Ajker Patrika

রমজান মক্কা-মদিনা ভ্রমণের সেরা সময়

ইজাজুল হক
রমজান মক্কা-মদিনা ভ্রমণের সেরা সময়

পবিত্র রমজান ফজিলতবহুল মাস। এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক বাড়ানোর মাস। এ মাসে প্রতিটি আমলের জন্য অতিরিক্ত সওয়াব লেখা হয়। অন্যদিকে মক্কা-মদিনা পবিত্রতম নগরী। সেখানে গিয়ে ইবাদত করতে পারা মুমিনের জীবনের বড় পাওয়া। রমজান কেন মক্কা-মদিনা ভ্রমণের সেরা সময়—এখানে কোরআন-হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো। 

রমজানে ইবাদতের অসামান্য ফজিলত
রমজানে ইবাদতের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এ মাসে রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম: ১০৭৯) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রমজানে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। (শুআবুল ইমান: ৩/৩০৫-৩০৬)

তাই মুমিনের কর্তব্য হলো, সর্বোত্তম উপায়ে পবিত্র রমজান মাসকে কাজে লাগানো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির কোনো মাস আসেনি। কেননা মুমিনেরা এ মাসে ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকেরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি খুঁজে-ফেরে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৬৮) 

পবিত্র মসজিদে নববি, মদিনা, সৌদি আরবপবিত্র দুই মসজিদের নামাজ
পবিত্র দুই মসজিদে নামাজ আদায়ের ফজিলত অনেক। সবচেয়ে বেশি সওয়াব মসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ে। এরপর মসজিদে নববির, এরপর বায়তুল মোকাদ্দাসের। হজরত আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘মসজিদুল হারামে এক ওয়াক্ত নামাজ এক লাখ  ওয়াক্ত নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার ওয়াক্ত নামাজের সমান এবং বায়তুল মাকদাসে এক ওয়াক্ত নামাজ ৫০০ ওয়াক্ত নামাজের সমান।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ: ৪ / ১১)

অন্য হাদিসে ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি: ১১৯০; মুসলিম: ১৩৯৪) অন্যত্র তিনি বলেন, ভ্রমণের সবচেয়ে উত্তম গন্তব্য হলো আমার এ মসজিদ (মসজিদে নববি) ও বায়তুল আতিক (পবিত্র কাবাঘর)। (মুসনাদে আহমাদ: ৩ / ৩৫০) 

রমজানের ওমরাহতে হজের সওয়াব
ওমরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ওমরাহ করার ফজিলত অনেক। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনে চারবার ওমরাহ পালন করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ থেকে অন্য ওমরাহর মধ্যবর্তী সময়ে যে গুনাহ হবে, তা তার জন্য কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ। জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান।’ (বুখারি: ১৭৭৩, ১৬৫০)

বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ করার ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সঙ্গে হজ করার মতো।’ (বুখারি: ১৮৬৩, মুসলিম: ২৫৬ ও ৩০৩৯) অন্য হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের?’ ওই নারী বললেন, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের বাবা ও ছেলে (অর্থাৎ নারীর স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যা দিয়ে আমরা পানি বহন করে থাকি।’ নবী (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরাহ করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি: ১৭৮২) 

রওজা পাক জিয়ারতের ফজিলত
মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থিত মহানবী (সা.)-এর পবিত্র রওজা শরিফ জিয়ারত করার ফজিলতের কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার রওজা মোবারক জিয়ারত করল, সে যেন আমাকে আমার জীবদ্দশায় দর্শন করল।’ (বায়হাকি) অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (আসান ফিকহ: ২৫০) 

রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায়
মসজিদে নববি ভ্রমণকারীর জন্য মহানবী (সা.)-এর রওজার পাশের বিশেষ স্থান রিয়াজুল জান্নাত তথা জান্নাতের টুকরো ভূখণ্ডে দুই রাকাত নামাজ পড়ার ফজিলতও অনেক। হাদিসে এসেছে, ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনে আকওয়ার সঙ্গে আসতাম এবং মুসহাফের কাছের পিলারে নামাজ পড়তাম। অর্থাৎ রিয়াজুল জান্নাতে। আমি বললাম, ‘হে আবু মুসলিম, আপনাকে দেখি এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে বেশি আগ্রহী?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি নবী (সা.)-কে এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে আগ্রহী দেখেছি।’ (বুখারি: ৫০২, মুসলিম: ৫০৯) 

মসজিদে কুবার মর্যাদা
মদিনায় অবস্থিত ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করাও ফজিলতের কাজ। মহানবী (সা.) প্রতি শনিবার হেঁটে কিংবা বাহনে চড়ে মসজিদে কুবায় এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি: ১১৯১, মুসলিম: ১৩৯৯)

এ ছাড়া রমজান মাসে পবিত্র দুই মসজিদে ইতিকাফ করতে পারা এবং তারাবির নামাজ আদায় করতে পারাও নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার। এসব কারণে মক্কা-মদিনায় ভ্রমণ করা ইসলামে বড় সওয়াবের কাজ। আর সেই ভ্রমণ যদি পবিত্র রমজানে করা যায়, তবে তা মুমিনের জীবনে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া অন্য কিছু নয়। সুতরাং সামর্থ্যবানদের রমজান মাসে দুই পবিত্র নগরীতে ভ্রমণ করে আসা উচিত। 

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত