলা ভাষা লড়াই সংগ্রাম করে গণমানুষের মুখে মুখে টিকে ছিল। যারা অভিজাত, অভিজাতেরা বাংলা ভাষা বলত না। পরবর্তীকালে ফারসি হলো রাজভাষা। রাজেন্দ্রবর্গরা ফারসিতে কথা বলতেন, রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ অভিজাতদের ভাষা ছিল ফারসি। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেছেন। এরপর যখন ইংরেজরা এল, ইংরেজরা এসে রাজকার্যে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য দিল এবং তারা ইংরেজিতেই কথা বলতেন। তখন সাধারণ মানুষ বাংলায় কথা বলে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রেখেছেন। এরপর যখন পাকিস্তানিরা এল, পাকিস্তানিরা এসে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বা দেশের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করল। তখনো কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাষা বাংলাকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। এবং ১৯৫২ সালে সাধারণ মানুষ যারা, তারা রক্ত দিয়েছিলেন, সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, যাঁদের নাম আমরা জানি।এ কারণে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনটি বাঙালির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালি মূলত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রের ভাষা করেছে। এই ভাষাটি স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরপরই মৌখিক স্বীকৃতি ও পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বলে একটি রাষ্ট্র গঠিত হলো এবং সেখানে ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণীত হয়, যে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। এই স্বীকার প্রদানের পরবর্তীকালে সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের একটা চেষ্টা চলে। যদিও সেই চেষ্টাটি সার্বিকভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালিবিরোধী অপশক্তি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাকেও মূলত হত্যা করে। এ কারণে চারদিকে ইংরেজি ভাষার প্রভাব বিস্তার হতে দেখা যায়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বাড়ে, ক্যাডেট কলেজ বাড়ে, ইংরেজিতে অফিস-আদালত চলে, এমনকি চারদিকে বাংলা ভাষাকে অপমান বা হেয়প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা চলে। বাংলা ক্যালেন্ডার বর্জিত হয়, সম্পূর্ণভাবে খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা পর্যায়ে আবার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাকে মর্যাদা প্রদানের প্রশ্ন আসে এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে, পার্লামেন্টের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রসংঘ বা জাতিসংঘ তার যে সংস্থা ইউনেসকো, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এর পেছনে কানাডাপ্রবাসী কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের দুজনের নাম আমাদের সবার কাছে জানা, একজন রফিকুল ইসলাম, অপরজন আব্দুস সালাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি যে রক্তদান করেছিল, সেই ইতিহাসটি সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ অবগত হয় এবং তারা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে মনে করে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সারা পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ তার মাতৃভাষা রক্ষার জন্য, মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, এটি বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
বর্তমান কালে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, যে মর্যাদা ১৯৭২ সালে আমরা দেখেছিলাম, যে মর্যাদার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই মর্যাদার খানিকটা ব্যত্যয় আমরা লক্ষ করি। এবং সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনেও আমরা এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করছি। আমাদের যে পত্রপত্রিকা, সেখানের বাংলা লেখা, আমাদের যে প্রচার ফলক রয়েছে, সাইনবোর্ড রয়েছে, সেসব জায়গায় যে বাংলা লেখা, আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা লেখার প্রতি যে অনীহা এবং ভুল লেখা, সেটি আমাদের চোখে পড়ে। আর তাতে মনে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বেশ সংকটেই রয়েছে। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তার মর্যাদাকে আরও বেশি বাড়ানোর জন্য, তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাকে আকর্ষণীয় করবার জন্য, বাংলার আধুনিকায়ন খুব করে জরুরি। সেদিক থেকে জাতির মননের প্রতীক ‘বাংলা একাডেমি’ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিধান প্রণয়ন, পরিভাষা কোষ, বাংলা বানানের নিয়ম এবং বাংলায় প্রচুর বই প্রকাশ আমরা দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি করে বাংলার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে নানান ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তবর্ণগুলো, বানানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন থাকে, সেগুলো নিয়ে যখন আগ্রহীরা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায় না। যদি সত্যিই বাংলা ভাষা নিয়ে সব সময় গবেষণা করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান হতো বা বাংলা একাডেমির মধ্যেই কোনো একটি শাখাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হতো, প্রতিনিয়ত গবেষণা করা, পণ্ডিতদের মত, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতকে প্রভাবিত করা, তাহলে বোধকরি বাংলা আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও একটু এগিয়ে যেত। এর সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার যুক্ত করা যায়, বাংলা লেখনীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যবহার। বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা খুব জরুরি। প্রযুক্তির সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে সহজেই যাতে বাংলাকে মানুষ ব্যবহার করতে পারে, সেই কাজটি রাষ্ট্রেরই করতে হবে।
উচ্চশিক্ষাতেও বাংলা ভাষার প্রচলন খুব জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে স্লোগান বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রচলন শুরু হয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা— এই নানা ক্ষেত্রে বাংলাতে পড়ানোর জন্য একধরনের আগ্রহ দেখা যায়। এ সূত্রে বিশেষভাবে স্মরণ করি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক, তখন ইংরেজিতে লেখা রসায়ন বই বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য। এটি তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে কাজটি করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যে দেশ উন্নত হয়েছে, সেই দেশগুলোর প্রায় সবাই মাতৃভাষাতেই উচ্চশিক্ষা দিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ডসহ সব দেশের নামই বলা চলে, যারা মূলত উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। সেদিক থেকে বাংলা ভাষাকে যদি উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যায়, তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অনুবাদ। আর অনুবাদের জন্য একটা অনুবাদ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আমাদের সর্বস্তরে বাংলার ক্ষেত্রে যে সংকট, সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ইচ্ছের সংকট। আমাদের অনেকেই ইচ্ছে করে বাংলা লেখেন না বা বাংলায় বলেন না এবং এর পেছনে তাঁরা অনুযোগ করে থাকেন, বাংলা বানান নাকি খুব বিভ্রাটপূর্ণ, ভুল হয়ে যেতে পারে—এ কারণে বাংলাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষা, বিশেষত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাংলা বানান, বানান রীতিকে সহজবোধ্য ও জনবান্ধন করা দরকার। সবশেষে আমি এটাই বলতে চাই, বাঙালিরা যেহেতু বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন, চিন্তা করে থাকেন, মাতৃভাষাই তার প্রধান ভাষা, সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ভাষাবিদ, শিক্ষিত মানুষ ও ভাষাপ্রেমীদের সার্বিক অংশগ্রহণ। এর মধ্য দিয়েই মূলত আমরা বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, সেই মর্যাদা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে পারব।
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে থাকে, পরবর্তীকালে দেশের নাম হয়ে থাকে, কিন্তু দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় হয়, তবে সেটা আলাদা। সেদিক থেকে আমাদের যে বাংলাদেশ, সেখানে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন যে অঞ্চলে বাস করে, যে অঞ্চলটি মূলত বাংলা অঞ্চল এবং পরবর্তীকালে যেটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে। বাংলাদেশে যেহেতু মূল ভাষা হচ্ছে বাংলা, এই বাংলা ভাষাকে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। আসলে বাংলা ভাষার লড়াইটি খুব গভীর। বাংলা ভাষা সব সময়ই লড়াই করে টিকে ছিল। বহু আগে এটি সংস্কৃত পণ্ডিতদের, তাঁদের চাপিয়ে দেওয়া রীতিনীতির বিরুদ্ধে গণমানুষের বাংলা ভাষা লড়াই সংগ্রাম করে গণমানুষের মুখে মুখে টিকে ছিল। যারা অভিজাত, অভিজাতেরা বাংলা ভাষা বলত না। পরবর্তীকালে ফারসি হলো রাজভাষা। রাজেন্দ্রবর্গরা ফারসিতে কথা বলতেন, রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ অভিজাতদের ভাষা ছিল ফারসি। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেছেন। এরপর যখন ইংরেজরা এল, ইংরেজরা এসে রাজকার্যে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য দিল এবং তারা ইংরেজিতেই কথা বলতেন। তখন সাধারণ মানুষ বাংলায় কথা বলে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রেখেছেন। এরপর যখন পাকিস্তানিরা এল, পাকিস্তানিরা এসে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বা দেশের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করল। তখনো কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাষা বাংলাকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। এবং ১৯৫২ সালে সাধারণ মানুষ যারা, তারা রক্ত দিয়েছিলেন, সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, যাঁদের নাম আমরা জানি।এ কারণে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনটি বাঙালির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালি মূলত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রের ভাষা করেছে। এই ভাষাটি স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরপরই মৌখিক স্বীকৃতি ও পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বলে একটি রাষ্ট্র গঠিত হলো এবং সেখানে ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণীত হয়, যে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। এই স্বীকার প্রদানের পরবর্তীকালে সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের একটা চেষ্টা চলে। যদিও সেই চেষ্টাটি সার্বিকভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালিবিরোধী অপশক্তি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাকেও মূলত হত্যা করে। এ কারণে চারদিকে ইংরেজি ভাষার প্রভাব বিস্তার হতে দেখা যায়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বাড়ে, ক্যাডেট কলেজ বাড়ে, ইংরেজিতে অফিস-আদালত চলে, এমনকি চারদিকে বাংলা ভাষাকে অপমান বা হেয়প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা চলে। বাংলা ক্যালেন্ডার বর্জিত হয়, সম্পূর্ণভাবে খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা পর্যায়ে আবার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাকে মর্যাদা প্রদানের প্রশ্ন আসে এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে, পার্লামেন্টের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রসংঘ বা জাতিসংঘ তার যে সংস্থা ইউনেসকো, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এর পেছনে কানাডাপ্রবাসী কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের দুজনের নাম আমাদের সবার কাছে জানা, একজন রফিকুল ইসলাম, অপরজন আব্দুস সালাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি যে রক্তদান করেছিল, সেই ইতিহাসটি সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ অবগত হয় এবং তারা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে মনে করে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সারা পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ তার মাতৃভাষা রক্ষার জন্য, মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, এটি বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
বর্তমান কালে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, যে মর্যাদা ১৯৭২ সালে আমরা দেখেছিলাম, যে মর্যাদার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই মর্যাদার খানিকটা ব্যত্যয় আমরা লক্ষ করি। এবং সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনেও আমরা এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করছি। আমাদের যে পত্রপত্রিকা, সেখানের বাংলা লেখা, আমাদের যে প্রচার ফলক রয়েছে, সাইনবোর্ড রয়েছে, সেসব জায়গায় যে বাংলা লেখা, আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা লেখার প্রতি যে অনীহা এবং ভুল লেখা, সেটি আমাদের চোখে পড়ে। আর তাতে মনে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বেশ সংকটেই রয়েছে। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তার মর্যাদাকে আরও বেশি বাড়ানোর জন্য, তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাকে আকর্ষণীয় করবার জন্য, বাংলার আধুনিকায়ন খুব করে জরুরি। সেদিক থেকে জাতির মননের প্রতীক ‘বাংলা একাডেমি’ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিধান প্রণয়ন, পরিভাষা কোষ, বাংলা বানানের নিয়ম এবং বাংলায় প্রচুর বই প্রকাশ আমরা দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি করে বাংলার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে নানান ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তবর্ণগুলো, বানানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন থাকে, সেগুলো নিয়ে যখন আগ্রহীরা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায় না। যদি সত্যিই বাংলা ভাষা নিয়ে সব সময় গবেষণা করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান হতো বা বাংলা একাডেমির মধ্যেই কোনো একটি শাখাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হতো, প্রতিনিয়ত গবেষণা করা, পণ্ডিতদের মত, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতকে প্রভাবিত করা, তাহলে বোধকরি বাংলা আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও একটু এগিয়ে যেত। এর সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার যুক্ত করা যায়, বাংলা লেখনীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যবহার। বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা খুব জরুরি। প্রযুক্তির সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে সহজেই যাতে বাংলাকে মানুষ ব্যবহার করতে পারে, সেই কাজটি রাষ্ট্রেরই করতে হবে।
উচ্চশিক্ষাতেও বাংলা ভাষার প্রচলন খুব জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে স্লোগান বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রচলন শুরু হয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা— এই নানা ক্ষেত্রে বাংলাতে পড়ানোর জন্য একধরনের আগ্রহ দেখা যায়। এ সূত্রে বিশেষভাবে স্মরণ করি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক, তখন ইংরেজিতে লেখা রসায়ন বই বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য। এটি তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে কাজটি করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যে দেশ উন্নত হয়েছে, সেই দেশগুলোর প্রায় সবাই মাতৃভাষাতেই উচ্চশিক্ষা দিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ডসহ সব দেশের নামই বলা চলে, যারা মূলত উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। সেদিক থেকে বাংলা ভাষাকে যদি উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যায়, তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অনুবাদ। আর অনুবাদের জন্য একটা অনুবাদ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আমাদের সর্বস্তরে বাংলার ক্ষেত্রে যে সংকট, সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ইচ্ছের সংকট। আমাদের অনেকেই ইচ্ছে করে বাংলা লেখেন না বা বাংলায় বলেন না এবং এর পেছনে তাঁরা অনুযোগ করে থাকেন, বাংলা বানান নাকি খুব বিভ্রাটপূর্ণ, ভুল হয়ে যেতে পারে—এ কারণে বাংলাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষা, বিশেষত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাংলা বানান, বানান রীতিকে সহজবোধ্য ও জনবান্ধন করা দরকার। সবশেষে আমি এটাই বলতে চাই, বাঙালিরা যেহেতু বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন, চিন্তা করে থাকেন, মাতৃভাষাই তার প্রধান ভাষা, সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ভাষাবিদ, শিক্ষিত মানুষ ও ভাষাপ্রেমীদের সার্বিক অংশগ্রহণ। এর মধ্য দিয়েই মূলত আমরা বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, সেই মর্যাদা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে পারব।
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে থাকে, পরবর্তীকালে দেশের নাম হয়ে থাকে, কিন্তু দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় হয়, তবে সেটা আলাদা। সেদিক থেকে আমাদের যে বাংলাদেশ, সেখানে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন যে অঞ্চলে বাস করে, যে অঞ্চলটি মূলত বাংলা অঞ্চল এবং পরবর্তীকালে যেটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে। বাংলাদেশে যেহেতু মূল ভাষা হচ্ছে বাংলা, এই বাংলা ভাষাকে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। আসলে বাংলা ভাষার লড়াইটি খুব গভীর। বাংলা ভাষা সব সময়ই লড়াই করে টিকে ছিল। বহু আগে এটি সংস্কৃত পণ্ডিতদের, তাঁদের চাপিয়ে দেওয়া রীতিনীতির বিরুদ্ধে গণমানুষের বাংলা ভাষা লড়াই সংগ্রাম করে গণমানুষের মুখে মুখে টিকে ছিল। যারা অভিজাত, অভিজাতেরা বাংলা ভাষা বলত না। পরবর্তীকালে ফারসি হলো রাজভাষা। রাজেন্দ্রবর্গরা ফারসিতে কথা বলতেন, রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ অভিজাতদের ভাষা ছিল ফারসি। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেছেন। এরপর যখন ইংরেজরা এল, ইংরেজরা এসে রাজকার্যে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য দিল এবং তারা ইংরেজিতেই কথা বলতেন। তখন সাধারণ মানুষ বাংলায় কথা বলে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রেখেছেন। এরপর যখন পাকিস্তানিরা এল, পাকিস্তানিরা এসে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বা দেশের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করল। তখনো কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাষা বাংলাকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। এবং ১৯৫২ সালে সাধারণ মানুষ যারা, তারা রক্ত দিয়েছিলেন, সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, যাঁদের নাম আমরা জানি।এ কারণে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনটি বাঙালির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালি মূলত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রের ভাষা করেছে। এই ভাষাটি স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরপরই মৌখিক স্বীকৃতি ও পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বলে একটি রাষ্ট্র গঠিত হলো এবং সেখানে ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণীত হয়, যে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। এই স্বীকার প্রদানের পরবর্তীকালে সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের একটা চেষ্টা চলে। যদিও সেই চেষ্টাটি সার্বিকভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালিবিরোধী অপশক্তি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাকেও মূলত হত্যা করে। এ কারণে চারদিকে ইংরেজি ভাষার প্রভাব বিস্তার হতে দেখা যায়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বাড়ে, ক্যাডেট কলেজ বাড়ে, ইংরেজিতে অফিস-আদালত চলে, এমনকি চারদিকে বাংলা ভাষাকে অপমান বা হেয়প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা চলে। বাংলা ক্যালেন্ডার বর্জিত হয়, সম্পূর্ণভাবে খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা পর্যায়ে আবার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাকে মর্যাদা প্রদানের প্রশ্ন আসে এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে, পার্লামেন্টের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রসংঘ বা জাতিসংঘ তার যে সংস্থা ইউনেসকো, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এর পেছনে কানাডাপ্রবাসী কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের দুজনের নাম আমাদের সবার কাছে জানা, একজন রফিকুল ইসলাম, অপরজন আব্দুস সালাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি যে রক্তদান করেছিল, সেই ইতিহাসটি সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ অবগত হয় এবং তারা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে মনে করে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সারা পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ তার মাতৃভাষা রক্ষার জন্য, মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, এটি বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
বর্তমান কালে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, যে মর্যাদা ১৯৭২ সালে আমরা দেখেছিলাম, যে মর্যাদার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই মর্যাদার খানিকটা ব্যত্যয় আমরা লক্ষ করি। এবং সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনেও আমরা এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করছি। আমাদের যে পত্রপত্রিকা, সেখানের বাংলা লেখা, আমাদের যে প্রচার ফলক রয়েছে, সাইনবোর্ড রয়েছে, সেসব জায়গায় যে বাংলা লেখা, আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা লেখার প্রতি যে অনীহা এবং ভুল লেখা, সেটি আমাদের চোখে পড়ে। আর তাতে মনে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বেশ সংকটেই রয়েছে। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তার মর্যাদাকে আরও বেশি বাড়ানোর জন্য, তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাকে আকর্ষণীয় করবার জন্য, বাংলার আধুনিকায়ন খুব করে জরুরি। সেদিক থেকে জাতির মননের প্রতীক ‘বাংলা একাডেমি’ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিধান প্রণয়ন, পরিভাষা কোষ, বাংলা বানানের নিয়ম এবং বাংলায় প্রচুর বই প্রকাশ আমরা দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি করে বাংলার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে নানান ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তবর্ণগুলো, বানানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন থাকে, সেগুলো নিয়ে যখন আগ্রহীরা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায় না। যদি সত্যিই বাংলা ভাষা নিয়ে সব সময় গবেষণা করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান হতো বা বাংলা একাডেমির মধ্যেই কোনো একটি শাখাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হতো, প্রতিনিয়ত গবেষণা করা, পণ্ডিতদের মত, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতকে প্রভাবিত করা, তাহলে বোধকরি বাংলা আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও একটু এগিয়ে যেত। এর সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার যুক্ত করা যায়, বাংলা লেখনীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যবহার। বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা খুব জরুরি। প্রযুক্তির সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে সহজেই যাতে বাংলাকে মানুষ ব্যবহার করতে পারে, সেই কাজটি রাষ্ট্রেরই করতে হবে।
উচ্চশিক্ষাতেও বাংলা ভাষার প্রচলন খুব জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে স্লোগান বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রচলন শুরু হয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা— এই নানা ক্ষেত্রে বাংলাতে পড়ানোর জন্য একধরনের আগ্রহ দেখা যায়। এ সূত্রে বিশেষভাবে স্মরণ করি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক, তখন ইংরেজিতে লেখা রসায়ন বই বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য। এটি তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে কাজটি করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যে দেশ উন্নত হয়েছে, সেই দেশগুলোর প্রায় সবাই মাতৃভাষাতেই উচ্চশিক্ষা দিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ডসহ সব দেশের নামই বলা চলে, যারা মূলত উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। সেদিক থেকে বাংলা ভাষাকে যদি উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যায়, তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অনুবাদ। আর অনুবাদের জন্য একটা অনুবাদ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আমাদের সর্বস্তরে বাংলার ক্ষেত্রে যে সংকট, সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ইচ্ছের সংকট। আমাদের অনেকেই ইচ্ছে করে বাংলা লেখেন না বা বাংলায় বলেন না এবং এর পেছনে তাঁরা অনুযোগ করে থাকেন, বাংলা বানান নাকি খুব বিভ্রাটপূর্ণ, ভুল হয়ে যেতে পারে—এ কারণে বাংলাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষা, বিশেষত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাংলা বানান, বানান রীতিকে সহজবোধ্য ও জনবান্ধন করা দরকার। সবশেষে আমি এটাই বলতে চাই, বাঙালিরা যেহেতু বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন, চিন্তা করে থাকেন, মাতৃভাষাই তার প্রধান ভাষা, সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ভাষাবিদ, শিক্ষিত মানুষ ও ভাষাপ্রেমীদের সার্বিক অংশগ্রহণ। এর মধ্য দিয়েই মূলত আমরা বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, সেই মর্যাদা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে পারব।
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে থাকে, পরবর্তীকালে দেশের নাম হয়ে থাকে, কিন্তু দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় হয়, তবে সেটা আলাদা। সেদিক থেকে আমাদের যে বাংলাদেশ, সেখানে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন যে অঞ্চলে বাস করে, যে অঞ্চলটি মূলত বাংলা অঞ্চল এবং পরবর্তীকালে যেটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে। বাংলাদেশে যেহেতু মূল ভাষা হচ্ছে বাংলা, এই বাংলা ভাষাকে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। আসলে বাংলা ভাষার লড়াইটি খুব গভীর। বাংলা ভাষা সব সময়ই লড়াই করে টিকে ছিল। বহু আগে এটি সংস্কৃত পণ্ডিতদের, তাঁদের চাপিয়ে দেওয়া রীতিনীতির বিরুদ্ধে গণমানুষের বাংলা ভাষা লড়াই সংগ্রাম করে গণমানুষের মুখে মুখে টিকে ছিল। যারা অভিজাত, অভিজাতেরা বাংলা ভাষা বলত না। পরবর্তীকালে ফারসি হলো রাজভাষা। রাজেন্দ্রবর্গরা ফারসিতে কথা বলতেন, রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ অভিজাতদের ভাষা ছিল ফারসি। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেছেন। এরপর যখন ইংরেজরা এল, ইংরেজরা এসে রাজকার্যে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য দিল এবং তারা ইংরেজিতেই কথা বলতেন। তখন সাধারণ মানুষ বাংলায় কথা বলে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রেখেছেন। এরপর যখন পাকিস্তানিরা এল, পাকিস্তানিরা এসে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বা দেশের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করল। তখনো কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাষা বাংলাকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। এবং ১৯৫২ সালে সাধারণ মানুষ যারা, তারা রক্ত দিয়েছিলেন, সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, যাঁদের নাম আমরা জানি।এ কারণে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনটি বাঙালির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালি মূলত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রের ভাষা করেছে। এই ভাষাটি স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরপরই মৌখিক স্বীকৃতি ও পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বলে একটি রাষ্ট্র গঠিত হলো এবং সেখানে ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণীত হয়, যে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। এই স্বীকার প্রদানের পরবর্তীকালে সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের একটা চেষ্টা চলে। যদিও সেই চেষ্টাটি সার্বিকভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালিবিরোধী অপশক্তি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাকেও মূলত হত্যা করে। এ কারণে চারদিকে ইংরেজি ভাষার প্রভাব বিস্তার হতে দেখা যায়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বাড়ে, ক্যাডেট কলেজ বাড়ে, ইংরেজিতে অফিস-আদালত চলে, এমনকি চারদিকে বাংলা ভাষাকে অপমান বা হেয়প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা চলে। বাংলা ক্যালেন্ডার বর্জিত হয়, সম্পূর্ণভাবে খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা পর্যায়ে আবার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাকে মর্যাদা প্রদানের প্রশ্ন আসে এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে, পার্লামেন্টের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রসংঘ বা জাতিসংঘ তার যে সংস্থা ইউনেসকো, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এর পেছনে কানাডাপ্রবাসী কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের দুজনের নাম আমাদের সবার কাছে জানা, একজন রফিকুল ইসলাম, অপরজন আব্দুস সালাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি যে রক্তদান করেছিল, সেই ইতিহাসটি সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ অবগত হয় এবং তারা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে মনে করে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সারা পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ তার মাতৃভাষা রক্ষার জন্য, মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, এটি বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
বর্তমান কালে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, যে মর্যাদা ১৯৭২ সালে আমরা দেখেছিলাম, যে মর্যাদার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই মর্যাদার খানিকটা ব্যত্যয় আমরা লক্ষ করি। এবং সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনেও আমরা এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করছি। আমাদের যে পত্রপত্রিকা, সেখানের বাংলা লেখা, আমাদের যে প্রচার ফলক রয়েছে, সাইনবোর্ড রয়েছে, সেসব জায়গায় যে বাংলা লেখা, আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা লেখার প্রতি যে অনীহা এবং ভুল লেখা, সেটি আমাদের চোখে পড়ে। আর তাতে মনে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বেশ সংকটেই রয়েছে। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তার মর্যাদাকে আরও বেশি বাড়ানোর জন্য, তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাকে আকর্ষণীয় করবার জন্য, বাংলার আধুনিকায়ন খুব করে জরুরি। সেদিক থেকে জাতির মননের প্রতীক ‘বাংলা একাডেমি’ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিধান প্রণয়ন, পরিভাষা কোষ, বাংলা বানানের নিয়ম এবং বাংলায় প্রচুর বই প্রকাশ আমরা দেখেছি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি করে বাংলার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে নানান ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তবর্ণগুলো, বানানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন থাকে, সেগুলো নিয়ে যখন আগ্রহীরা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায় না। যদি সত্যিই বাংলা ভাষা নিয়ে সব সময় গবেষণা করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান হতো বা বাংলা একাডেমির মধ্যেই কোনো একটি শাখাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হতো, প্রতিনিয়ত গবেষণা করা, পণ্ডিতদের মত, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতকে প্রভাবিত করা, তাহলে বোধকরি বাংলা আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও একটু এগিয়ে যেত। এর সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার যুক্ত করা যায়, বাংলা লেখনীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যবহার। বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা খুব জরুরি। প্রযুক্তির সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে সহজেই যাতে বাংলাকে মানুষ ব্যবহার করতে পারে, সেই কাজটি রাষ্ট্রেরই করতে হবে।
উচ্চশিক্ষাতেও বাংলা ভাষার প্রচলন খুব জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে স্লোগান বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রচলন শুরু হয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা— এই নানা ক্ষেত্রে বাংলাতে পড়ানোর জন্য একধরনের আগ্রহ দেখা যায়। এ সূত্রে বিশেষভাবে স্মরণ করি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক, তখন ইংরেজিতে লেখা রসায়ন বই বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য। এটি তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে কাজটি করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যে দেশ উন্নত হয়েছে, সেই দেশগুলোর প্রায় সবাই মাতৃভাষাতেই উচ্চশিক্ষা দিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ডসহ সব দেশের নামই বলা চলে, যারা মূলত উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা ব্যবহার করে থাকে। সেদিক থেকে বাংলা ভাষাকে যদি উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যায়, তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অনুবাদ। আর অনুবাদের জন্য একটা অনুবাদ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আমাদের সর্বস্তরে বাংলার ক্ষেত্রে যে সংকট, সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ইচ্ছের সংকট। আমাদের অনেকেই ইচ্ছে করে বাংলা লেখেন না বা বাংলায় বলেন না এবং এর পেছনে তাঁরা অনুযোগ করে থাকেন, বাংলা বানান নাকি খুব বিভ্রাটপূর্ণ, ভুল হয়ে যেতে পারে—এ কারণে বাংলাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষা, বিশেষত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাংলা বানান, বানান রীতিকে সহজবোধ্য ও জনবান্ধন করা দরকার। সবশেষে আমি এটাই বলতে চাই, বাঙালিরা যেহেতু বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন, চিন্তা করে থাকেন, মাতৃভাষাই তার প্রধান ভাষা, সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ভাষাবিদ, শিক্ষিত মানুষ ও ভাষাপ্রেমীদের সার্বিক অংশগ্রহণ। এর মধ্য দিয়েই মূলত আমরা বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, সেই মর্যাদা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে পারব।
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। বাংলা ভাষাও ঠিক সেভাবেই তার উৎপত্তি ঘটেছিল। এর কোনো জন্ম ছিল না। মানুষের যেমন জন্ম হয়, পশুপাখির যেমন জন্ম হয়, ভাষার জন্ম ঠিক সেভাবে নয়। এটি একটি পরম্পরাজাত এবং এই পরম্পরার মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা বিকশিত হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতেই মূলত ভাষার নামে অঞ্চলের নাম হয়ে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫