Ajker Patrika

পরিবর্তনশীল জীবনে প্যারেন্টিং

রুমা মোদক
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ১৪
পরিবর্তনশীল জীবনে প্যারেন্টিং

বাংলাদেশে একটা প্রজন্ম পাবেন, ঘরে ঘরে ছেলেসন্তানের নাম আরিয়ান। শাহরুখ খানের ছেলের নামে নাম। শাহরুখ তখন খ্যাতির তুঙ্গে। বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ধারণ করা মানুষের একটু স্মার্ট বিনোদন মানেই হিন্দি সিনেমা। নিষিদ্ধতার বেড়া ডিঙিয়ে আকাশ সংস্কৃতি তখন পুরোদস্তুর ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে। চ্যানেল ঘোরালেই হিন্দি বিনোদন, সিরিয়াল, সিনেমা। নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধ। শাহরুখ খান বড় পর্দার সম্রাট। তাঁর সবই অনুকরণীয়। সাজপোশাক, হাসি, কথা বলার ম্যানারিজম। শেষমেশ তাঁর সন্তানের নামও।

কিছুদিন আগে তাঁর ছেলে আরিয়ানের মাদক-কাণ্ডের পর একঝটকায় ঘুরে গেল মানুষ। এত দিনের অনুকরণীয় ব্যক্তিটির ওপরই গিয়ে পড়ল সব দায়। ক্যারিয়ারের ব্যস্ততায় শাহরুখ সন্তানের দিকে দৃষ্টি দেননি, সন্তানকে সময় দেননি, যার ফল এই বখে যাওয়া আরিয়ান।

বিষয়টি আমি প্রথমে গভীর থেকে উপলব্ধি করেছিলাম রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে শান্তিনিকেতনে গিয়ে। সেই প্রথম বাচ্চাদের রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য যাওয়া। আমার সঙ্গে নাট্যকার মাহফুজা হিলালী। তিনিও বাড়িতে ছোট্ট বাচ্চা রেখে গেছেন। ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া সেশনগুলো কঠোর বিধিনিয়মে সন্ধ্যা ছোঁয়। প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব, রবীন্দ্র গবেষকদের সান্নিধ্য, রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক উন্মোচনসহ বুফেতে রাঢ় বাংলার নুন-মিষ্টি, চেনা-অচেনা খাবার। মুরগির স্টু, আলু-পোস্ত দেখে আমাদের বাঙাল রুচির ঝালঝুলহীন জীবনে আমাদের মন বিষণ্ন হয়ে থাকে বাড়িতে রেখে যাওয়া বাচ্চাদের জন্য। কর্মশালার সমন্বয়কারী মধুছন্দাদি বিষয়টি হয়তো খেয়াল করে একদিন খাবার টেবিলে ধরলেন আমাদের। আমাদের মন খারাপের কারণ জেনে স্নেহের হাত রাখলেন মাথায়। তাঁর অনেক কথার মাঝে একটা কথা মনে গেঁথে আছে, ‘সন্তানকে রেখে আসার জন্য কষ্ট পাও ঠিক আছে, কিন্তু মোটেই অপরাধবোধে ভোগা যাবে না। সময়ের চাকা পেছনে যাবে না। তোমাদের মেয়েরা তোমাদের চেয়েও বেশি ব্যস্ত হবে।’

এভাবে ভাবা যায়, তা আমি আগে কেন ভাবিনি? এর জন্যই বরং অপরাধবোধ জন্ম নিল। আসলেই তো মা কিংবা কারোরই তো ঘরে বসে থাকার সময় এটি নয়। সব উন্নত সভ্য জাতির নারী, পুরুষনির্বিশেষে বাইরে কাজ করছে। কম কিংবা বেশি।

সময়ের এই পরিবর্তনকে মেনে না নিয়ে কোনো উপায় নেই। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হয় সন্তানের মা-বাবা উভয়কেই। সভ্যতা যত সামনের দিকে যাবে, জীবনাচরণ পরিবর্তিত হবে। কখনোই একে পেছনের দিকে নেওয়া সম্ভব নয়। কোনো কারণে ছেলেমেয়ে বিপথে গেলে মা-বাবার ক্যারিয়ারকে দোষারোপ করা একটি সর্বৈব বাতিলযোগ্য আচরণ।

সন্তানের জন্য পিতা-মাতা তাঁদের ক্যারিয়ার যেমন বিসর্জন দেবেন না, তেমনি সন্তানকে অবহেলাও করবেন না। নিশ্চয়ই তাদের সৎশিক্ষা আর সদাচরণ শিক্ষা দেবেন। সবচেয়ে বড় কথা, একটি মানবসন্তানের বেড়ে ওঠায় পিতা-মাতার নিজস্ব জীবনাচরণ, পারিবারিক শিক্ষা আর সামাজিক পরিমণ্ডলও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সদাচার পিতা-মাতার সন্তানকে খুব কমই অসদাচরণে যুক্ত হতে দেখা যায়। উল্টোটা হলেও তার দায় নিশ্চয় পিতা-মাতার ওপর বর্তায় না।

ঘর থেকে বের হলে যে সমাজ নষ্ট হওয়ার হাজারটি ফাঁদ পেতে রাখে, তাতে আমাদের সন্তানেরা কোনো চোরাগলি দিয়ে পথ হারিয়ে ফেললেই তার সব দায়দায়িত্ব মা-বাবার ওপর পড়ে না। আজকের সন্তান আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। জাতি তথা সমাজ তথা সিস্টেমকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে। দুর্নীতি, অপরাজনীতি, সুশাসনহীন সিস্টেমে একটি সন্তানকে সুসন্তান করে গড়ে তোলা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এর জন্য প্রতিটি মা-বাবা কি সব কাজ অবহেলা করে সন্তানের পেছনে পড়ে থাকবেন? সন্তানের পেছনে পড়ে থাকলে বাইরের নষ্ট সমাজের হাতছানি থেকে সন্তানকে আগলে রাখতে পারবেন—এই গ্যারান্টিই-বা কে দিতে পারে?

পৃথিবীর সব সন্তান সুসন্তান হোক। আর পিতা-মাতারা জানুক সন্তানকে সুশিক্ষা দেওয়া যেমন জরুরি, তার ভরণপোষণও কম জরুরি নয়। আমরা বরং একটা শিশুবান্ধব, সুশিক্ষার সমাজব্যবস্থার প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টা করতে পারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...