Ajker Patrika

কলাপাড়ার গোলের গুড়

মোয়াজ্জেম হোসেন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
কলাপাড়ার গোলের গুড়

আখ, খেজুর আর তালের রসে বানানো গুড়ের বাইরে কত ধরনের গুড় দেখেছেন? মাথা চুলকাবেন না। বলে দিচ্ছি। দক্ষিণ ভারতে নারকেলের রস থেকে গুড় হয়। পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে তরমুজ থেকেও গুড় তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তবে সে প্রচেষ্টা সফল নাকি ভেস্তে গেছে, তার সংবাদ জানা যায় না। কিন্তু আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল কলাপাড়ায় সফলভাবে গোলগাছের রস থেকে গুড় তৈরি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ নোনা জলাভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোলবাগান। একটি গোলবাগান থেকে বছরে প্রায় চার মাস রস সংগ্রহ করা যায়। এসব বাগানকে কেন্দ্র করে দুই দশক যাবৎ রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা চলছে প্রায় আট শ পরিবারের। শীতের বিকেলে গোলগাছের ডালের ডগা কেটে হাঁড়ি পাতেন গাছিরা। রাতভর তাতে জমা রস সংগ্রহ করা হয় ভোরবেলা। পরে বড় পাত্রে সে রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় গোলের গুড়। গাছিরা প্রতি কেজি গুড় বিক্রি করেন ১৭০ থেকে ২০০ টাকায়।

গোলের রসে তৈরি গুড়ে মিষ্টির পরিমাণ কম বলে ডায়াবেটিস রোগী থেকে শুরু করে সবাই এটি খেতে পারেন। সে কারণে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে এ গুড়ের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, বিভিন্ন কারণে গোলবাগান ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে গুড় তৈরির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাগান ধ্বংসের ফলে রোজগার কমে যাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গোলগাছ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে কৃষি বিভাগও!

এ অঞ্চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে গাছিরা গোলগাছের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে আসছেন। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের গাছি পরিমল হাওলাদার (৬৫) জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ, তেগাছিয়া, নবীপুর গ্রামের ২৫ জন কৃষক গোলগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। একই গ্রামের ৯০ বছর বয়সী শিখা রানী জানান, ৭০ বছর ধরে গোলের রস থেকে গুড় তৈরির কাজ করছেন তিনি! একসময় প্রতিটি গাছ থেকে ১০-১৫ কলস রস পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে ৮ কলস রস।

নবীপুর গ্রামের গাছি হরি নারায়ণ মিত্র (৮৫) জানান, পারিবারিকভাবে তাঁর পরিবার প্রায় ১৫০ বছর ধরে এ পেশায় নির্ভরশীল। এই গাছির স্ত্রী পারুল মিত্র (৭০) জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে কয়েক যুগ ধরে গুড় তৈরি করে আসছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে গোলগাছের সংকটে তাঁদের পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাঁর ছেলেমেয়ে ও পুত্রবধূ গুড় তৈরির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।

গাছিরা জানিয়েছেন, প্রকৃতি রক্ষা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বনায়নের পাশাপাশি গোলগাছ সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম আর সাইফুল্লাহ জানান, গোলগাছ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরবাড়ি তৈরি, গুড় উৎপাদনসহ বিভিন্নভাবে হাজারো মানুষ এর ওপর নির্ভরশীল। ফলে গোলবাগান রক্ষায় তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। গোলবন সংরক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদীতীরসহ নোনা জলভূমিতে গোলচারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে বর খুন, নিখোঁজ নববধূকে উদ্ধারে নেমেছে ড্রোন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার ও কিছু প্রশ্ন

‘তাণ্ডব’ সিনেমার শো চলার সময় ছায়াবাণী হলে দর্শকদের ভাঙচুর, টাকা লুট

‘৫ মিনিট রুলস’ যেভাবে ইলন মাস্কের জীবনে সাফল্য আনল

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের বাজার দখলের চেষ্টা ভারতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত