Ajker Patrika

দিনমজুর থেকে স্বাবলম্বী

চৌগাছা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৫
Thumbnail image

দারিদ্র্যের কশাঘাতে লেখাপড়া মাধ্যমিকেই থেমে যায় চৌগাছার আজিজুর রহমানের। বেকার ঘুরে বেড়ানো কিশোর আজিজুর পেটের দায়ে দিনমজুরের কাজ করতে থাকেন।

একপর্যায়ে বাড়ির পাশের আখের রস বিক্রেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের পরামর্শে তিনিও আখ চাষ শুরু করেন। এখন তিনি সেই আখ চাষেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।

আজিজুর চৌগাছা পৌরসভার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাড়া (কুঠিপাড়া) গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে এখন সুখে দিন কাটান। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন পাকা বাড়ি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চান আজিজুর।

গত শনিবার আজিজুরের আখখেতে গিয়ে দেখা যায়, তিনিসহ আরও কয়েকজন আখ কেটে পরিষ্কার করছেন। তাঁদের একজন স্থানীয় সবজি চাষি শামছুল আলম এবং দুই সহোদর যশোর সদর উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও সোহাগ হোসেন। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে দুবার আখ কিনে নিয়ে গিয়ে রস বিক্রি করেন। আর পাতা সংগ্রহ করছিলেন আজিজুরের খেত থেকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে আখের পাতা নিয়ে গরু-ছাগল পালন করেন সবুরা খাতুন।

আজিজুর বলেন, ‘২০০২ সালের দিকে দিনমজুরি করে অনেক কষ্ট করেও সংসার চালাতে পারছিলাম না। তখন চৌগাছা বাজারে আখের রস বিক্রি করতেন বাড়ির পাশের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান। তাঁর কাছে দুঃখের কথা বললে তিনি আখের রস বিক্রির পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শে ধারদেনা করে হাতে চালানো একটি আখ চাপা মেশিন নিয়ে রস বিক্রি শুরু করি। তিনি পরামর্শ দেন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের পতিত জমি ইজারা নিয়ে নিজেই আখ চাষ করতে। তখন ওই জমি ইজারা নিয়ে আখ চাষ করতে শুরু করি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আখের খেতে পরিচর্যা করি আর দুপুরের পর থেকে শহরে আখের রস বিক্রি করি। এভাবেই চলতে থাকে। আজিজুর বলেন আগে হাতে চাপা মেশিনে চেপে রস বিক্রি করতাম। এখন মোটরচালিত মেশিনে চেপে রস বিক্রি করি।’

অজিজুর বলেন, ‘শুরুতে এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলাম। এখন সোয়া পাঁচ বিঘা জমিতে আখ চাষ করি। চাষের আখ নিজে রস করে বিক্রি এবং আখও বিক্রি করি। যশোর সদর উপজেলার ছিলিমপুরের সাইফুল ও সোহাগকে দেখিয়ে তিনি বলেন এরা সপ্তাহে দুদিন খেত থেকে আখ কিনে নিয়ে যান। নিজেদের এলাকায় রস বিক্রি করেন।’

আজিজুর বলেন, ‘রস বিক্রি করে কয়েক শতক জমি কিনে সেই জমিতে প্রায় পনের লাখ টাকা খরচ করে ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেছি। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে এবার স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণি এবং একমাত্র ছেলে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে বছরে ৫০০ মণের বেশি আখ উৎপাদন হয়। শীতের শুরুর দিকে ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি শুরু হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘা জমি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা বাৎসরিক ইজারা নিয়ে আখ চাষ করি। আখের চারা, চাষ, সার, কীটনাশক স্প্রে ও জমি ইজারা, আখ কাটা মজুরিসহ এক বিঘা জমিতে বছরে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আখ একবার রোপণ করলে দুই বছর উৎপাদন হয়। বছরে ৫০০ মণ আখ উৎপাদন হয় এবং গড়ে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারলে প্রথম বছরে এক বিঘা জমির আখে দুই লাখ টাকা লাভ হয়। পরের বছরের লাভ হয় আরও বেশি।’

তবে আজিজুরের দুঃখ, উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাঁর খোঁজ নেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ এমন লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত