Ajker Patrika

পাহাড়ে শান্তি বজায় থাক

সম্পাদকীয়
পাহাড়ে শান্তি বজায় থাক

একটি মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য তিন জেলা হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলিতে খাগড়াছড়িতে তিন এবং রাঙামাটিতে একজন নিহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক সরকারি স্থাপনা এবং দোকানপাট। বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার এসব ঘটনা ঘটে। নতুন করে সহিংসতা এড়াতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও একই আহ্বান জানানো হয়েছে।  

কী হয়েছিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়? আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ার রাস্তায় মামুন নামের একজনের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের তথ্যমতে, মামুন বাইক চুরি করে দ্রুতগতিতে পালাতে গিয়ে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হলে তাঁকে ধাওয়া করা লোকজন পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মামুনের মৃত্যু হয়। খাগড়াছড়ি থানা-পুলিশ জানিয়েছে, মামুনের বিরুদ্ধে ১৪টি চুরির মামলা এবং ২টি মাদক মামলা ছিল। 

গণপিটুনিতে মামুনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পাহাড়িরা বাধা দিলে একপর্যায়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয় এবং বনরূপা, দক্ষিণ কালিন্দপুর, বিজন সারনি, উত্তর কালিন্দপুর, হাসপাতাল এলাকার একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলসহ শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি জেলা মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় অফিসের যানবাহন। 

খাগড়াছড়ির জেলা পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘দীঘিনালায় দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দীঘিনালায় সব কমিউনিটির লোকের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন ঘটনা কেউ চাননি। শান্তি স্থাপনে আমাদের যা যা করণীয়, আমরা সর্বোচ্চ করব।’ 

জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং যাঁরা আহত হয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছে।’ 

ঘটনার জন্য পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষ থেকে পরস্পরকে দায়ী করা হচ্ছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাত-সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়িরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভও করছেন।  

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় বলা হয়েছে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি শিগগিরই গঠন করা হবে। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

আমরা আশা করব, পাহাড়ে শান্তি রক্ষার স্বার্থে কোনো ধরনের গুজব না ছড়িয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত