Ajker Patrika

৫২ কোটি খরচ হলেও সংকেত নেই বাতির

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৩, ১১: ২৬
৫২ কোটি খরচ হলেও সংকেত নেই বাতির

সব কাজ শেষ হলেও প্রকল্প চালানোর দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে টানাটানি। এরই মধ্যে কয়েক দফায় বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ। সমন্বিত যান চলাচল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের অধীনে ঢাকার ইন্টেলিজেন্ট (বুদ্ধিমান) ট্রাফিক পদ্ধতি কবে চালু হবে, তা-ও বলতে পারছেন না কেউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে জাপান থেকে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক পদ্ধতির (আইটিএস) কাজের জন্য বিশেষ সফটওয়্যারসহ দুটি কম্পিউটার আনা হয়েছিল। কিন্তু স্থাপন করার আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গুদাম থেকে সেগুলো চুরি হয়ে যায়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মামলা করেছিল। নিজেরাও তদন্ত করে। এদিকে সফটওয়্যারের অভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীন মহাখালী ও গুলশান ১ নম্বর সার্কেল মোড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ট্রাফিক বাতি।

সম্প্রতি গুলশান ১ নম্বর মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাফিক বাতি থাকলেও পাশে হাতের ইশারায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ। দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, এই অবস্থা ২০২০ সাল থেকেই। নতুন পদ্ধতি কার্যকর হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিটিসিএর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (টিএমপিটিআই) মোহাম্মদ রবিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিএনসিসির কিছু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বিষয়টি সমস্যা বলা যাবে না। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে মিটিংও হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা জানা যাবে।’ তবে পরিচালনার দায়িত্ব কে নেবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

জানা যায়, প্রকল্পের শুরু ২০১৫ সালের জুলাই। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু তিনবার বাড়িয়ে মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সাল। এরই মধ্যে কাজ শেষ হলেও চালু হয়নি অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি। প্রকল্পটিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও সরকার। প্রকল্পের দায়িত্বে আছে ডিটিসিএ। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা। দুই ধাপে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ কোটি টাকায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রথম পর্যায়ে ঢাকার গুলশান ১, মহাখালী, পল্টন ও ফুলবাড়িয়া মোড়ে বুদ্ধিমান ট্রাফিক সংকেত চালু করার কথা। এই চার জায়গায় সফল হলে পরে অন্যান্য স্থানেও বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাটানি
ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের সব কাজ শেষ। শুধু প্রতিটি মোড়ে বাতির নিচে সংযোগ দেওয়া বাকি। কিন্তু ট্রাফিক পদ্ধতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন চায় নিয়ন্ত্রণ নিতে। কিন্তু পুরো ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও (ডিএমপি) চায় এই দায়িত্ব।
ডিটিসিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এ সিস্টেমের দায়িত্ব নিতে চাই না। কাজ শেষে সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে দায়িত্ব নিতে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে ঢাকার অন্য এলাকার ট্রাফিক সিস্টেমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমপির আপত্তিতে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে আগেই। একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও করা হয়েছে। তবে এখনো তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পায়নি।

ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রাফিকের সক্ষমতা আছে এই প্রকল্প চালানোর। দায়িত্ব পেলে কীভাবে পরিচালনা করা হবে, তার নীতিমালাও আছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে এখনো লোকবল পাওয়া যায়নি।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পটি শেষ দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে জাইকা কর্তৃপক্ষ মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছে। ছোটখাটো কিছু বিষয় আছে। তবে কত দিন লাগতে পারে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। কারা দায়িত্ব নেবে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘ডিএনসিসির সঙ্গে ডিএমপির দ্বিমত নেই। তবে সিস্টেম ইনস্টল করবে ডিএনসিসি। মাঠে পুলিশ কাজ করবে।’ 

যেভাবে কাজ করবে
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা এবং বিভিন্ন স্থানে বসানো সেন্সর সড়কে থাকা গাড়ির সংখ্যা শনাক্ত করবে। যন্ত্রটি মোড় থেকে ৩০০ মিটার দূরে থাকা গাড়ির সংখ্যাও গুনতে পারবে। এরপর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে কোন দিকে গাড়ি ছাড়া বা বন্ধ করার জন্য বাতি জ্বালানো হবে। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি কাজের কোনো গাড়ি থাকলে কীভাবে সেটিকে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা-ও ঠিক করে দেবে এই ব্যবস্থা।

কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকার জন্য এমন ট্রাফিক পদ্ধতি কাজে আসবে না। কারণ, এখানে বাস্তবিক যে সমস্যা, তার সঙ্গে এই পদ্ধতি মিলবে না। শুধু চারটা মোড়ে এমন পদ্ধতি চালানো সম্ভব নয়, যেখানে অন্যগুলো হাতের ইশারায় চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত