Ajker Patrika

ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ উজাড় হচ্ছে গাছপালা

জামালপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৫৫
ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ উজাড় হচ্ছে গাছপালা

জ্বালানির সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে চলতি ভরা মৌসুমে এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি জামালপুরের বেশির ভাগ ইটভাটা। তবে যেসব ভাটা চালু রয়েছে সেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অন্যদিকে, উজাড় হচ্ছে বন-জঙ্গল।

ইটভাটার মালিকদের দাবি, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

ইটভাটা মালিক সমিতির হিসাবে জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় রয়েছে একটি অটো ইটভাটা। কয়লানির্ভর বাকি ভাটাগুলোর মধ্যে কয়েকটা চালু হয়েছে ইতিমধ্যে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এ বছর বন্ধ রাখা হয়েছে জেলার অধিকাংশ ভাটা।

জেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ইট তৈরি করে রাখা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির অভাবে পোড়ানো হয়নি। কোনো কোনো ভাটার সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লাকড়ি। আর শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইট তৈরি এবং রোদে শুকানোর কাজে।

ভাটামালিকেরা জানান, এ বছর জ্বালানির অভাবে অনেক ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। গত বছর সেখানে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টন কয়লা আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এ বছর টনপ্রতি দাম বেড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপরও ডলার সংকটের কারণে এলসি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেকে ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জামালপুর সদর উপজেলার নারিকেলীতে আলফা অটো ব্রিকসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মেছবাহুল কাইউম বলেন, এটি জেলার একমাত্র পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকস। এখানে শুধু কয়লা পুড়িয়ে ইট বানানো হয়। তবে কয়লার বর্তমান বাজার খুবই খারাপ। এখন প্রতি টন কয়লা কিনতে খরচ হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা দিয়েও এ মুহূর্তে কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।

স্টার ব্রিকসের মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, এ বছর কয়লার দাম এত বেশি যে, তা দিয়ে ইটভাটা চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। গত বছর এক টন কয়লা কিনতে সব মিলিয়ে খরচ হতো ২৫-২৬ হাজার টাকা। এ বছর দাম বেড়ে প্রতি টন হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। এখন প্রতিটি ইট তৈরিতে জ্বালানিসহ খরচ হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকা।

এ ছাড়া ইটভাটা শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৭০০ টাকা দৈনিক চুক্তিতে তাঁরা কাজ করেন। ভাটা বন্ধ থাকলে তাঁদের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান বলেন, ইটের ব্যবসা নেই এ বছর। অনেক ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। জেলার ১০-১২টি ভাটায় কাঁচা ইট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কয়লা সংকটের কারণে পোড়াতে পারছেন না মালিকেরা। আর পোড়াতে যে টাকা খরচ হচ্ছে তাতে আসল টাকাও উঠবে না। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভাটা করেছেন। তাঁদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে। কয়লার দাম সমন্বয় করে ইটের দাম ধরায় বাজারও কমে গেছে। তবে কিছু ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি পোড়ানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কয়লা না পেয়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে লাকড়ি পোড়াচ্ছেন।

জামালপুর পরিবেশ আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলার প্রায় ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ-খড়ি পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলা হয়েছে।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) দিলরুবা আহমেদ বলেন, ইটভাটাগুলোতে যেন কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি পোড়ানো না হয় সেই জন্য মালিকদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সভায় তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া একজন ম্যাজিস্ট্রেট ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতিমধ্যে কিছু ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত