Ajker Patrika

৬ বছরেও মেলেনি সেবা

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৬: ১৬
৬ বছরেও মেলেনি সেবা

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার কার্ডিওলজি বিভাগে যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরও চিকিৎসক না থাকায় তালাবদ্ধ দীর্ঘ ৬ বছর। এ ছাড়া ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ৪১ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য। মাত্র ১৬ চিকিৎসক দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। এমন সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু-আল-হাজ্জাজ আজকের পত্রিকাকে জানান, চিকিৎসক-সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, জেলার ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার এই জেনারেল হাসপাতাল। জনবলকাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৪১ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য। শূন্য ৪১ পদের মধ্যে সার্জারি, গাইনি, শিশু, অর্থোসার্জারি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রতিটিতে একটি করে মোট ৭টি সিনিয়র কনসালট্যান্ট, এসব বিভাগসহ ইএনটি, রেডিওলজি, চর্ম ও যৌন, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিনের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১১টি, আরএমও ১টি, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ইএমও, সহকারী সার্জনসহ ২২টি পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫০ পদের মধ্যে ৩২টি শূন্য।

আরও জানা যায়, শুধু চিকিৎসকের অভাবে সুফল মেলেনি আজও। ফলে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় মানুষকে। হাতের নাগালে চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় রংপুরে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। শুধু তা-ই নয়, ওই কার্ডিওলজি ওয়ার্ডের ন্যায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসক-সংকট বিরাজ করছে অন্য বিভাগেও।

পাশাপাশি কার্ডিওলজি বিভাগটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোস্কোপ, অটোএনালাইজার, ডায়াথার্মি ও অটোক্লেবসহ ৩৯টি মেশিনের মধ্যে ১৮টি বিকল থাকায় কাজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এ ছাড়া পুরো হাসপাতালে নেই উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য নেই সিসি ক্যামেরা।

শহরের উকিলের মোড়ের শামীম হোসেন (৩৯) জানান, ‘আমার মা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক জানান, এখানে এই রোগের কোনো চিকিৎসক নেই। আপনারা দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ধার-দেনা করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রংপুরে নিই।’

তিনি বলেন, ‘এত বড় একটা হাসপাতালে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসক নেই, সেটি ভাবতে অবাক লাগে। এমন হলে আমার মতো গরিব মানুষ সেবা পাবে কোথায়।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবদুর রহিম জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলে গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ পর্যন্ত রোগী সেবা নেয়। চিকিৎসকদের ইনডোরে রোগী দেখা শেষ করে বহির্বিভাগে রোগী দেখতে হয়। ফলে বহির্বিভাগের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আগতদের।’

তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন হৃদ্‌রোগে হাসপাতালে আসেন। ওয়ার্ড, যন্ত্রপাতি থাকলেও এ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসক পাওয়া গেলে এখানেই চিকিৎসা সম্ভব।’

উল্লেখ্য, হাসপাতালটি ২০১৯ সালে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। ২০১৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম ওই ওয়ার্ডটি স্থাপনের ব্যবস্থা নেন। পরে ২০২১ সালে মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় হাসপাতালটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত