Ajker Patrika

পদ নেই, নিয়োগ চূড়ান্ত কেজিডিসিএলের

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) কোনো গ্রন্থাগার নেই। তারপরও সহকারী ব্যবস্থাপক (গ্রন্থাগার) পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
একইভাবে সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম), সহকারী প্রকৌশলী (টেলিকমিউনিকেশন) নামে কোনো পদ নেই। অথচ এসব পদে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের 
জন্য চূড়ান্ত করে রেখেছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।

এমনকি কোটা প্রথা চালু থাকলেও তা মানা হয়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তাঁরা আবার পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অভিযুক্ত। 
সূত্র জানায়, কেজিডিসিএল ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ১১৮ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর লিখিত ও ২০২২ সালের ৩০ মে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই নিয়োগে যাঁদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাঁরা হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ এবং নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ফিরোজ খান।

বিভিন্ন শিল্পকারখানায় গ্যাস নিয়ে দুর্নীতি ও নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে পেট্রোবাংলার গঠিত কমিটি এই দুজনের বিরুদ্ধে জুন মাসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশও করেছে পেট্রোবাংলা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই নিয়োগ ছাড়াও চলতি বছরে একটি প্রকল্পের জন্য সহকারী হিসাব কর্মকর্তা পদের নিয়োগ পরীক্ষায়ও মেধাতালিকা অনুসরণ না করে নিজের পছন্দের ৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন ফিরোজ খান। তিনি ৯ বছরে ধরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি, পদোন্নতিতে অনিয়মসহ ১২টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া এম এ মাজেদের বিরুদ্ধে ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে গ্যাস দেওয়ার তথ্য পেয়েছে সম্প্রতি পেট্রোবাংলা থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কেজিডিসিএলের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কেজিডিসিএল ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ায় পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির তিনটি কার্যালয়ের কোথাও কোনো পাঠাগার নেই। কিন্তু এরপরও এই পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছেন।

এসব কর্মকর্তা বলেন, পাঠাগার না থাকা সত্ত্বেও সহকারী ব্যবস্থাপক (গ্রন্থাগার) পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগ দেওয়ার কারণ দুর্নীতি।

কর্ণফুলী গ্যাসের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম), সহকারী প্রকৌশলী (টেলিকমিউনিকেশন) নামে কোনো পদ নেই। এরপরও নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্য এমডি এম এ মাজেদ এবং নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ফিরোজ খান এই পদে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করেছেন।

এই নিয়োগে দ্বিতীয় শ্রেণির দশম গ্রেডে প্রায় ৩৮ পদের ক্ষেত্রে কোটা অনুযায়ী (মুক্তিযোদ্ধা কোটা, মহিলা কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি কোটা) নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা তাঁরা মানছেন না। শুধু যাঁরা টাকা দিতে পেরেছেন, তাঁদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়।

কোটায় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ১১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যেসব প্রার্থীর নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করেছেন, তাঁদের অনেকের কর্ণফুলী গ্যাসের চাকরি বিধিমালা/সার্ভিস রুলস/নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বলে জানা গেছে।

কেজিডিসিএলের তিনজন কর্মকর্তা জানান, ১১৮ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেছেন, তাঁদের খাতা, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকারী নিয়োগ কমিটির প্রত্যেক সদস্যের দেওয়া প্রার্থীদের নম্বর অনুসন্ধান করলে দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেজিডিসিএলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণও আছে, ঘুষের টাকা তাঁরা একা খান না, মন্ত্রণালয়ও খায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ আবারও দুর্নীতির শীর্ষ স্থানে চলে যাবে।’

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ফিরোজ খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

একইভাবে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ।

তবে কেজিডিসিএলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এম এ মাজেদ ও ফিরোজ খানের দুর্নীতির বিষয়ে পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ফিরোজ খান একটি নিয়োগে অনিয়ম এবং এম এ মাজেদের অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তবে সম্প্রতি ১১৮ জনের নিয়োগের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে প্রশ্ন করা আলতাফ হোসেন কোনো মন্তব্য করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত