Ajker Patrika

তুলসীপুরের ঘোড়ার হাট

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
Thumbnail image

ঘোড়ার নাম টাট্টু—সে আমরা সবাই জানি। তবে এর নাম যদি হয় কিরণমালা, বাহাদুর, রাজা, রানি কিংবা তাজিয়া! একটুখানি কৌতুক বোধ করতেই পারেন। আবার ঘোড়ার নাম যদি হয় পারলে ঠেকাও, বিজলি কিংবা খাসি, কিছুটা তাজ্জব হয়ে যেতেই হয়। এমনি ‘তাজ্জব’ করা ঘোড়ার দেখা পাওয়া যাবে তুলসীপুর হাটে।

এক সময় বাহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ঘোড়া ও ঘোড়ায় টানা গাড়ি। কালের বিবর্তনে বাহনের মাধ্যম হিসেবে এগুলোর প্রচলন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে কোথাও কোথাও ‘ঐতিহ্য’ হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মানুষ এখনো ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির প্রতি এক দারুণ আকর্ষণ অনুভব করে। হয়তো সে জন্যই চল্লিশ বছর ধরে তুলসীপুরে নিয়মিত বসছে ঘোড়া বিকিকিনির হাট।

জামালপুর সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলসীপুর। জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে তুলসীপুর ডিগ্রি কলেজ। প্রতি বৃহস্পতিবার এই মাঠেই বসে দেশে টিকে থাকা ঘোড়া কেনাবেচার বড় হাটটি। শেরপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে আসছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে।

এক বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তুলসীপুর কলেজ মাঠে বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে ঘোড়া বেচাবিক্রি। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে সরগরম হাটে দাঁড়িয়ে থাকা তাগড়া ঘোড়াগুলোকে দেখে মনে হয়, ধূসর ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এ প্রাণীগুলো খানিক বিরক্ত! পুরোনো মালিকের কাছ থেকে নতুন মালিকের কাছে যেন যেতে চাইছে না। অনিচ্ছা উপেক্ষা করেই হাতবদল হচ্ছে খয়েরি বা গাঢ় খয়েরি রঙের ঘোড়াগুলো।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই হাটটি ঘোড়া কেনাবেচার জন্য আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়া কেনাবেচা হয় এখন। প্রতিটি ঘোড়া ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ বা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে বেচাকেনা হয় ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এই হাটে আসেন বলে কর্তৃপক্ষ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার জন্য এখানে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

সম্প্রতি এই হাটে দেখা হয় সিলেট থেকে ঘোড়া বিক্রি করতে আসা ফুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০ বছর হলো এই হাটে ঘোড়া বিক্রি করছেন। এটি দেশের সব চেয়ে বড় ঘোড়ার বাজার বলে তাঁর মনে হয়। সারা দেশের ঘোড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে এই হাট পরিচিত। বেচাকেনাও ভালো। হাটের পরিচালনাকারীরা সব ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন।

টাঙ্গাইলের বাবুল মিয়া বলেন, বাজারে ঘোড়ার দাম কম। এখন ৪০ হাজার টাকার বেশি ঘোড়ার দাম উঠছে না। হাট পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মিস্টার জানিয়েছেন, প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়া বেচাকেনা হয় এই হাটে।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান জানান, জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুর বাজারের এই ঘোড়ার হাট ঐতিহ্যবাহী। এখানে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঘোড়া কিনতে আসে। এ হাটকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত