Ajker Patrika

‘নদীত ঘরবাড়ি ভাঙিয়ে গেল’

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৫: ০৮
‘নদীত ঘরবাড়ি ভাঙিয়ে গেল’

‘নদীত ঘরবাড়ি ভাঙিয়ে গেল, হামরা এখন কোটে গিয়ে দাঁড়াব। হামাদের তো নতুন করে দাঁড়াবার আর শক্তি নাই।’ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনপাড়ে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আছমা বেগম। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে তাঁর একমাত্র ঘরটি বিলীন হওয়ায় এ নারী এখন নিঃস্ব। একই অবস্থা গ্রামের কৃষক সাহেদ আলীসহ আরও অনেকের। বন্যার পানির ঢেউয়ের গর্জনে মিলিয়ে যাচ্ছে সাহেদ আলীর কান্নার শব্দ। ভিটেমাটি হারিয়ে ভাঙনের ঠিক পাশেই কেবল আর্তনাদ করছেন তিনি। দফায় দফায় ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অসহায় এ গ্রামের মানুষ।

জানা গেছে, ফুলছড়িতে তিন ধরে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ার সঙ্গে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা সবই বিলীন হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। কিছুই করার নেই এখানকার বাসিন্দাদের। বাড়ছে শুধু ভাঙনকবলিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস। তিন দিনের ব্যবধানে মধ্য উড়িয়া গ্রামের শতাধিক মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামটির প্রায় ৩০০ পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত দেড় বছরে মধ্য উড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক অংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।

এদিকে উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উপজেলার এরেন্ডবাড়ি, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া, গজারিয়া, কঞ্চিপাড়া ও উদাখালী ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ওই গ্রামের ভাঙনকবলিত আসমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত থিকি ঘুম নাই, একটা করি বাতাস ছাড়ে, আর অনেক খানি করি জায়গা ভাঙি যায়। তখন ঘরসহ কাঁপে।’ কৃষক আজিজার রহমান জানান, ‘আর যদি এক সপ্তাহ ভাঙে, তাহলে এ গ্রামের মানুষের থাকার মতো কোনো জায়গা থাকবে না। অন্য কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে।’

উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আমি ইউএনওকে অবগত করছি, পিআইকে অবগত করছি, আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসব কর্মকর্তা আসছেন, তাঁদেরও অবগত করছি। তিন দিনের ব্যবধানে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সবসময়ই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।’

ফুলছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘তাঁদের সাহায্যের জন্য শিগগির একটা তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব। সেখান থেকে সাহায্য এলে দ্রুত আবার সেটা তাঁদের মাঝে বিতরণ করে দেব।’

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে রিপোর্টও পাঠিয়েছি। ফান্ড পাওয়াসাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব এখানে ভাঙন ঠেকানোর পদক্ষেপ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত