Ajker Patrika

জ্বালানি সংকটে উপকূলবাসী

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৩৫
জ্বালানি সংকটে উপকূলবাসী

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় জ্বালানি সংকটে পড়েছে মানুষ। এ কারণে রান্নায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।

জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার গাছ মরে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে জ্বালানির উৎস। এ ছাড়া গো-খাদ্যের অভাবে গবাদিপশু পালনে দেখা দিয়েছে সংকট।

ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে আইলার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরো উপকূলীয় এলাকা। এরপর প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই সব এলাকা। বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ততা গ্রাস করায় গাছ মরে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এতে জ্বালানি সংকটে পড়েছে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ।

কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আসমা খাতুন জানান, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। এই পানির মধ্যে চুলা ধুমাচ্ছে। গাছ-পালা সব মরে গেছে। বাড়ির সবখানে পানি। সেই পানিতে দাঁড়িয়ে রান্না করতে হচ্ছে।’

একই গ্রামের গৃহবধূ লতিফা খাতুন জানান, ‘খোলপেটুয়া নদীর বন্যতলা বেড়িবাঁধ দুবছর ভাঙা থাকায় জোয়ার-ভাটা চলছে। গাছ-গাছালি নেই। দুবছর কাঠের খুব সমস্যা। টাকার অভাবে গ্যাসও কিনতে পারি না। পাতা-লতাও নেই। সকালে ভেজা চুলায় আগুন ধরালে বিকেল হয়ে যায় রান্না শেষ করতে।’

কর্মসংস্থান না থাকায় জ্বালানি কাঠ কিনতে পারেন না এলাকার লোকজন। এলপি গ্যাস কেনা দুরূহ ব্যাপার তাদের জন্য।

এ বিষয়ে হরিষখালী গ্রামের মাসুদ আহমেদ বলেন, কখনো জোয়ারের পানিতে চুলো ডুবে যায়। শুকনো কাঠপাতা থাকে না, ভিজে কাঠ দিয়ে রান্না করতে হয়। গ্যাস কেনার ক্ষমতা নেই।

সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, উপকূলীয় এলাকায় জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় তারা করতে পারলেও জ্বালানির অভাবে তারা রান্না করে খেতে পারছে না। তাদের জ্বালানি সরবরাহ করা দরকার। বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে লবণ পানিতে এলাকা তলিয়ে গেছে। সেই কারণে গাছ মারা গেছে। নতুন কোনো গাছ জন্মাচ্ছে। ফলে জ্বালানি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেকে হয়ত ত্রাণ দিচ্ছেন, কিন্তু জ্বালানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের যদি জ্বালানির ব্যবস্থা না করা হয়, তবে সংকট আরও মারাত্মক হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম জানান, লবণসহিষ্ণু বনায়নের মাধ্যমে আপাতত এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তা ছাড়া যেসব জায়গায় গবাদিপশু আছে, সেখানে বায়োগ্যাস থেকে কিন্তু জ্বালানির ভালো উৎস পাওো সম্ভব। কিন্তু ওই এলাকায় গবাদিপশুর খাবার কমে গেছে। লবণসহিষ্ণু ঘাস আর বাইন গাছ লাগানো গেলে গরুর খাবার থাকবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বাইন গাছ থেকে গোখাদ্য আহরিত হচ্ছে। তবে আসল কাজ হলো, কাজের ধরন পরিবর্তন করে বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত করা। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের পাশে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগাতে হবে। এসব না করলে উপকূলের মানুষকে আমরা রক্ষা করতে পারব না।

তবে স্থানীয়দের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। বন্যতলা বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ জাইকার অর্থায়নে শুরুর আশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের। তাদের দাবি, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বড় ধরনের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান বলেন, ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা জেলায় ১১টি পয়েন্টে ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগ করে তা বেঁধে দেয়। তবে বন্যতলা এলাকায় জাইকার অর্থায়নে ঠিকাদার নিযুক্ত থাকার কারণে আমরা সেখানে বাঁধতে পারিনি। ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়েছি। সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক ঠিকাদারকে বেড়িবাঁধ বাঁধার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সামগ্রী বহনও চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত কাজ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া সাতক্ষীরার অন্যান্য জায়গায় যেসব বেড়িবাঁধ ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিআইপি-ফেজ-২ সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করছে। সেটি হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ চলে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...