Ajker Patrika

নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৮
Thumbnail image

বটিয়াঘাটা উপজেলাজুড়ে নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় এবং পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নিরাপদ পানির এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ অবস্থায় পানির সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের এ সময় উপজেলার গ্রামাঞ্চলগুলোতে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। ইতিমধ্যে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ থেকে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক সময় নলকূপের মধ্যে পানি দিয়ে হাতল চেপে চেপে পানি তুলতে হচ্ছে। অনেকে নিজ উদ্যোগে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা থেকে ২০-২৫ কেজির পাত্রে ৩০ টাকা দরে পানি কিনে খাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পুকুরের পানি বাড়িতে রেখে সেগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। শুধু বটিয়াঘাটাতেই নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোতেও একই খবর শোনা যাচ্ছে।

একদিকে প্রচণ্ড গরম, আরেকদিকে নিরাপদ পানির তীব্র সংকটে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণ ও আয়রনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গ্রীষ্মকালে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তীব্র পানির সংকট দেখা দেওয়ায় খুলনা নাগরিক ঐক্য পরিষদের সদস্যরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, চলতি মৌসুমে পানির স্তর ২৮-৩৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরও জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতি বাড়িতে কিছু না কিছু পানিবাহিত রোগ-বালাই দেখা দিয়েছে। বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগের প্রকোপ। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা।

উপজেলার যেসব এলাকায় পানির ফিল্টার রয়েছে সে জায়গাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ফিল্টারগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। অধিকাংশ ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কিছু কিছু ফিল্টার ভালো থাকলেও তদারক না করায় সেগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

পানি সংগ্রহ করতে আসা একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি আনতে গিয়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। মাঝেমধ্যে সকাল থেকে বিকেল এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

সোহেলী আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘উপজেলায় বর্তমানে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গভীর রাতে গিয়ে পানির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। রমজানের মধ্যে এভাবেই কষ্ট করে খাওয়ার পানি নিতে হয় আমাদের। উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানির সমস্যা না থাকলেও রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে দায়সারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।’

ইতি খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, ‘ফিল্টার থেকে পানি নিতে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি, দুপুর হয়ে গেছে এখনো সিরিয়াল পাইনি। পানির জন্য এমন কষ্ট আর কত দিন করতে হবে আমাদের? সরকার যদি আমাদের জন্য কিছু করত তাহলে হয়তো একটু বাঁচতাম।’

নাগরিক ঐক্য পরিষদ, খুলনা নগর শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ড. মো. জাকির হোসেন ও সদস্যসচিব কাজী মোতাহার রহমান বাবু বলেন, পানির এ সমস্যা অচিরেই সমাধান হওয়া দরকার। নিরাপদ পানির জন্য মানুষের হাহাকার দেখার মতো না।’ তাঁরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পানির সংকট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

বটিয়াঘাটা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রুনা আক্তার সুমি বলেন, ‘সরকার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পানির সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে পরিত্যক্ত সরকারি পুকুর খনন ও ফিল্টারগুলো সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত