চিররঞ্জন সরকার
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দিন কেটেছে মিটিং, মিছিল, দাবি, স্লোগান আর কারাবাসে। কিন্তু এ সময় তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবা, সন্তানদের দেখভাল, সংগঠনের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানো, বঙ্গবন্ধুর বার্তা নেতা-কর্মীদের কাছে নিয়ে আসা, এমনকি নেপথ্যে থেকে সংগঠন পরিচালনার কাজও ফজিলাতুন নেছাই করেছেন।
ফজিলাতুন নেছার এ অনন্য ভূমিকাকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেও যুক্ত থাকতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় সে আদালতে নিত্য হাজিরা দিয়েছে এবং শুধু আমাকে নয়, মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হালও ধরেছে।’
বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন নেছার নানা পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। নারীদের সহযোগিতার ইতিহাসকে পুরুষেরা যেন না ভুলে যায় এ প্রসঙ্গে নিজের স্ত্রী ফজিলাতুন নেছার দূরদর্শিতা ও অবদানের উল্লেখ করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত।
এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইয়েরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।’
শেখ ফজিলাতুন নেছার ডাক নাম ছিল রেণু। যখন তাঁর বয়স ১৭-১৮, তখন থেকেই ছেলেমেয়ে-সংসার সামলাতেন। ছেলেমেয়েদের সুরুচিও গড়ে উঠেছে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থেকেই। কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হতে পেরেছিলেন বেগম মুজিবের সমর্থনের কারণে। বেগম মুজিব কখনো বলেননি, তুমি রাজনীতি কোরো না, তুমি জেলে গেলে আমাদের কী হবে। বরং বলেছেন উল্টোটা। তুমি দেশের জন্য কাজ করো, আমাদের কথা ভেবো না।’
বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। শেখ মুজিবকে আটকে রাখা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। সারা পূর্ব বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ওদিকে ভুট্টোর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানেও হচ্ছে প্রচণ্ড আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আইয়ুব খান দিশেহারা। এ অবস্থায় তিনি ঠিক করলেন, তিনি গোলটেবিল বৈঠক করবেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় বেগম মুজিব ভেবেচিন্তে দেখলেন, প্যারোলে মুক্তি নেওয়া ঠিক হবে না। শেখ মুজিব যদি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে যান, তাঁকে অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি অর্জন করে নিতে হবে।
বেগম মুজিব তাঁর বড় মেয়ে আর জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে পাঠালেন ক্যান্টনমেন্টে। চিরকুট দিলেন। শেখ হাসিনা আর ওয়াজেদ মিয়াকে শিখিয়ে দিলেন কী বলতে হবে। বেগম মুজিবের কড়া নির্দেশ—জনগণ তোমার সঙ্গে আছে। তুমি কিছুতেই প্যারোলে মুক্তি নেবে না। তোমাকে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের দিন। মার্চ থেকেই বাংলা কার্যত স্বাধীন। সারা বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সবকিছু চলছে আওয়ামী লীগের নির্দেশে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করা হয়েছে। ২ মার্চ ছাত্ররা সেই পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে, তুলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে। এরই মধ্যে ইয়াহিয়া খানের ‘অ্যাসেম্বলি’ স্থগিতের ঘোষণা বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মাত্র। সারা বাংলা জ্বলছে। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চে ভাষণ দেবেন। কী বলবেন তিনি। ছাত্ররা চায় আজই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করুন আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু আমেরিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা সমর্থন করবে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফোন করে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু বন্ধ করে দেবেন না।
‘শেখ হাসিনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ (মঞ্জুরুল ইসলাম) বই থেকে জানা যায়, ‘বাসায় গিজগিজ করছে মানুষ। বেগম মুজিব সবাইকে তাঁদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব আর হাসিনা। তিনি বললেন, তুমি ১০টা মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘আমি মাথার কাছে বসা, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলির নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায়, সেটা দেখা তোমার কাজ। তুমি মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যেটা আসবে, সেটা তুমি বলবা।’
বঙ্গবন্ধু ১০ মিনিট বিশ্রাম করলেন, গাড়িতে উঠলেন, শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে বীরের মতো হেঁটে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন এবং শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
এই ভাষণের পেছনেও রয়েছে ফজিলাতুন নেছার প্রজ্ঞাময় পরামর্শ।
তৃতীয় ঘটনাটি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উঠেছে বাংলার পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন, ‘ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এত দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো, কিছু তো বলছ না।
তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।” এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এরপর বেগম মুজিব অভিমানহত হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে করণীয় সম্পর্কে নিজের মত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বেগম মুজিবের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝার জন্য উল্লিখিত ঘটনাটিই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে একজন বাঙালি গৃহিণী থেকে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে বন্দী হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের এই বন্দী সময় বাদে, বঙ্গবন্ধু জীবনে যতবার জেলে গেছেন, সেখানেই নিয়মিত হাজির হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা। নিয়মিত জেলগেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের নির্দেশনা এনে দিতেন নেতা-কর্মীদের। পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক দায়িত্বও নিয়মিত পালন করতেন বেগম ফজিলাতুন নেছা।
একাত্তরে বেগম মুজিব পরিবারসহ আটক হন। এর মধ্যে দুই পুত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন বড় মেয়ের সন্তান হলো। এমন পরিস্থিতিতে সব সামলালেন বেগম মুজিব। এই ‘সবকিছু সামলানো’র সক্ষমতা নারীদের বেশি। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব জীবনভর তা প্রমাণ করে গেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে তাঁর অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দিন কেটেছে মিটিং, মিছিল, দাবি, স্লোগান আর কারাবাসে। কিন্তু এ সময় তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবা, সন্তানদের দেখভাল, সংগঠনের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানো, বঙ্গবন্ধুর বার্তা নেতা-কর্মীদের কাছে নিয়ে আসা, এমনকি নেপথ্যে থেকে সংগঠন পরিচালনার কাজও ফজিলাতুন নেছাই করেছেন।
ফজিলাতুন নেছার এ অনন্য ভূমিকাকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেও যুক্ত থাকতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় সে আদালতে নিত্য হাজিরা দিয়েছে এবং শুধু আমাকে নয়, মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হালও ধরেছে।’
বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন নেছার নানা পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। নারীদের সহযোগিতার ইতিহাসকে পুরুষেরা যেন না ভুলে যায় এ প্রসঙ্গে নিজের স্ত্রী ফজিলাতুন নেছার দূরদর্শিতা ও অবদানের উল্লেখ করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত।
এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইয়েরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।’
শেখ ফজিলাতুন নেছার ডাক নাম ছিল রেণু। যখন তাঁর বয়স ১৭-১৮, তখন থেকেই ছেলেমেয়ে-সংসার সামলাতেন। ছেলেমেয়েদের সুরুচিও গড়ে উঠেছে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থেকেই। কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হতে পেরেছিলেন বেগম মুজিবের সমর্থনের কারণে। বেগম মুজিব কখনো বলেননি, তুমি রাজনীতি কোরো না, তুমি জেলে গেলে আমাদের কী হবে। বরং বলেছেন উল্টোটা। তুমি দেশের জন্য কাজ করো, আমাদের কথা ভেবো না।’
বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। শেখ মুজিবকে আটকে রাখা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। সারা পূর্ব বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ওদিকে ভুট্টোর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানেও হচ্ছে প্রচণ্ড আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আইয়ুব খান দিশেহারা। এ অবস্থায় তিনি ঠিক করলেন, তিনি গোলটেবিল বৈঠক করবেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় বেগম মুজিব ভেবেচিন্তে দেখলেন, প্যারোলে মুক্তি নেওয়া ঠিক হবে না। শেখ মুজিব যদি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে যান, তাঁকে অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি অর্জন করে নিতে হবে।
বেগম মুজিব তাঁর বড় মেয়ে আর জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে পাঠালেন ক্যান্টনমেন্টে। চিরকুট দিলেন। শেখ হাসিনা আর ওয়াজেদ মিয়াকে শিখিয়ে দিলেন কী বলতে হবে। বেগম মুজিবের কড়া নির্দেশ—জনগণ তোমার সঙ্গে আছে। তুমি কিছুতেই প্যারোলে মুক্তি নেবে না। তোমাকে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের দিন। মার্চ থেকেই বাংলা কার্যত স্বাধীন। সারা বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সবকিছু চলছে আওয়ামী লীগের নির্দেশে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করা হয়েছে। ২ মার্চ ছাত্ররা সেই পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে, তুলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে। এরই মধ্যে ইয়াহিয়া খানের ‘অ্যাসেম্বলি’ স্থগিতের ঘোষণা বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মাত্র। সারা বাংলা জ্বলছে। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চে ভাষণ দেবেন। কী বলবেন তিনি। ছাত্ররা চায় আজই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করুন আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু আমেরিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা সমর্থন করবে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফোন করে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু বন্ধ করে দেবেন না।
‘শেখ হাসিনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ (মঞ্জুরুল ইসলাম) বই থেকে জানা যায়, ‘বাসায় গিজগিজ করছে মানুষ। বেগম মুজিব সবাইকে তাঁদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব আর হাসিনা। তিনি বললেন, তুমি ১০টা মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘আমি মাথার কাছে বসা, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলির নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায়, সেটা দেখা তোমার কাজ। তুমি মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যেটা আসবে, সেটা তুমি বলবা।’
বঙ্গবন্ধু ১০ মিনিট বিশ্রাম করলেন, গাড়িতে উঠলেন, শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে বীরের মতো হেঁটে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন এবং শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
এই ভাষণের পেছনেও রয়েছে ফজিলাতুন নেছার প্রজ্ঞাময় পরামর্শ।
তৃতীয় ঘটনাটি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উঠেছে বাংলার পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন, ‘ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এত দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো, কিছু তো বলছ না।
তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।” এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এরপর বেগম মুজিব অভিমানহত হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে করণীয় সম্পর্কে নিজের মত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বেগম মুজিবের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝার জন্য উল্লিখিত ঘটনাটিই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে একজন বাঙালি গৃহিণী থেকে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে বন্দী হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের এই বন্দী সময় বাদে, বঙ্গবন্ধু জীবনে যতবার জেলে গেছেন, সেখানেই নিয়মিত হাজির হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা। নিয়মিত জেলগেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের নির্দেশনা এনে দিতেন নেতা-কর্মীদের। পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক দায়িত্বও নিয়মিত পালন করতেন বেগম ফজিলাতুন নেছা।
একাত্তরে বেগম মুজিব পরিবারসহ আটক হন। এর মধ্যে দুই পুত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন বড় মেয়ের সন্তান হলো। এমন পরিস্থিতিতে সব সামলালেন বেগম মুজিব। এই ‘সবকিছু সামলানো’র সক্ষমতা নারীদের বেশি। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব জীবনভর তা প্রমাণ করে গেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে তাঁর অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দিন কেটেছে মিটিং, মিছিল, দাবি, স্লোগান আর কারাবাসে। কিন্তু এ সময় তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবা, সন্তানদের দেখভাল, সংগঠনের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানো, বঙ্গবন্ধুর বার্তা নেতা-কর্মীদের কাছে নিয়ে আসা, এমনকি নেপথ্যে থেকে সংগঠন পরিচালনার কাজও ফজিলাতুন নেছাই করেছেন।
ফজিলাতুন নেছার এ অনন্য ভূমিকাকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেও যুক্ত থাকতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় সে আদালতে নিত্য হাজিরা দিয়েছে এবং শুধু আমাকে নয়, মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হালও ধরেছে।’
বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন নেছার নানা পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। নারীদের সহযোগিতার ইতিহাসকে পুরুষেরা যেন না ভুলে যায় এ প্রসঙ্গে নিজের স্ত্রী ফজিলাতুন নেছার দূরদর্শিতা ও অবদানের উল্লেখ করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত।
এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইয়েরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।’
শেখ ফজিলাতুন নেছার ডাক নাম ছিল রেণু। যখন তাঁর বয়স ১৭-১৮, তখন থেকেই ছেলেমেয়ে-সংসার সামলাতেন। ছেলেমেয়েদের সুরুচিও গড়ে উঠেছে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থেকেই। কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হতে পেরেছিলেন বেগম মুজিবের সমর্থনের কারণে। বেগম মুজিব কখনো বলেননি, তুমি রাজনীতি কোরো না, তুমি জেলে গেলে আমাদের কী হবে। বরং বলেছেন উল্টোটা। তুমি দেশের জন্য কাজ করো, আমাদের কথা ভেবো না।’
বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। শেখ মুজিবকে আটকে রাখা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। সারা পূর্ব বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ওদিকে ভুট্টোর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানেও হচ্ছে প্রচণ্ড আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আইয়ুব খান দিশেহারা। এ অবস্থায় তিনি ঠিক করলেন, তিনি গোলটেবিল বৈঠক করবেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় বেগম মুজিব ভেবেচিন্তে দেখলেন, প্যারোলে মুক্তি নেওয়া ঠিক হবে না। শেখ মুজিব যদি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে যান, তাঁকে অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি অর্জন করে নিতে হবে।
বেগম মুজিব তাঁর বড় মেয়ে আর জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে পাঠালেন ক্যান্টনমেন্টে। চিরকুট দিলেন। শেখ হাসিনা আর ওয়াজেদ মিয়াকে শিখিয়ে দিলেন কী বলতে হবে। বেগম মুজিবের কড়া নির্দেশ—জনগণ তোমার সঙ্গে আছে। তুমি কিছুতেই প্যারোলে মুক্তি নেবে না। তোমাকে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের দিন। মার্চ থেকেই বাংলা কার্যত স্বাধীন। সারা বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সবকিছু চলছে আওয়ামী লীগের নির্দেশে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করা হয়েছে। ২ মার্চ ছাত্ররা সেই পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে, তুলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে। এরই মধ্যে ইয়াহিয়া খানের ‘অ্যাসেম্বলি’ স্থগিতের ঘোষণা বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মাত্র। সারা বাংলা জ্বলছে। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চে ভাষণ দেবেন। কী বলবেন তিনি। ছাত্ররা চায় আজই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করুন আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু আমেরিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা সমর্থন করবে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফোন করে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু বন্ধ করে দেবেন না।
‘শেখ হাসিনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ (মঞ্জুরুল ইসলাম) বই থেকে জানা যায়, ‘বাসায় গিজগিজ করছে মানুষ। বেগম মুজিব সবাইকে তাঁদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব আর হাসিনা। তিনি বললেন, তুমি ১০টা মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘আমি মাথার কাছে বসা, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলির নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায়, সেটা দেখা তোমার কাজ। তুমি মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যেটা আসবে, সেটা তুমি বলবা।’
বঙ্গবন্ধু ১০ মিনিট বিশ্রাম করলেন, গাড়িতে উঠলেন, শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে বীরের মতো হেঁটে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন এবং শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
এই ভাষণের পেছনেও রয়েছে ফজিলাতুন নেছার প্রজ্ঞাময় পরামর্শ।
তৃতীয় ঘটনাটি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উঠেছে বাংলার পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন, ‘ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এত দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো, কিছু তো বলছ না।
তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।” এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এরপর বেগম মুজিব অভিমানহত হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে করণীয় সম্পর্কে নিজের মত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বেগম মুজিবের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝার জন্য উল্লিখিত ঘটনাটিই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে একজন বাঙালি গৃহিণী থেকে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে বন্দী হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের এই বন্দী সময় বাদে, বঙ্গবন্ধু জীবনে যতবার জেলে গেছেন, সেখানেই নিয়মিত হাজির হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা। নিয়মিত জেলগেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের নির্দেশনা এনে দিতেন নেতা-কর্মীদের। পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক দায়িত্বও নিয়মিত পালন করতেন বেগম ফজিলাতুন নেছা।
একাত্তরে বেগম মুজিব পরিবারসহ আটক হন। এর মধ্যে দুই পুত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন বড় মেয়ের সন্তান হলো। এমন পরিস্থিতিতে সব সামলালেন বেগম মুজিব। এই ‘সবকিছু সামলানো’র সক্ষমতা নারীদের বেশি। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব জীবনভর তা প্রমাণ করে গেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে তাঁর অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দিন কেটেছে মিটিং, মিছিল, দাবি, স্লোগান আর কারাবাসে। কিন্তু এ সময় তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবা, সন্তানদের দেখভাল, সংগঠনের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানো, বঙ্গবন্ধুর বার্তা নেতা-কর্মীদের কাছে নিয়ে আসা, এমনকি নেপথ্যে থেকে সংগঠন পরিচালনার কাজও ফজিলাতুন নেছাই করেছেন।
ফজিলাতুন নেছার এ অনন্য ভূমিকাকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেও যুক্ত থাকতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় সে আদালতে নিত্য হাজিরা দিয়েছে এবং শুধু আমাকে নয়, মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হালও ধরেছে।’
বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন নেছার নানা পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। নারীদের সহযোগিতার ইতিহাসকে পুরুষেরা যেন না ভুলে যায় এ প্রসঙ্গে নিজের স্ত্রী ফজিলাতুন নেছার দূরদর্শিতা ও অবদানের উল্লেখ করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত।
এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইয়েরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।’
শেখ ফজিলাতুন নেছার ডাক নাম ছিল রেণু। যখন তাঁর বয়স ১৭-১৮, তখন থেকেই ছেলেমেয়ে-সংসার সামলাতেন। ছেলেমেয়েদের সুরুচিও গড়ে উঠেছে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থেকেই। কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হতে পেরেছিলেন বেগম মুজিবের সমর্থনের কারণে। বেগম মুজিব কখনো বলেননি, তুমি রাজনীতি কোরো না, তুমি জেলে গেলে আমাদের কী হবে। বরং বলেছেন উল্টোটা। তুমি দেশের জন্য কাজ করো, আমাদের কথা ভেবো না।’
বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। শেখ মুজিবকে আটকে রাখা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। সারা পূর্ব বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ওদিকে ভুট্টোর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানেও হচ্ছে প্রচণ্ড আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আইয়ুব খান দিশেহারা। এ অবস্থায় তিনি ঠিক করলেন, তিনি গোলটেবিল বৈঠক করবেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় বেগম মুজিব ভেবেচিন্তে দেখলেন, প্যারোলে মুক্তি নেওয়া ঠিক হবে না। শেখ মুজিব যদি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে যান, তাঁকে অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি অর্জন করে নিতে হবে।
বেগম মুজিব তাঁর বড় মেয়ে আর জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে পাঠালেন ক্যান্টনমেন্টে। চিরকুট দিলেন। শেখ হাসিনা আর ওয়াজেদ মিয়াকে শিখিয়ে দিলেন কী বলতে হবে। বেগম মুজিবের কড়া নির্দেশ—জনগণ তোমার সঙ্গে আছে। তুমি কিছুতেই প্যারোলে মুক্তি নেবে না। তোমাকে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের দিন। মার্চ থেকেই বাংলা কার্যত স্বাধীন। সারা বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সবকিছু চলছে আওয়ামী লীগের নির্দেশে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করা হয়েছে। ২ মার্চ ছাত্ররা সেই পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে, তুলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে। এরই মধ্যে ইয়াহিয়া খানের ‘অ্যাসেম্বলি’ স্থগিতের ঘোষণা বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মাত্র। সারা বাংলা জ্বলছে। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চে ভাষণ দেবেন। কী বলবেন তিনি। ছাত্ররা চায় আজই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করুন আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু আমেরিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা সমর্থন করবে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফোন করে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু বন্ধ করে দেবেন না।
‘শেখ হাসিনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ (মঞ্জুরুল ইসলাম) বই থেকে জানা যায়, ‘বাসায় গিজগিজ করছে মানুষ। বেগম মুজিব সবাইকে তাঁদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব আর হাসিনা। তিনি বললেন, তুমি ১০টা মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘আমি মাথার কাছে বসা, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলির নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায়, সেটা দেখা তোমার কাজ। তুমি মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যেটা আসবে, সেটা তুমি বলবা।’
বঙ্গবন্ধু ১০ মিনিট বিশ্রাম করলেন, গাড়িতে উঠলেন, শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে বীরের মতো হেঁটে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন এবং শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
এই ভাষণের পেছনেও রয়েছে ফজিলাতুন নেছার প্রজ্ঞাময় পরামর্শ।
তৃতীয় ঘটনাটি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উঠেছে বাংলার পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন, ‘ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এত দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো, কিছু তো বলছ না।
তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।” এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এরপর বেগম মুজিব অভিমানহত হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে করণীয় সম্পর্কে নিজের মত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বেগম মুজিবের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝার জন্য উল্লিখিত ঘটনাটিই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে একজন বাঙালি গৃহিণী থেকে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে বন্দী হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের এই বন্দী সময় বাদে, বঙ্গবন্ধু জীবনে যতবার জেলে গেছেন, সেখানেই নিয়মিত হাজির হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা। নিয়মিত জেলগেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের নির্দেশনা এনে দিতেন নেতা-কর্মীদের। পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক দায়িত্বও নিয়মিত পালন করতেন বেগম ফজিলাতুন নেছা।
একাত্তরে বেগম মুজিব পরিবারসহ আটক হন। এর মধ্যে দুই পুত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন বড় মেয়ের সন্তান হলো। এমন পরিস্থিতিতে সব সামলালেন বেগম মুজিব। এই ‘সবকিছু সামলানো’র সক্ষমতা নারীদের বেশি। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব জীবনভর তা প্রমাণ করে গেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে তাঁর অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দ
০৮ আগস্ট ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দ
০৮ আগস্ট ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দ
০৮ আগস্ট ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু ইতিহাসে তিনি নিতান্তই উপেক্ষিত। বড়জোর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি না থাকলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধুর দ
০৮ আগস্ট ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫