সৈয়দ রুহুল আমীন

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।
সৈয়দ রুহুল আমীন

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন। দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন। দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন। দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন। দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫