Ajker Patrika

আমার একুশ-স্মৃতি, বোধ ও অঙ্গীকার

সেলিম জাহান
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৫
আমার একুশ-স্মৃতি, বোধ ও অঙ্গীকার

অমর একুশে আমার কাছে বহুমাত্রিক। একটি ছাঁচে তাকে পরিস্ফুটিত করা যাবে না আমার কাছে। একুশের তিনটি মাত্রিকতা আমার অন্তরে বড় বেশি বাঙ্‌ময়–একটি স্মৃতির, একটি বোধের এবং একটি অঙ্গীকারের। একুশে ফেব্রুয়ারির একটি স্মৃতি আমার হৃদয়ে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি একুশেতেই সেই স্মৃতি আমার কাছে ফিরে আসে, আমি উদ্বেলিত হই। অমর একুশ আমার চেতনায় একটি বোধেরও জন্ম দিয়েছে, যেটা থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই, শক্তি অর্জন করি। একুশের আমার মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি একটি সুপ্রথিত অঙ্গীকারেরও জন্ম হয়েছে—আমার চিন্তায়, কর্মে সে অঙ্গীকারের প্রতিফলন সতত।

একুশের যে শৈশব স্মৃতি আমার মনে গেঁথে আছে, তা হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি। বরিশালের সেই শীতের সকাল। এমন পাঁচটি শীতের সকালে বিছানা ছাড়তে বড় অনীহা। শুধু এবং একমাত্র ওই একুশের সকাল ভিন্ন। তার আগের রাতে উত্তেজনায় ঘুমাতে পারি না। উৎকর্ণ হয়ে থাকতাম কখন প্রভাত হবে আর কখন বন্ধুরা এসে ডাকবে।

তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হতো। বন্ধুরা এসে ডাক দিত, আর আমি বেরোতাম ঘরের বাইরে। নগ্নপদ, বন্ধুদের মুখে মৃদু হাসি, হাতে ফুলের গুচ্ছ। চারদিকে মৃদু কুয়াশা, ভোরের আলো ফুটছে—বড় পবিত্র চারপাশ। তারপর সবাই মিলে নগ্নপদে যাত্রা শুরু শহীদ মিনারের দিকে। আমাদের কচিকণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হতো ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ সেই কৈশোরের একুশে ফেব্রুয়ারির বহু কথাই মনে নেই, কিন্তু প্রভাতফেরি স্মৃতি আজও ভুলিনি।

কেউ বলেনি, কেউ নির্দেশ দেয়নি, কেউ সাজায়নি, কিন্তু সেই প্রথম থেকেই একুশ উদ্‌যাপনের সবচেয়ে পবিত্রতম দিক ছিল প্রভাতফেরি–একুশে ফেব্রুয়ারি ভোরের আলো ফুটলেই স্বতঃস্ফূর্ত নগ্ন পদযাত্রা মানুষের শহীদ মিনারের উদ্দেশে। কেউ একা একা, কেউ পরিবার নিয়ে, কখনো-বা যূথবদ্ধভাবে। ভোরের আলো ফুটছে, মানুষের শান্ত মিছিল চলছে ধীর পায়ে শহীদ মিনারের প্রতি, পুরুষদের পরিধানে পায়জামা-পাঞ্জাবি, নারীদের সাদা শাড়ি, কালো পাড়। হাতে ফুলের মালা, পুষ্পস্তবক। শিশুরাও আছে মা-বাবার হাত ধরে, তাদের কচি হাতেও ফুল।

সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’? সে অমর গান ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে-বাতাসে। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে আবেগে, সে গানের অনুরণন আমাদের প্রতি রোমকূপে, সে এক অন্য অনুভূতি।

বড় মায়ায়, অনেক শ্রদ্ধায় আমরা হাতের ফুল নামিয়ে রাখছি মিনারের বেদিতে। না, ধাক্কাধাক্কি নেই, আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা নেই, ছবি তোলার উদ্দামতায় একুশকে অবমাননা করার কোনো প্রচেষ্টা নেই। শহীদ মিনার থেকে আজিমপুর গোরস্থান শহীদদের সমাধিস্থলে। সেখানেও সারিবদ্ধ মানুষ ধীর নগ্ন পদযাত্রায়। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ছাপ প্রত্যেক মানুষের মুখে একটি পবিত্র কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়ায়।

আজিমপুর থেকে গন্তব্যস্থল বাংলা একাডেমি। সেখানে বসেছে আলোচনা, গান আর কবিতাপাঠের আসর বটবৃক্ষের তলায়। সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছে এখানে-ওখানে। অনুষ্ঠান চলছে কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ম না মেনেই। মানুষ আসছে, মানুষ যাচ্ছে, উপভোগ করছে গান, কবিতা, কথা বলা।

আমাদের কৈশোরে-যৌবনে এটাই তো দেখেছি একুশে ফেব্রুয়ারিতে। বাহুল্য নেই, বাণিজ্যিকতা নেই, রাজনীতি নেই; আছে শুধু ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর মমতা, বাংলা ভাষার প্রতি অপার মায়া আর নিজের ভাষার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরিতে যাওয়া আমাদের কাছে ছিল প্রার্থনার মতো। বড় পবিত্র সে নগ্ন পদযাত্রা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি সে প্রভাতফেরিতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর ছাত্রজীবনে দেখেছি সে প্রভাতফেরিতে। একুশ শুরুই হতো প্রভাতফেরি দিয়ে। সেই প্রভাতফেরির আমেজ পেতে চাইলে বর্তমান প্রজন্ম শহীদ জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি দেখতে পারেন।

আমি বহুকাল প্রভাতফেরিতে যাই না। আসলে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে একুশ শুরু হলে তার আর কোনো প্রভাতফেরি থাকে না। আমরা ভুলে যাই, মধ্যরাতে দিনের শুরু পাশ্চাত্য কায়দায়, প্রাচ্যে দিনের শুরু সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। বাঙালির দিনের শুরু উষালগ্নে।

বোধের আঙ্গিকে যদি দেখি, একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য আমার কাছে তিনটি—একটি স্মৃতির, একটি অবদানের এবং অন্যটি শক্তির।

প্রথমত, যেমনটা বলেছি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমার জন্য একটি স্মৃতির জায়গা। ভাষা আন্দোলন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা যখন ঘটে, তখন আমি এক বছরের শিশু। সুতরাং বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আমার কোনো প্রত্যক্ষ স্মৃতি নেই। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারির একটি স্মৃতি আমি আমার জন্য আমার মনে তৈরি করেছি।

সে স্মৃতি তৈরি হয়েছে ইতিহাস আর স্মৃতিচারণা পড়ে, ওই সময়কার নানা ছবি দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে। সেই সঙ্গে আমার নিজের মায়াময় স্মৃতি আছে নানান বছরে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে খুব ভোরের নগ্নপদে প্রভাতফেরি, সবাই মিলে সেই কালজয়ী সংগীত, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ গাইবার, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক নামিয়ে রাখার। সেই গান এখনো আমার ধমনিতে এক অনুরণন তোলে, আমি শিহরিত হই। আমি দেখিনি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি, কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতি আমার আছে।

দ্বিতীয়ত, একুশে ফেব্রুয়ারির একটি অবদানের দিক আমাকে সদাই আন্দোলিত করে। একুশ শুধু আমাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার আন্দোলন ছিল না, এটা ছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রাম ছিল আমাদের সব আন্দোলনের, সব লড়াইয়ের, সব দাবির অনুপ্রেরণা-উৎস।

একুশের হাত ধরেই হয়েছে চুয়ান্নর সংগ্রাম, বাষট্টির আন্দোলন, তার অনুপ্রেরণায় জন্মলাভ করেছে ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরে আমাদের চূড়ান্ত স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম। বায়ান্নর একুশে যে পথযাত্রার শুরু, তার সমাপ্তি ঘটেছে ১৯৭১-এ। এই পথযাত্রার প্রতিটি ফলকে আমরা একুশ থেকে শিক্ষা নিয়েছি, একুশ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমাদের সব সংকটকালে বারবার ফিরে গিয়েছি একুশের কাছে, একুশ আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে সামনে।

তৃতীয়ত, একুশ আমাকে এক অনন্য শক্তি দেয়। যখনই ভাবি যে মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একদল মানুষ তাঁদের জীবন দিয়েছেন, তখন এক-ধরনের শক্তি আমি অনুভব করি। পৃথিবীতে নানান দেশে মানুষ স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ বিসর্জন করেছে, কিন্তু শুধু ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে বাংলাদেশ ভিন্ন এমন উদাহরণ আর শুধু ১৯৬১ সালে আসামের শিলচরে ঘটেছে। এ সত্যটি আমাকে উদ্বুদ্ধ করে।

monumentআমি ভাবি আগামী দিনগুলোতে যেকোনো সংকটে, যেকোনো বিপর্যয়ে, যেকোনো সংগ্রামে একুশ আমাদের শক্তি জোগাবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামে, তারা শক্তি খুঁজে পাবে একুশের কাছে। আমরা বারবার ফিরে যাব একুশের কাছে।

উপর্যুক্ত দুটো কারণে ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি আমি অঙ্গীকারবদ্ধ হই। কৈশোর থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম যে প্রতিটি ভাষার একটা নিজস্ব প্রাণ, সত্তা ও শক্তি আছে। বাংলা ভাষাও তার ব্যত্যয় নয়। বাংলা শুধু আবেগের ভাষা নয়, বেগের ভাষাও বটে। শৈশব ও কৈশোরে বাংলা বই ও পত্রপত্রিকা পড়ে বাংলা ভাষার প্রাণ, সত্তা ও শক্তির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। পড়তাম প্রচুর এবং পড়ার সে স্বাধীনতার ক্ষেত্রটি পারিবারিক পরিবেশই তৈরি করে দিয়েছিল।

এই সবকিছুই আমার জন্য বাংলা ভাষার একটি শক্ত ভিত্তিভূমি তৈরি করার প্রয়াসে সাহায্য করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বাংলা পঠন ও ব্যবহারের দিগন্ত প্রসারিত হয়েছিল। একদিকে এপার বাংলা-ওপার বাংলার বিভিন্ন লেখকের বই-গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ-গোগ্রাসে গিলেছি। ‘দেশ’ পত্রিকা পড়তে শুরু করি সে সময়ে। নিউমার্কেটে বইয়ের দোকানগুলো– মল্লিক ব্রাদার্স, ওয়ার্সী বুক সেন্টার, নলেজ হোম, মহিউদ্দীন অ্যান্ড সন্স; স্টেডিয়ামের ম্যারিয়টা, বাংলা বাজারের বইয়ের দোকানগুলোতে আমার ছিল নিত্য আনাগোনা। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিতর্কের শুরু তো আমাদের দিয়েই। বিজয়ী হয়েছি আন্তহল ও আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। শাণিত করেছি বাংলায় বলার অভ্যাস।

আশির দশকে তিনটি জিনিস আমার বাংলা চর্চাকে বেগবান করেছে। প্রথমত, রেডিও ও টেলিভিশনে নিজস্ব অনুষ্ঠান ও উপস্থাপনা বাংলায় সাবলীল বলাকে সামনে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতা বহু শক্ত ও প্রায়োগিক শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ উদ্ভাবন করতে সাহায্য করেছে। তৃতীয়ত, পত্রপত্রিকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখার ফলে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে সাবলীলতা এসেছে।

মোদ্দাকথা, বাংলা ভাষার প্রতি অঙ্গীকার, চর্চা ও মমতাই বাংলায় বলা ও লেখার ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেছে। একটি সচেতন প্রয়াস নিয়ে আমি বাংলা ব্যবহারে ব্রতী হয়েছি এবং অবিরত সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় এবং কর্মক্ষেত্রে ও দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ আমার কম। সে জন্যই নির্ভুল বাংলায় বক্তব্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমি আরও যত্নবান হই সতত। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন নতুন বাংলা প্রতিশব্দ বের করতে এবং সেটাকে জনপ্রিয় করতে।

সব সময় মনে রাখি যে বাংলা ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ যখনই যেখানে শুনি, শিহরিত হই। মাতৃভাষার জন্য শহীদ হওয়ার এ রকম দৃষ্টান্ত আর বেশি নেই। ‘আমি কি সে কথা ভুলিতে পারি’? সেই চেতনাই তো আমাকে প্রতি ক্ষণে, প্রতি পলে উদ্বুদ্ধ করে আমার হৃদয়ের ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে, কারণ চূড়ান্ত বিচারে সেটাই আমার প্রতিজ্ঞা, আমার ভালোবাসা, আমার গর্ব।

একুশ আমাদের মুক্তি দিয়েছিল–মুক্তি দিয়েছিল চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রভাষার শৃঙ্খল থেকে। কিন্তু সেই মুক্তিদাত্রী একুশকে আজ আমরা বন্দী করেছি বাণিজ্যিকতায়, লৌকিকতায়, স্থূলতায়, আনুষ্ঠানিকতায়, আত্মপ্রচারে। আমরা নষ্ট করেছি তার স্বতঃস্ফূর্ততা, তার গাম্ভীর্য আর তার পবিত্রতা। এবারের একুশের সকালে আমার একটিই আকুল আবেদন, ‘একুশকে মুক্তি দিন সব আরোপিত কৃত্রিম শৃঙ্খল থেকে’। একুশ আমার ঐতিহ্য, আমার অহংকার, আমার প্রেরণা এবং একুশ থাকুক আমাদের নিরন্তর শক্তির উৎস হয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত