Ajker Patrika

সোনা গলানো অ্যাসিডের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

তেরখাদা (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০৪
সোনা গলানো অ্যাসিডের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

পরিবেশ আইন অমান্য করে তেরখাদা উপজেলা সদরের কাটেংগা বাজারে সোনার গয়না তৈরির দোকানগুলোতে নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে সোনা গলানো হচ্ছে। বিজ্ঞান অনুযায়ী এসব অ্যাসিড থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া মানুষের জন্য বেশ ক্ষতিকর। সোনা গলানোর সময় সৃষ্ট এ ধোয়ার কারণে এলাকাবাসী গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে দাবি উপজেলার সচেতন নাগরিকদের।

২০০৪ সালের অ্যাসিড বিধি গেজেটের ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী প্রয়োজনে বিনা লাইসেন্সে কোনো ব্যবসায়ী কোনো অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারবেন না। অথচ জানা গেছে, পুরো তেরখাদায় অ্যাসিড দিয়ে সোনা গলানোর লাইসেন্স রয়েছে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের। বাকি দোকানগুলো লাইসেন্স ছাড়াই অ্যাসিড ব্যবহার করে সোনা গলানোর কাজ করে যাচ্ছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে কারিগরেরা খোলা জায়গায় পাইপ লাগিয়ে সোনা গলানোর কাজ করছেন। এসব গয়নার দোকানের সঙ্গেই বস্ত্রালয়, মুদি দোকান, কসমেটিকস, চায়ের দোকানসহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার দোকানগুলোর পাশেই প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে সোনা গলানোর ধোঁয়া আশপাশের ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢুকছে।

বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কাটেংগা বাজারে এলে সোনার দোকান থেকে নির্গত ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে।’ আরবী আক্তার নামের আরেক নারী জানান, সোনার গয়না তৈরির দোকানগুলোর পাশ দিয়ে গেলে ধোঁয়ায় কাশি এসে যায়।

বাজারের এক ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা যাঁরা এখানে নিয়মিত ব্যবসা করি, তাঁদের এখানে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রথম দিকে অসুবিধা হলেও এখন আর কিছু মনে হয় না।’

স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘এ বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ছোটবড় ৩০টি সোনার গয়না তৈরির দোকান রয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠানের অ্যাসিড ব্যবহারের লাইসেন্স আছে। অন্য কারও অ্যাসিড ব্যবহারের লাইসেন্স আছে কি না তা আমার জানা নেই। আমাদের সমিতির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই, যে যাঁর মতো করে চলেন। কেউ কারও নিষেধ শোনেন না।’

কাটেংগা বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভুট্ট বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মানুষজনের কাছ থেকে অনেক বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়। সোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এর একটা বিহিত করা হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অ্যাসিডের এই ধোঁয়া বিষাক্ত। এ ধোঁয়া চোখে গেলে চোখে প্রদাহ শুরু হয়। তা ছাড়া এ ধোয়া হৃদরোগীদের জন্যও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদা সুলতানা বলেন, ‘জনবহুল বাজারের সোনা গলানোর জন্য অ্যাসিড ব্যবহার করা যাবে না। অ্যাসিডের ধোঁয়া পরিবেশের হুমকি স্বরূপ, এ কথা শতভাগ সত্য। যাঁরা এ ধরনের অবৈধ কাজ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত