দ্বন্দ্বের অবসান চায় তৃণমূল

সাত বছর পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন নেতা-কর্মীরা। পদপ্রত্যাশী নেতারা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ধরনা দিতে শুরু করেছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে জেলার শীর্ষ পদে কে আসছেন—তা নিয়ে আলোচনা।

আসন্ন এই সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অবসান হবে, নাকি তা আরও বাড়বে এ নিয়ে দোলাচলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের প্রত্যাশা নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অবসান হোক। দলের লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করুক নেতারা।

জানা গেছে, এক যুগ পর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে নজরুল ইসলাম হিরু সভাপতি ও আব্দুল মতিন ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। পৃথকভাবে পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। এই দ্বন্দ্বের জেরে ২০২০ সালের নভেম্বরে সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সে সময় সহসভাপতি জি এম তালেবকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এদিকে আসন্ন সম্মেলন নিয়ে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মেনে ১৭ সেপ্টেম্বর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হচ্ছে এ সম্মেলন। দীর্ঘ সাত বছর পর এই সম্মেলন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ দুই পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতার কথা ঘোষণা না করলেও দলের গোপন সূত্র ও নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি পদে রয়েছেন নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন, সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব।

সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সাবেক পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি কামরুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, জেলার পদবঞ্চিত কিছু নেতা একটি প্ল্যাটফর্মে ও পদধারী নেতারা তাঁদের নিজ বলয়ে দলীয় রাজনীতি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। তাঁদের এই বিভক্তির রাজনীতি প্রভাব ফেলেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানান, বর্তমানে দুই গ্রুপের কোন্দলের কারণে প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। নইলে দলের ভাবমূর্তি আরও খারাপের দিকে যাবে।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব বলেন, ‘সকল নেতা-কর্মীর প্রত্যাশা এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ সব ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে।’