Ajker Patrika

দরকার শুধু অনুপ্রেরণার

রহমান মৃধা
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ০৩
Thumbnail image

মনের গতি যত দ্রুতই হোক না কেন, সীমানার বাইরে যাওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই সব গতির ঊর্ধ্বে মনের গতি থাকলেও মনের গতির ঊর্ধ্বেও আরেক গতি রয়েছে। সেই গতি আমাদের অজানা, আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই গতির নাম ইনফিনিটি গতি। মানুষের জ্ঞানভান্ডারের গতির শেষ কোথায় গিয়ে থামবে—এই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে কেউ কি বলতে পারবে? হয়তো না, তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?

মানব জাতির বয়স্কদের চেষ্টার শেষ হতেই তাদের সন্তানদের চেষ্টার শুরু। এখন সন্তানের জ্ঞানভান্ডারের গতি এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাবা-মা কী চান, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, বরং সন্তান নিজে কী হতে চায়, সেটার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এখন অনেকেই বলবে, ছেলে-মেয়ে যখন ছোট, তারা কি জানে কোনটি ভালো বা কোনটি মন্দ? সন্তান যখন ছোট, তাদের গড়ে তোলা এবং ভালো-মন্দের দায়ভার নেওয়া মা-বাবার দায়িত্ব।

এ কথা কিছুটা সত্য, তবে মনে রাখতে হবে দুটি বিষয়। একটি হলো সন্তানকে গড়ে তোলা, আরেকটি হলো গড়ে তুলতে সাহায্য করা। আমরা যখন আমাদের চিন্তাধারা শিশুর ওপর চাপিয়ে দিই, তখন তাদের নিজেদের চিন্তাশক্তি (ক্রিয়েটিভিটি) লোপ পেতে থাকে। একই সঙ্গে পরনির্ভরশীলতাও বাড়তে থাকে, যার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মুখস্থবিদ্যা বা অন্যকে অনুসরণ করা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে। এর ফলে দেখা যায় শিশুর নিজের মধ্যে যে নিজস্ব দক্ষতা ও প্রতিভা রয়েছে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। নিজস্ব দক্ষতা হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ, যা হ্রাস পেতে থাকে। শিশুর ব্যক্তি সচেতনতা, আবেগের নিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস এবং উৎসাহের অঙ্কুরে বিনাশ ঘটে, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সব ফুলের কুঁড়ি যেমন ফুল এবং ফল দিতে পারে না, সব শিশুর জীবনও ঠিক তেমনি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, আজীবন আমরা এভাবেই তো সবকিছু করে এসেছি, এখন কেন অন্যভাবে করতে হবে? যুগের অবকাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মের ধরন এবং পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনতে হবে।

আমাদের ডিএনএ ও ফিঙ্গার প্রিন্টে প্রমাণিত হয় যে আমরা একে অন্যের থেকে ভিন্ন। সুতরাং শিশুর ইনডিভিজুয়্যাল আইডেনটিটি বহিঃপ্রকাশ যেন ঘটে, সে বিষয়ে যেমন বাবা-মায়ের দায়িত্ব রয়েছে, তেমন দায়িত্ব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও।

দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি বিষয় বেশ কমন দেখা যায়, তা হলো বাবা-মা সব সময় সন্তানদের পুশ করেন, যাতে তারা এমন ধরনের শিক্ষা বেছে নেয়, যেখানে চাকরির নিশ্চয়তা বেশি। সন্তান কী হতে চায়, তার প্রতি মনোযোগী না হয়ে বরং নিজেরা যেটা ভালো মনে করে, সেটাই সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়। যদিও মা-বাবা এ ধরনের চিন্তাধারার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তার পরও বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, সন্তানের জীবন গঠনে পুশ এবং পুল তত্ত্বের ওপর বেশি জোর না দেওয়াই শ্রেয়। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের দিকনির্দেশনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আশু প্রয়োজন তাদের মঙ্গলের জন্য।

মানব জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো প্রত্যেকেই তার নিজ ব্যক্তিত্বে অসাধারণ। একটু সাহায্য ও সহানুভূতি পেলে তারা তাদের মেধার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম। তবে তার জন্য দরকার ব্যক্তির আগ্রহ ও চেষ্টা। সন্তানের জীবনে আমাদের ভূমিকা বাবা-মা হিসেবে যেন বিরল হয়ে থাকে, সেইভাবে কাজ করতে আমরা যেন সক্ষম হই। আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের জীবনের গল্প হোক বর্তমান ও ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা, যা জানলে ও শুনলে সবাই উপকৃত হবে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত