Ajker Patrika

উৎসব থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হবে পাপ

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৩৩
উৎসব থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হবে পাপ

দুটি সংবাদ, দুটি ঘটনা। দুটি ঘটনাই এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একটি হলো, এ বছর এক হাজার মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে না। যদিও পুলিশ ও সেনাবাহিনী পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এর আগেও পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশ রাখা হতো, তারপরও দু-একটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন একটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবার হয়তো কোনো আগাম তথ্যের ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছে। একসময় ধর্মভিত্তিক দলগুলো বলেছিল, মাদ্রাসার ছাত্ররা পূজামণ্ডপ ভাঙবে। এবার এ রকম একটি ভয়ের পূর্বাভাস কী করে পাওয়া গেল, এটি একটি বড় প্রশ্ন।

যুগ যুগ ধরে এ দেশে সব ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের উৎসব পালন করে আসছে। দ্বিজাতি শাসন থাকলেও উৎসব পালনে কোনো ধরনের তাণ্ডব নেমে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের আগেই ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়েছে এবং স্বাধীন দেশের সংবিধানে তা স্থান পেয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে গত ৫৩ বছরে হিন্দুদের উৎসবে ভাঙচুর হয়েছে, সংখ্যালঘুরা ভীত হয়েছে এবং বেশ কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশত্যাগ করেছে। শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নয়, বিশেষ জাতিসত্তার মানুষেরাও দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেছে।

এবারের দুর্গাপূজা ছাড়াও আরেকটি ঘটনা ঘটেছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে। তিন দিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ নেতারা তাঁদের কঠিন চীবরদান উৎসব সংবাদ সম্মেলন ডেকে বন্ধ করে দিয়েছেন। তার কারণ হলো, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির আক্রান্ত হয়েছে, তাদের দানবাক্সে যে অর্থ জমা ছিল, তা-ও অনেক জায়গায় লুট করা হয়েছে। এর আগে একবার ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণার ফলে বৌদ্ধমন্দির এবং তাদের বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে। সেই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনার কোনো তদন্ত বা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা শোনা যায়নি। যে দেশে সংবিধান সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করেছে, সেই দেশে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দুঃখজনক শুধু নয়, লজ্জাকরও বটে। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে একেবারে সহ্য করতে পারছে না।

সব ধর্মেরই শিক্ষা সহনশীলতা, ধৈর্য এবং অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখানো। ১৯৬৪ সালে ঢাকা শহরের শাঁখারীবাজারে দাঙ্গার সূচনা হয়েছিল। সেটিকে থামাতে গিয়ে একজন মুসলমান পুলিশ সার্জেন্ট প্রাণ দিয়েছিলেন। তখন আশপাশ এলাকার মুসলমানরা অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সেই দাঙ্গাকে প্রতিহত করেছিল। আশির দশকে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দাঙ্গার চেষ্টাকে জনগণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। সম্প্রতি যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো এবং নানা ধরনের সংস্কারের সূচনাও এই জনগণই করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে এই বার্তা কেন পৌঁছানো গেল না যে ধর্মের নামে কারও প্রতি অসহনশীল আচরণ করা যাবে না?

কিছুদিন আগে বেশ কিছু মাজার ভাঙা হয়েছে। মুসলমানদের মাজার মুসলমানরাই ভেঙেছে। একই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটি একটি সংঘাতে পরিণত হলো। এ অবস্থায় অন্য ধর্মাবলম্বীরা ভয় পাবে, এটাই স্বাভাবিক। মাজার ভাঙচুর হওয়ার পর এটা নিয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। সংঘাতকারীরা নির্বিঘ্নে অনেকগুলো মাজার ভেঙে পার পেয়ে গেছে।

দাঙ্গার পেছনে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও আরেকটি বড় বিষয় জড়িত, তা হলো লুণ্ঠন এবং সম্পত্তির অধিকার। একসময় সংখ্যালঘুরা পানির দামে নিজের বসতবাড়ি ও জায়গাজমি বিক্রি করে ভারতে চলে যেত। কিন্তু তারপর আর বেচাবিক্রি নয়, ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ নিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে যাওয়াটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেকোনো অভ্যুত্থান মানুষকে একটি বড় বার্তা দেয়, তা হলো মুক্তি। অনাচার, অবিচার, লুটপাট, অন্যের সম্পত্তি লুণ্ঠন—এসব থেকে মানুষ মুক্তি পায়। সেই গুণগত পরিবর্তনগুলো আমরা অতীতে সাময়িক হলেও দেখেছি। কিন্তু এবার তার ব্যাপকতা দেখতে পাওয়া গেছে এবং সাবেক ক্ষমতাসীন সরকারের ঘরবাড়ি এমনকি সরকারি স্থাপনাও লুটপাটের শিকার হয়েছে। যেসব ছাত্র প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, তাঁরা এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাহলে কারা করল?

যাদের জন্য আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয় এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব কঠিন চীবরদান বন্ধ করে দিতে হয়।

এখন পর্যন্ত বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে সম্ভবত সরকারের কোনো মহল আলোচনায় বসেনি। এসব ঘটনা শুধু যারা ভুক্তভোগী তাদের জীবন আতঙ্কিত করে তোলে তা নয়, বিশ্বে আমাদের জাতিগত মর্যাদাও ক্ষুণ্ন করে। একশ্রেণির লোক এটা থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। বিদেশে যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, তারাও একটা সুযোগ পেয়ে যায়। এই সুযোগ বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ আশ্বাসে এবং সরকারের ব্যবস্থা নেওয়াতে মানুষ যে আতঙ্ক থেকে মুক্তি পায়নি, তার প্রমাণ এক হাজার মণ্ডপে পূজা না হওয়া। বৌদ্ধরাও উৎসবে আগাম সন্ত্রাসী হামলার কারণে কঠিন চীবরদান উৎসব বন্ধ করে দিয়েছে।

গতকাল এক হিন্দু ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের কোনো এক গ্রামে। প্রতিবছর তাঁর বাড়িতে দুর্গপূজা হতো, এবার সেটা হচ্ছে না। তিনি ঢাকায় থাকেন বটে, কিন্তু পূজার সময় অবশ্যই বাড়িতে যান। এবার তিনি যাচ্ছেন না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার বাড়িতে পূজা হচ্ছে না, তাহলে যেতে অসুবিধা কী?’ তিনি জবাব দিতে চাইলেন না, আমি পীড়াপীড়ি করায় অনুচ্চকণ্ঠে শুধু এটুকু বললেন, ‘ভয় করছে।’ এই যে ভয়, এই ভয় কারা সৃষ্টি করে? তাদের মধ্যে কি দ্বিজাতি তত্ত্বের ভূত এখনো রয়ে গেছে? ভারতের ধর্মভিত্তিক একটি গোষ্ঠী যেমন চায় তাদের দেশে হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে! বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে রামমন্দির তৈরি করা তার প্রমাণ বহন করে। আবার বাংলাদেশের একটি গোষ্ঠীও শুধু মুসলমানদের জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়।

কিন্তু এটাও প্রমাণিত যে উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে হিন্দুদের সম-অধিকার সুনিশ্চিত। প্রশাসনে, পুলিশে, শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বত্র উল্লেখযোগ্য হিন্দু মানুষ কাজ করছেন। কোনো দিন তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব করা হয়নি। কিন্তু কতিপয় গোষ্ঠী নানা ধরনের অপপ্রচার করে গুজব রটিয়ে দিনের পর দিন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। আমাদের বাংলাভাষাভাষীর মধ্যে কিছু অখণ্ড বিষয় আছে, যেমন সংস্কৃতি। যেহেতু ভাষা এক, তাই আমরা একটা অখণ্ড সাহিত্যচর্চা করে থাকি। সংগীত, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, নাটক, নৃত্য—এসবের মধ্যে বৃহত্তর একটা ঐক্য দেখা যায়। যদিও মাঝখানে একটি কাঁটাতারের বেড়া রয়ে গেছে।

ধর্মের ক্ষেত্রে আমাদের ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু সুফিদর্শন অন্য ধর্মের প্রতি যে উদারনীতি আমাদের শিখিয়েছে, তাতে সংঘাত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ইসলামের যে বাণী সুদূর মধ্য এশিয়া থেকে আমাদের দেশে এসে পৌঁছেছে, তা পরস্পরের সহাবস্থানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যে ধর্মপ্রচারকেরা এ দেশে এসেছেন, তাঁরা দুই ধর্মের মানুষকেই বুকে টেনে নিয়েছেন। যে কারণে বিভিন্ন মাজারে দেখা গেছে হিন্দ, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করছেন। সম্প্রীতির সহযোগিতার এক মিলনকেন্দ্র আমাদের বাংলাদেশ। যে মুসলিম শাসকেরা ভারতবর্ষ শাসন করেছেন, তাঁদের মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা স্থান পায়নি। তাঁদের শাসনে সেনাবাহিনীতে, সুবেদারদের মধ্যে উভয় ধর্মাবলম্বীরা কাজ করেছেন।

ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর তাদের লুণ্ঠনকার্যের সহায়তার প্রয়োজনে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ চর্চা করতে থাকে। তাদের শাসন প্রলম্বিত করার জন্য এই ব্যবস্থা তাদের প্রয়োজন ছিল। বিষয়টা এত গভীরে তারা নিয়ে গেছে যে সাতচল্লিশের দেশভাগের প্রাক্কালে এক বিরাট দাঙ্গার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ওই সময়ের শাসকগোষ্ঠী হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করার অপপ্রচারের চেষ্টা করে। লিওনার্দো মুজলে বলে এক লেখক তৎকালীন কলকাতার দাঙ্গাবিধ্বস্ত একটি চিত্র এঁকেছিলেন—কলকাতার একটি এলাকায় আগুন জ্বলছে, লুণ্ঠন হচ্ছে, রক্ত ঝরছে; কিন্তু এর মধ্য দিয়ে একজন ব্রিটিশ নারী সাইকেলে করে রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে যাচ্ছে, তার ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন ঘটছে না। ব্রিটিশ শাসকেরা এই দাঙ্গায় কোনোভাবে আক্রান্ত হননি। দাঙ্গার পর নিরাপদে তাঁদের লুণ্ঠিত সম্পদ নিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গেছেন।

আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। কেন আমরা পরস্পরবিরোধী স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ব? কেন এই আতঙ্কের সৃষ্টি হবে? ধর্মে রাজনৈতিক ব্যবহার যত দিন থাকবে, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না। বেশি দিন আগের কথা নয়, আমরা দেখেছি কখনো কখনো ঈদ ও পূজা একসঙ্গে পড়েছে, কিন্তু কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। খ্রিষ্টানরা বিশাল আনন্দের সঙ্গে ক্রিসমাস উদ্‌যাপন করেছে, বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা কঠিন চীবরদান পালন করেছে এবং বিশেষ জাতিসত্তার মানুষেরাও তাদের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করে গেছে। মানুষ সবাই নিঃসঙ্গ, কিন্তু উৎসব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে জীবনে প্রেরণার সঞ্চয় করে। জীবনের এই প্রেরণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন জামাকাপড়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় আচার, উন্নত খাবার—এসব আয়োজনের মধ্য দিয়েই নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে মানুষ। সেই স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করা হবে পাপ—মহাপাপ।

লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত