Ajker Patrika

জোরদার হোক আস্থা; আসুক অগ্রগতি

হাসান মামুন
জোরদার হোক আস্থা; আসুক অগ্রগতি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তিন দিন দেরি হয়েছিল। এ অবস্থায় বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছু বাড়তি অবনতি ঘটে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসমাজ ও সেনাবাহিনী সচেষ্ট থাকলেও তাতে আশানুরূপ কাজ হয়নি। নজিরবিহীন আন্দোলনে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা একটি স্বেচ্ছাচারী সরকারের পতন হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিনও বটে।

এর মধ্যে আবার পুলিশ গিয়েছিল লাপাত্তা হয়ে। বেসামরিক প্রশাসনও ঠিকমতো কাজ করছিল না। গোটা প্রশাসনই ছিল ভয়াবহ দলীয়করণের শিকার। এর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সেনাবাহিনীই কেবল ভিন্ন অবস্থান নিতে সক্ষম হয়। তারা এই মুহূর্তে পুলিশের অনেক দায়িত্বও পালন করছে। শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া পুলিশকে তো সক্রিয় করা যায়নি এখনো! 

পুলিশসহ প্রশাসনে বড় রদবদল অবশ্য হয়েছে গত এক মাসে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের যে ঘৃণ্য ভূমিকা, তাতে এর খোলনলচে বদলে ফেলা জরুরি। ইতিমধ্যে তাদের পোশাকটা অন্তত বদলে ফেলতে পারলে ভালো হতো। নতুন পোশাকে আবির্ভূত হওয়াটাও একটা সংস্কার। তাতে পুলিশ এটুকু অনুভব করবে যে, তারা একটা নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি। তবে পুলিশের ভেতরগত পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। এ জন্য বিধিবিধানে পরিবর্তন আনা এবং তাদের একটি স্বতন্ত্র কমিশনের অধীনে পরিচালনার বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এর ‘এলিট ফোর্স’ কিন্তু আগে থেকেই বিতর্কিত। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আছে এর ওপর। আন্দোলন দমনে এর হেলিকপ্টার ব্যবহারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এই বাহিনীর ‘বিলুপ্তি’র কথাও তুলছেন কেউ কেউ। কাজটা অবশ্য সহজ নয়। কোনো কিছু বিলুপ্ত না করে সংস্কার করাও ভালো। এরই মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় আনসার বাহিনী নিয়েও কথা উঠেছে। অনিয়মিত আনসার সদস্য অনেক বাড়িয়ে ফেলেছিল বিগত সরকার। এ নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। একতরফা বা ভোটারবিহীন নির্বাচনে এই সব কটি বাহিনীই বাজেভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে পুলিশের অব্যাহত ব্যবহারও তাদের ‘দেশের রাজা’য় পরিণত করে। এখান থেকে তাদের বের করে এনে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করা কঠিন। 

অন্তর্বর্তী সরকারে স্বভাবতই রাজনৈতিক সরকারের চেয়ে অনেক কম উপদেষ্টা রয়েছেন। প্রত্যেককে নিতে হয়েছে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কাজের চাপ অনেক। ড. ইউনূসসহ তাঁদের একাংশ আবার প্রবীণ। এর বড় অংশটা এসেছে বরাবরের মতোই নাগরিক সমাজ থেকে। তাঁদের সরকারি প্রশাসনযন্ত্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। এই সরকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। এটা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় ও অভিজ্ঞতা। যে পরিস্থিতিতে তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাতে এক মাসের মধ্যে অবশ্য কাজের কোনো যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। এমন তো নয় যে, তিন মাসের জন্য একটি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ দায়িত্ব নিয়েছে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন করতে। এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। সেই বিধানও বাতিল হয় হাসিনা সরকারের আমলেই। তাঁরা যে ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন, ড. ইউনূসের সরকার সে ধরনেরও নয়। এটি গণ-অভ্যুত্থান থেকে উৎসারিত। তার চরিত্র স্বভাবতই ভিন্ন। তবে লক্ষ্য অভিন্ন বলেই বর্ণনা করা হচ্ছে। সেটা হলো, দেরিতে হলেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। তার আগে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার, সে বিষয়েও স্বভাবতই চলছে আলোচনা। 

এর আগে ‘ওয়ান-ইলেভেন সরকার’ও সংস্কারে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু তৎপরতা দেখাতে পারলেও তারা সাফল্য রেখে যেতে পারেনি। এবার প্রেক্ষাপট যেহেতু গুণগতভাবে ভিন্ন, তাই অন্তত জরুরি সংস্কারগুলোর ব্যাপারে প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। চাপও আছে প্রধানত ছাত্র-জনতার ভেতর থেকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনীতিতে একটা বিশেষ পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত। তারা সরকারে আছে; মাঠেও উপস্থিত। ড. ইউনূস এর মধ্যে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, দায়িত্ব পালন শেষে তাঁদের প্রস্থানের সময়টা ‘রাজনৈতিক আলোচনা’র ভেতর থেকেই আসবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির মতো বড় দলের পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের বক্তব্যও গুরুত্ব পাবে নিশ্চয়ই। তাঁরা বড় ধরনের সংস্কারে অব্যাহতভাবে আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোও অস্থিরতা দেখাচ্ছে না দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে। জামায়াতের মতো কোনো কোনো দল অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশি সময় দেওয়ারও পক্ষপাতী। তারা হয়তো এই সুযোগে দল গোছাতে চায়। এই জায়গাটায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগই কেবল অনুপস্থিত। গণ-অভ্যুত্থানে তাদের সরকার উৎখাত হয়ে যাওয়াটা দলটির নিরপরাধ সমর্থকদেরও নজিরবিহীন সংকটে ফেলেছে। সরকারের তরফ থেকে আবার বলে দেওয়া হয়েছে—বিচারের আগে তাদের ‘পুনর্বাসনের’ সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সবাই যে একমত হবেন, তা অবশ্য নয়। এসব প্রশ্নে ভিন্নমতের সুযোগ রাখাও উচিত হবে। 

অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক পক্ষ থেকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না, তা অবশ্য নয়। বিগত এক মাসে অনেক ঘটনাই ঘটেছে, যাতে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের উসকানি ছিল বলেই ধারণা। তবে ঘটনার ভেতরে যা-ই থাকুক, সরকার মাথা ঠান্ডা রেখেই তা মোকাবিলা করে চলেছে। ইউনূস সাহেব তাঁর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন দাবি আদায়কারী পক্ষের ব্যাপারেও সহনশীলতা দেখিয়েছেন। কিন্তু এরও শেষ আছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে জরুরি কাজগুলো সারতে সরকারকে কঠোর হতে হয় বৈকি। সেটাও ক্রমে দেখতে পাওয়া গেছে। হাসিনা সরকারের পতনে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু গোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এতে কেবল দেশে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে না; আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্ন ওঠার অবকাশ তৈরি হচ্ছে। ড. ইউনূস বারবার বলছেন, আমরা ‘একটি পরিবার’। এ দেশে সবাই সম-অধিকার ও সমমর্যাদা নিয়ে থাকবে। দেশ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার ও গণতান্ত্রিক। মুক্তিযুদ্ধেও আমরা কিন্তু এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়েছিলাম। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে কুশলতার সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী শক্তিগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে সরকার পড়ে যাবে প্রশ্নের মুখে এবং তখন ঘোষিত লক্ষ্যে দেশ পরিচালনা করাও হবে কঠিন। সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে জুলাইয়ের রক্তাক্ত ঘটনাবলির যথাযথ তদন্ত আর ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণভাবে পশ্চিমা বিশ্ব কিন্তু স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনকে। তাদের কাছ থেকে বর্ধিত আর্থিক সহায়তাও চাইছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। 

এই সরকারে কয়েকজন সুযোগ্য অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। হাসিনা সরকার, বিশেষ করে শেষ কয়েক বছরে অর্থনীতি পরিচালনায় তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। সেটা সংকটময় অধ্যায়ে উপনীত হওয়ার আগেই অবশ্য প্রস্থান ঘটল তাদের। এই চ্যালেঞ্জ এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে।

আমরা সবাই জানি, ব্যাংক খাতের কী অবস্থা; বিশেষ করে একগুচ্ছ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পলাতক অবস্থায়ই করেছেন পদত্যাগ। আর নতুন গভর্নরকে দায়িত্ব নিয়েই একগাদা ব্যাংকে বদলাতে হচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হচ্ছে তাঁকে। শেয়ারবাজারেও আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চলছে। মোটামুটি একই গোষ্ঠী ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে জনগণের অর্থ লুটে নিচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়াটাও বড় ব্যাপার। লুণ্ঠিত অর্থের পাচারও নিশ্চয়ই কমে এসেছে; অন্তত সরকারের সমর্থনে এসব আর হচ্ছে না। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাজে অবস্থায় আছে দেশ অনেক দিন ধরে। আন্দোলন চলাকালে এটা স্বভাবতই আরও বেড়েছিল। এখন যত দ্রুত সম্ভব এটা কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু দ্রুত কমিয়ে আনার সুযোগ বড় একটা নেই। এ অবস্থায় সরকারকে সময়ে সময়ে বলতে হবে, কেন প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি হচ্ছে না। এ সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই একটা বড় বন্যার ধাক্কা গেল। চলতি মাসেও শঙ্কা আছে নতুন বন্যার। এ অবস্থায় খাদ্যশস্যের কাম্য মজুত ও ফসল উৎপাদন স্বাভাবিক রাখাটা জরুরি। ডলারের সংকটেও সার, বীজ ও জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। নিকটবর্তী উৎস ভারত থেকে আমদানি যেন বিঘ্নিত না হয়। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখা যায় বৈকি। আর রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে দুই দিক থেকেই। বাংলাদেশ থেকে এ ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো ঘাটতি হবে না, এটা স্পষ্ট করেই বলা হচ্ছে। ভারতও আশা করা যায় বাংলাদেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা বুঝে পথ চলবে। 

পরবর্তী মাসে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি দুটি ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি হতে হবে—আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি। বিশেষত রপ্তানি খাত সচল রাখা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারে অস্থিরতা বিপজ্জনক। সংস্কারের প্রতি ব্যাপক মানুষের সমর্থন ধরে রাখতেও এ দুই ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন জরুরি।

লেখক: হাসান মামুন
সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত