বয়স্ক, বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় আ.লীগ

কুড়িগ্রামের চিলমারী ও রৌমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। চিলমারীতে বয়স্ক প্রার্থীকে মনোনয়ন এবং রৌমারীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটিকে।

৪ জুলাই রৌমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ এবং ২২ আগস্ট চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম মারা যান। পরে ওই দুই উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার এই উপনির্বাচন ভোট হবে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, চিলমারী উপজেলায় পাঁচ এবং রৌমারী উপজেলায় সাতজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চিলমারী: চিলমারীতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সোলায়মান আলী সরকার (৭৫)। তিনি সদ্য প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকারের বড় ভাই এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের শ্বশুর। চিলমারীতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিজ দলের প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এলেও উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিয়ে চিন্তিত দলের নেতা-কর্মীরা।

উপজেলায় কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর বয়স, অসুস্থতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত অবস্থান দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভাবাচ্ছে। আর স্থানীয়রা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী রুকুনুজ্জামানের (আনারস প্রতীক) সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। রুকুনুজ্জামান জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। 

নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নেওয়া উপজেলার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে গুঞ্জন আছে যে, আমাদের প্রার্থীর বয়স অনেক বেশি এবং তিনি অসুস্থ। তিনি ভোটারদের কাছে তেমন যেতে পারেন না। এ অবস্থায় তাঁর বিজয় নিয়ে আমরাও শঙ্কায় আছি। যেহেতু দলীয় প্রার্থী, এ জন্য আমরা নৌকার ভোট চাইতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। বাকিটা ভোটারদের সিদ্ধান্ত।’

পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে দলটির উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু বলেন, ‘প্রথম দিকে এমন গুঞ্জন ছিল; কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচারণা এবং ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান আলী সরকার বলেন, ‘মনে করি না হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাঁদের (প্রতিদ্বন্দ্বীদের) কোনো দল নেই। নৌকা প্রতীক বড় ব্যবধানে জয়লাভ করবে।’

রৌমারী: অন্যদিকে রৌমারী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অপর ছয় প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অব্যাহতি পাওয়া) জাইদুল ইসলাম মিনু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত উপজেলার একাধিক ব্যক্তি ও ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা জানান, রৌমারীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলের তিনজন সক্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কর্মী-সমর্থকেরাও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী (দোয়াতকলম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমান আলীর (ঘোড়া) অবস্থান অনেকটা ভালো। মূলত দলীয় নেতাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে না পারায় উপজেলায় নৌকা প্রতীকের ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজের প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল ইসলাম।