Ajker Patrika

নদী ভাঙনে দিশেহারা মুন্ডারা

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৩
নদী ভাঙনে দিশেহারা মুন্ডারা

খুলনার কয়রা উপজেলার তিন ইউনিয়নে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মুন্ডা ও মাহতোদের বাস। জলবায়ু পরিবর্তন ও বারবার নদী ভাঙনের ফলে সব হারিয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের উন্নয়নে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তাঁরা সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ মুন্ডাদের।

জানা গেছে, প্রায় আড়াই শ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড এলাকা থেকে মুন্ডারা এই অঞ্চলে আসেন। বর্তমানে উপজেলার কয়রা, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে মুন্ডা ও মাহাতো সম্প্রদায়ের ৩৪০ পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাবকে পুঁজি করে ভূমিদস্যুরা তাঁদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে।

একদিকে করোনা অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে এলাকায় কাজ না থাকায় আদিবাসী পরিবারগুলোতে অভাব-অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে কাজের সন্ধানে কেউ কেউ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে না পাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা এবং জায়গা-জমি থেকে শুরু করে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি পর্যন্ত হারাতে বসেছেন তাঁরা।

গত বুধবার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখানে মুন্ডা সম্প্রদায়ের ৪৫টি পরিবারের ২০৯ জনের বসবাস। তাঁদের বেশির ভাগই ভূমিহীন। শাকবাড়িয়া নদীর চরের জমিতে ঘর তুলে বাস করছেন অনেক পরিবার।

দুই একটি পরিবারের নিজ ভিটেবাড়ি থাকলেও নেই ফসলি জমি। সরকারিভাবে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রদত্ত ঘর রয়েছে তিনটি পরিবারের। অধিকাংশ বসবাসের ঘরগুলো মাটির তৈরি এবং গোলপাতা ও পলিথিনের ছাউনি। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

বড়বাড়ি গ্রামের বলয় কৃষ্ণ বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্ডা ও মাহতো পরিবারগুলোর কৃষিই ছিল জীবিকার প্রধান উপায়। চিংড়ি চাষের কারণে এলাকায় কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এসব পরিবারের সদস্যরা। এখন বেশির ভাগ পরিবারের প্রধান পেশা সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া শিকার। মাছ ও কাঁকড়া শিকারের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন হয় তা দিয়ে পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

২ নম্বর কয়রা গ্রামের স্বপ্না মুন্ডা বলেন, ‘কেন জানি না আমরা বরাবরই সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকি।’

তিনি জানান, তাঁদের এ গ্রামের ২৫টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ২ জন বয়স্ক ভাতা, ১ জন বিধবা ভাতা ও একজন ভিজিএফ সুবিধা পাচ্ছেন। করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনার টাকার জন্য তাঁদের অনেকের নামের তালিকা করা হলেও সব মিলিয়ে ১০টি পরিবার এ সুবিধা পেয়েছে।

তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর কিছু শুকনা খাবার ছাড়া তাঁরা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মুন্ডা সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে আইআরভি নামক একটি সংগঠন।

এ অঞ্চলে কাজ করা এনজিও ইনিশিয়েটিভ ফর রাইট ভিউয়ের (আইআরভি) নির্বাহী পরিচালক মেরিনা যূথী বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন চাইলে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। সহযোগিতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আদিবাসী মুন্ডা ও মাহাতো জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার, অবাধ তথ্য সরবরাহ, জলবায়ু সহনশীল কর্মসংস্থান, নারী শিক্ষা ও সম্পদের টেকসই ব্যবহারে জোর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইআরভি মুন্ডা ও মাহাতো জনগোষ্ঠীর মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ, কেঁচো সার উৎপাদন, কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ, হাইড্রোফনিক্স ঘাস চাষসহ তাদের দক্ষতা নেতৃত্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’

কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ২১ টন চালের বরাদ্দ পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এগুলো বিতরণ করা হবে।’

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাঁদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এবং উপজেলা পরিষদ থেকেও তাঁদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত