Ajker Patrika

এক পরিবারে অতিষ্ঠ গ্রাম

আব্দুর রহিম, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ১০
এক পরিবারে অতিষ্ঠ গ্রাম

গ্রামে মোট ভোটার ৭৮০। জনসংখ্যা প্রায় ১২০০। বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কাকডাকা ভোরে তাঁরা নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যান। আবার দিন শেষে ঘরে ফেরেন। সন্ধ্যা রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সেই শান্তি যেন গ্রামবাসীর কাছে এখন সোনার হরিণ।

একটি পরিবার বছরের পর বছর গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষের নামে মামলা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই পরিবার ৩৫টি মামলায় গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। গ্রামটির নাম বারফা। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এটি।

ওই গ্রামের গ্রামের মো. শামসুর রহমান ও মোস্তফা কামাল সুমন নামের দুই ভাই এসব মামলা দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, এর আগে এই দুই ভাইয়ের বাবা আফছার বিশ্বাস বিভিন্নজনের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে একাধিক পরিবার।

গতকাল সোমবার সকালে এই পরিবারের হাত থেকে রেহাই পেতে সাধারণ মানুষ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় গ্রামের নারী-পুরুষ প্রতিবাদে জুতা ও ঝাড়ু মিছিলও বের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশরাফুল ইসলাম খোকন নামের একজন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে শামছুর রহমান এলাকায় একজন চিহ্নিত ঠান্ডা মাথার প্রতারক ও মামলাবাজ। সম্প্রতি সরকারি রাস্তার জায়গায় তিনি অবৈধভাবে ঘর করে লোক চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি করেছেন। ইতিমধ্যে গ্রামবাসী বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের জানিয়েছেন।’

আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, প্রতারক শামছুর রহমানের বাবা কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তবুও তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেন। যা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, ইউনিয়ন ও থানা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানলে বুঝবেন যে সে কত বড় প্রতারক। ভুয়া তথ্য দিয়ে তাঁদেরও যেমন হয়রানি করছেন, তেমনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মামলার শিকার আব্দুল আজিজ বিশ্বাস, হযরত মণ্ডল, তাঁর আপন চাচাতো ভাই নজরুল বিশ্বাস (৪ মামলার আসামি), ইকবাল মণ্ডল, নজরুল মণ্ডলসহ আরও অনেকে।

রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি দিন খাই। আমার বাবা অভাবে পড়ে ওই পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। এই টাকার সুদ দেওয়ার পরও ভিটাবাড়িসহ ১৬ শতক জমি লিখে নেয় শামসুর রহমানের পরিবার।’

এ ব্যাপারে জানতে শামছুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন পাওয়া না গেলেও তাঁর ভাই মোস্তফা কামাল সুমন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে অনেক জমি আছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা দখল করে রেখেছে। যে কারণে কিছু কিছু মানুষের নামে মামলা দিতে বাধ্য হয়েছি।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত