Ajker Patrika

ভেজাল বীজে সর্বনাশ বিপাকে কৃষকেরা

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৯
Thumbnail image

নেত্রকোনার বারহাট্টায় আমন ধানের মানহীন বীজ কিনে বিপাকে শতাধিক কৃষক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি কৃষকেরা। উপজেলার আলোকদিয়া সেতু সংলগ্ন ‘শাওন এন্টার প্রাইজ’ এর মালিক আজহারুল ইসলাম স্বপনের কাছ থেকে বীজ ধান কিনে সর্বনাশ হয়েছে কৃষকে। ১০ কেজির ধান বীজের প্যাকেট কৃষকের কাছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন ডিলার স্বপন।

ধান বীজের নাম বিআর-২২ হওয়ার কথা থাকলেও ডিলার স্বপনের কাছ থেকে কেনা ধান বীজের প্যাকেটের গায়ে লিখা ব্রি-২২।

ময়মনসিংহের শিখা অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি বীজ দোকান থেকে ধান বীজ এনে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন ডিলার স্বপন। ভেজাল বীজ কিনে দুই উপজেলার শতাধিক কৃষকের প্রায় ৫০-৬০ একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেছে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

সরেজমিন বারহাট্টা উপজেলার চন্দ্রপুর ও মল্লিকপুর গ্রামের কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জমি ঘুরে দেখা গেছে, রোপণের ৭৫ দিন পরও ধান গাছগুলো পর্যাপ্ত বাড়েনি। ছোট ধানগাছেই অপরিপক্ব শিষ চলে এসেছে। শিষে আবার চাল নেই। সার পানি দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে অনেকে ধান কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। তবে পাশের খেতে ভালো মানের ধান বীজ রোপণ করায় খুব ভালো ফলন হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এক কৃষক গত ২১ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চন্দ্রপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. হযরত আলী, মো. আল্লাদ মিয়া, কাঞ্চন মিয়া ও রুকন মিয়া জানান, ডিলার স্বপনের কাছ থেকে সরল মনে ধান বীজ কিনে বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডিলার আজহারুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি শুধু সারের ডিলার, বীজের নয়। এই মৌসুমে গ্রাহকের চাহিদা জন্য বিএডিসির বীজ না থাকায় প্রাইভেট ধান বীজ বিক্রি করেছি। তবে এর পরিমাণ সামান্য। শুনেছি ফলন হয়নি বলে কৃষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার নামে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলে তাদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য সার বীজ দিয়ে সহায়তা করব বলে আশ্বাস দিয়েছি।

দায়িত্ব এড়িয়ে শিখা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মো. রাসেল জানান, আমাদের শর্ত হল বীজ থেকে ধান গাছ জন্মাল কি না। আমাদের এই ধান হয় ১৬০ দিনে। এখানে কৃষকেরা ধানবীজ কিনে ঘরে রেখে দুই মাস পরে জমিতে রোপণ করেছে। ফলে এমনটা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো দায় নেই।

সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, এলাকায় অসংখ্য কৃষক ভেজাল ধান বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন বলেন, অভিযোগটি সত্য। আমি এলাকায় গিয়ে কৃষকের মাঠ ঘুরে দেখেছি। ওই ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবেন না। বিআর-২২ এর জায়গায় ওই ধান বীজের প্যাকেটে ব্রি-ধান ২২ লেখা ছিল। ব্রি-ধান ২২ বলে কোন ধান নেই। এতে ওই বীজ ভেজাল বলে মনে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ. এম মোবারক আলী বলেন, ‘ব্রি-ধান ২২’ এই নামে কোনো ধান নেই। এখানে পুরোটাই প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত