Ajker Patrika

পদক পাওয়া হাসপাতালে এক-তৃতীয়াংশ পদই শূন্য

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ২৫
পদক পাওয়া হাসপাতালে এক-তৃতীয়াংশ পদই শূন্য

চারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদক পাওয়া কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি জনবল-সংকটে ধুঁকছে। হাসপাতালটির ২৭৮টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯৩টি। এর মধ্যে ১১টি কনসালট্যান্ট চিকিৎসক পদের সবই শূন্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সেই থেকে ৩৩টি চিকিৎসক পদের মধ্যে আছেন মাত্র ১২ জন। অফিস সহায়কের তিনটি পদের তিনটিই শূন্য। ১৬টি পিয়ন পদের ১৫টি পদই শূন্য। দুটি আয়া পদে কেউ নেই। তিনটি ওয়ার্ডবয়ের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য। ৩৭টি সেবিকা পদের ৯টি শূন্য। সে সময় রোগীর খাবার ও ওষুধের অনুমোদন দেওয়া হলেও চিকিৎসক পদগুলো ফাঁকা ছিল। ২০২১ সালে চিকিৎসকের অনুমোদন দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

আরো জানা গেছে, প্রায় ৪ লাখ মানুষের একটি মাত্র ৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ থেকে ৯৫ রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০-৫০০ রোগী সেবা নেন। শয্যা, ওষুধ, খাবার ও জনবল-সংকটে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। জনবল না থাকায় অপারেশন থিয়েটার ও ইসিজি যন্ত্র থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থেকে চিকিৎসক ডেকে কিছু কার্য সম্পাদন করা হয়। জরুরি অপারেশন থিয়েটার, আইসিসিইউ, সিসিইউ, ভেন্টিলেটর না থাকায় হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার, স্ট্রোকসহ জরুরি রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। ভর্তি আছেন ৮৯ রোগী। শয্যাসংকটে বারান্দায় ও মেঝেতে রয়েছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায় নারীদের লম্বা লাইন। অর্ধশতাধিক নারী টিকিট কেটে ও টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৩৯৬ জন বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন। অপারেশন থিয়েটারে ঝুলছে তালা। পরিসংখ্যানবিদ একাই অফিস সহায়কসহ চার পদের কাজ করছেন।

এ সময় কথা হয় শিলাইদহ ইউনিয়নের নাওথী গ্রামের গৃহিণী বিউটি খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লম্বা লাইনে প্রায় ২০-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. নুরুন্নবী বলেন, অনেকে আগে টিকিট কাটার জন্য হুড়োহুড়ি করেন।

রোগী ও স্বজনেরা জানান, যেসব রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ছে, তাঁদের জেলা বা বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। অতি সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য যেতে হচ্ছে অন্যত্র। মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তাঁরা আরও জানান, অন্তঃসত্ত্বা রোগীর অনেকেই স্বাভাবিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনেক সময় নানা কারণে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আকুল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক-তৃতীয়াংশ পদ শূন্য রয়েছে। মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিক্যাল জনবল নেই। এ কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বারবার চিঠি দিয়েও ফল হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের জনবল সংকট নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত