Ajker Patrika

লুর সফরে সরকারে স্বস্তি

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ২০
লুর সফরে সরকারে স্বস্তি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকা ঘুরে গেল যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। দেশের ভেতর-বাইরের বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সফরটি কিছুটা স্বস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সরকারি মহলে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়াকে শক্তভাবে দীর্ঘদিন তাঁর পাশে থাকা প্রতিবেশী ভারতের জন্য বড় বিপর্যয় মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, ঢাকায় রাজনৈতিক পালাবদলে এখানে প্রতিবেশী দেশটির প্রভাব কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব। কিন্তু তারপরও দিল্লির ওপর মহলে স্বস্তির আভাস নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। 

থিংকট্যাংক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট সাবেক পেশাদার কূটনীতিক হুমায়ুন কবির মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমর্থন, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহায়তা, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সামর্থ্য যুক্তরাষ্ট্রের যতটা আছে, অন্য কোনো রাষ্ট্রের তা নেই। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বাংলাদেশের পাশে এগিয়ে এলে জাপানসহ তার মিত্রদেশগুলো, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণে সরকারের কিছুটা স্বস্তিতেই থাকার কথা। 

রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরকে কীভাবে দেখছেন, এ প্রশ্নে আজকের পত্রিকাকে গতকাল হুমায়ুন কবির বলেন, ঢাকায় সরকারি পর্যায়ে গত রোববার যে বৈঠকগুলো হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রেন্ট। এতে এটা পরিষ্কার, সফরে আমেরিকানদের নজর ছিল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কী অর্জন করা যায়, তার ওপর। 

সফরে ব্রেন্ট নেইম্যান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করা, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা ও ব্যবসায়ীদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন। এসব ক্ষেত্রে নেওয়া সংস্কার উদ্যোগগুলোর কিছু কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন হবে– এমন মন্তব্য করলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। 

ব্রিটিশ পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তাদের জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে দুই লাখ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে সরকার তদন্ত শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্রটিকে বলেন, পাচার হওয়া এই অর্থ ফেরত আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেন, অন্য দেশগুলোও সহযোগিতা দেবে। 

এ প্রসঙ্গ তুললে হুমায়ুন কবির বলেন, পাচারের টাকা ফেরত আনাসহ ওপরের ক্ষেত্রগুলোয় সহায়তার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বেশি। তবে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বড় বিনিয়োগ দরকার হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত চীনের সামর্থ্যের দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, ভূরাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনায় বাংলাদেশের ওপর চীনের প্রভাব কমানোর বিষয়টি থাকলেও সরকার হয়তো তা সামলে নিতে পারবে। 

সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক অবশ্য মনে করেন, চীনের প্রভাব কমানোর বিষয়টি এলে সেখানে স্বাভাবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একই কৌশল ও নীতি মেনে চলবে। 

দিল্লি হয়ে আসা ডোনাল্ড লু ঢাকার বৈঠকগুলোয় ভারতের উদ্বেগের প্রসঙ্গটি তুলেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকারি একটি সূত্র। তবে তিনি ঠিক কী বলেছেন, এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনসহ সরকারি কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্রসচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়গুলো বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেই সামাল দিতে চায়। 

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলটির ঢাকা সফরের পর ভারতের সরকারি মহলের কথায় পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছেন তাঁরা। 

গত মঙ্গলবার প্রচারিত এনডিটিভির এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর করা এক প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কৌশলী মন্তব্য করেন। 

‘সব সময় সবকিছু নিজের অনুকূলে থাকে না’ মন্তব্য করে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে যা হয়েছে, (তাতে) তাদের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে। সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নেবে, এমনটা জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (বাংলাদেশ সরকার) তাদের অবস্থান বুঝে নিক। সম্পর্কের মাহাত্ম্য বুঝুক। তাহলেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্কের মান ও মাত্রা অন্য রকম হবে। 

হুমায়ুন কবির অবশ্য মনে করেন, জয়শঙ্করের এই বক্তব্যের সারবত্তা বোঝা যাবে নিউইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হয় কি না বা হলেও দুজনের কী কথা হয়, তা থেকে। 

ইউনূস ও মোদি উভয়েরই আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত